ডাঃ লুবনা মরিয়ম, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ
প্রতিটি নারীই জন্মগত ভাবে স্তন ক্যান্সারের কিছুটা ঝুঁকি বহন করেন, কেননা নারীর দেহে বিদ্যমান দুটি হরমোন (ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন) স্তন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে বংশগত কারন, পারিবারিক ইতিহাস এবং জীবনাচরণগত বিভিন্ন কারনে অনেক নারীই এই ক্যান্সারের অধিক ঝুঁকি বহন করেন।
ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া মানেই যেমন আক্রান্ত হওয়া নয় তেমনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানেই অকাল মৃত্যু নয়, কেননা ঝুঁকিপূর্ণ নারীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত ঝুঁকি নিরুপন করতে পারেন এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে পেতে পারেন স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা।
তাই সবার আগে প্রয়োজন নিজের ঝুঁকি সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা। আসুন জেনে নিই স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সমূহ কি কি-
বয়সঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। যদিও যেকোনো বয়সের মহিলাদেরই এ রোগ হতে পারে তবে ৪৫ ঊর্ধ্ব মহিলাগণ এ রোগের অধিক ঝুঁকি বহন করেন।
পারিবারিক ইতিহাসঃ পরিবারের রক্ত সম্পর্কের আত্নিয় (কন্যা, বোন, মা, খালা, ফুপু, নানি, দাদি) কেও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে, বিশেষ করে একাধিক নিকট আত্নিয় আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে আপনিও ঝুঁকিতে আছেন।
অধিক ঋতুচক্র বা মাসিকঃ যেসব নারীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বয়সে (১২ বছরের পূর্বে) ঋতুচক্র বা মাসিক আরম্ভ হয় এবং/অথবা অধিক বয়সে (৫৫ বছরের পরে) ঋতুচক্র বা মাসিক বন্ধ হয় তারা এ রোগের কিছুটা অধিক ঝুঁকি বহন করেন।
গর্ভধারণ না করা কিংবা অধিক বয়সে গর্ভধারণঃ যেসকল মহিলা ৩০ বছরের পরে গর্ভধারণ করেন কিংবা জীবনে একবারও গর্ভধারণ করেননি তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কিছুটা বেশী থাকে।
জন্মনিয়ন্ত্রণঃ জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যেসকল মহিলা দীর্ঘদিন ধরে জন্মবিরতিকরন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তাদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কিছুটা বেশী। তবে জন্মবিরতিকরন বড়ি সেবন বন্ধ করার পর এ ঝুঁকি ধীরেধীরে কমে আসে।
হরমোন থেরাপিঃ বার্ধক্য জনিত কারনে স্থায়ী ভাবে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর যেসব মহিলা হরমোন থেরাপি (এইচ আর টি) নিয়ে থাকেন তারা এ রোগের ঝুঁকি বহন করেন।
অধিক ওজন, মেদবহুলতা এবং অলস জীবনযাপনঃ শরীরে মেদের আধিক্য এবং অধিক ওজন ৫০ ঊর্ধ্ব মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। সেই সাথে কায়িক পরিশ্রম না করা এবং অলস জীবনযাপন এ ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
বুকের দুধ পান না করানোঃ যেসকল মা শিশুকে বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকেন তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অধিক।
যেসকল নারীরা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহন করছেন তারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে বিপদ এড়িয়ে চলতে পারেন। তাই সচেতন হউন সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্রঃ American Cancer Society.
স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও লেখা পরতে ভিজিট করুনঃ http://emibd.com/health-tips