রওশন আপা বেশ ভালই মোটা...... মোটার সাথে কথাও বলেন রসিয়ে রসিয়ে। আমাদের স্কুলের ছয় তলা ভবন।লিফটের সংখ্যা মাত্র দুই তাও একটা সব সময় আচল পড়েই থাকে।স্কুল আওয়ারে ছাত্র-ছাত্রিদের জন্য একটা খুলা হয়, অন্যসময় অফ। শুধু টিচারদের জন্য একটা খোলা...... লিফটের গায়ে বড় করে আটশ পঞ্চাশ কেজি নয় জন লেখা থাকলেও প্রায় শুকনা পাতলা ছয় সাত জন উঠলেই লিফট বাবাজি পি পি করে সাইরেন দেওয়া শুরু করে।তখন সর্বশেষ যিনি উঠেন তিনি সসম্মানে নেমে জান।তবে রওশন আপা উঠলে অনেক সময় দুজনকেও নামতে হয় ...... লিফটের সাথে উনার কেমন জানি এক ধরনের শত্রুতা আছে বোধহয়। ক্লাস শেষ আমি দৌড়াতে দৌড়াতে লিফট ধরলাম, দেখি রওশন আপা হাত নাড়ছেন। লিফটে যদিও ছয় সাতজন ...... সবাই বলল ‘বন্ধ করেন’, ‘বন্ধ করেন’ তাও হাজার হোক আপার মত সিনিয়র টিচার তার মুখের উপর ত আর লিফটের দরজা বন্ধ করা যায় না। উনি হেলে দুলে আসতেই লিফট যথারীতি পি পি শুরু করে দিল।আপা যদিও সবার পরে আমিই নামলাম কিন্তু বেচারার সাইরেন থামল না। সবাই হাসি হাসি মুখে বলে উঠল ‘আপা সসম্মানে......’, মানে আপা যাতে সসম্মানে নেমে যান। আপাও কম যান না বল্লেন তোরা জোয়ান জোয়ান একটু হেটে নামতে পারিশ না। জবাবে সবাই হাসল......... কে জানি বলেই উঠল “আপা একটু হেটে নাম্লে ত আপনার একটু কমে!” আপা নামতে নামতে বলতে লাগলেন “দেখলি নতুন গুলা কেমন বেয়াদব আমারে বলে হেটে নামতে দেখলি”। আমি জবাবে শুধু হাসলাম...... দ্বিতীয়বার লিফট আসতে আসতে মনে হয় মিনিট দশেক লাগবে। আপা অবশ্য মুখ চালায় যেতে লাগলেন, “বুঝলি তোর দুলা ভাইয়ের জ্বালায় কিছু ভালমন্দ খেতেই পারি না বলে মোটা হয়ে যাচ্ছি......... এই বয়সে মোটা হলেই বা কি? নিজেরা ত অফিসে বসে বসে ভুরি ভোজ করে...... আর বাসায় এসে ডায়েট!”
কিরে তোর কি প্রেমের বিয়ে নাকি রে?--- ভার্সিটির ছেলে পেলে ত আজকাল প্রেম ট্রেম ছাড়া বুঝেই না! অমুকের বাসায় মেয়েটা প্রেম করে পালাল......... এত সুন্দর মেয়ে একটা বান্দরের প্রেমে মজল কেম্নে কি জানি!---- দ্বিতীয়বার লিফট আসতে আমি আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম আবার না সাইরেন বাজে তবে এবার কপাল ভাল তেম্ন কিছু ঘটল না। নিচে নেমে দেখি রওশন আপার হাসবেন্ট গাড়ি নিয়ে দাড়ায় আছে...... বেচারার এত বদনাম করল!আপা আমাকেও পরিচয় করায়ে দিলেন। বললেন চল তোকেও পৌঁছে দেই. .....আপার হাসবেন্ট কিছুক্ষন পরে কি জানি কাজে নেমে গেলেন। দামি গাড়িতে উঠলে কোন দূরত্ব আর দূরত্ব মনে হয় না। মাত্র পনের মিনিটেই পৌছে গেলাম...... আপা আমার বাস্র কাছে এসে বললেন ঐ দেখ গুলশান লেকে নৌকা চলতাছে চল নৌকায় চড়ি। আমি বললাম আপা আরেকদিন যাই...... কে শুনে কার কথা। আয় আয় করে ছুটলেন ...... নৌকার পাশে দেখলাম বেশ একটা জটলা মত হয়ে গেল! আপার মত মোটা মানুষ কেমনে নৌকায় উঠে দেখার জন্য। আপা উঠতেই নৌকাটা ভীষণ কাত হয়ে গেল আমি আর কি উঠব মাঝি বলল মাঝখানে বসেন খালাম্মা...... আপা নেমে গেলেন যদিও মাঝি অনেক ডাকাডাকি করল । আমি অবশ্য কিছুই বুঝলাম না। পরে গাড়িতে উঠে বেশ রাগত গলায় বলে উঠলেন দেখলি ঐ বুড়া বেটা আমারে খালাম্মা কইল। বুঝলাম মাঝি বেচারা কোথায় ধরা খাইছে।
আপারে যদি আপা কইত তাহলে আর শিকার হাতছাড়া হইত না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪২