শেষ পর্যন্ত আমাদের জনগণের সরকার জনগণের অর্থ উদ্ধারের জন্য সমঝোতার হাত বাড়িয়েছেন দেশের ব্যাংক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হল-মার্ক এর দিকে। এ প্রক্রিয়ায় তাদের আরও ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। শুধু তাই নয় হল-মার্কের কারখানাগুলো চালু করার জন্য জেল থেকে বের করে আনা হবে কেলেঙ্কারির হোতাদের। সরকারের বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর মতে এভাবেই লুট করা অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হবে। অথচ গত ১৪ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গঠিত উপকমিটির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেছিলেন যে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অর্থ কোনোভাবেই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নামমাত্র জামানত রয়েছে এই বিপুল জালিয়াতির বিপরীতে। ফলে সরকারের উচিত হবে সোনালী ব্যাংকের পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন জোগান দেওয়া। কিন্তু সেই সুপারিশ না মেনে পাল্টা ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
হলমার্ক এর বর্তমান জামানত বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে নিশ্চিত করে বলছে যে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির অর্থ কোনোভাবেই আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই সেখানে অর্থমন্ত্রী কোন সূত্রের প্রেক্ষিতে এতোটা নিশ্চিত হলেন নতুন করে ঋণ দিলে হলমার্ক জনগণের অর্থ ফিরত দিতে সক্ষম হবে? অবশ্য লুট হওয়া টাকা বা নতুন করে প্রদান করা ঋণ হলমার্ক ফিরত না দিলেও আমাদের বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর চুলবিহীন মাথা তা নিয়ে বেশি ভাববেন তেমনটা মনে করছি না। কারণ জনগণের এই অর্থমন্ত্রীই একসময়ে বলেছিলেন হলমার্ক এর মাধ্যমে লুট হওয়া টাকার পরিমান খুবই অল্প। আমি এটাও মনে করছি না যে, এরই মধ্যে হলমার্ক কর্তৃক লুট হওয়া টাকাগুলো কোথায় গেছে এটা নিয়েও তিনি ভাবিত।
আমি ঠিক জানিনা হলমার্ক কিভাবে বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রীকে করায়ত্ত করল কিংবা কত টাকার বিনিময়ে অর্থমন্ত্রীর টেকো মাথাটা এ পরিকল্পনাতে সায় দিল। এটাও জানি না হলমার্ক এর লুট হওয়া টাকার কতো পরিমান জনগণের সরকারের আলাল-দুলালদের পকেটে গেছে এবং এর কতটুকুন আগামী নির্বাচনে ব্যয় হবে। এতোসব না জানলেও এতটুকুন নিশ্চিত হয়েছি যে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার নৈতিকতার সর্বশেষ টুকরোটুকুও বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দিয়েছে। সরকারের আর বড় গলায় দুর্নীতি বা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলার অধিকার নেই। সরকার এটা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। সরকারের একমাত্র যোগ্যতা বা কর্মসূচি হচ্ছে শিষ্টের দমন এবং দুষ্টের পালন। ঠিক সে কারণেই কেলেংকারীর হোতাদের শাস্তির বদলে তাদের-কে জেল থেকে বের করা আনা হচ্ছে, নতুন করে ঋণের ব্যবস্থা করছে। সরকার মূলত এর মাধ্যমে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দুষ্টচক্রের কাছে এই বার্তাটি পাঠাল যে, তারা যতোই লুটপাট করুক না কেন এতে ভয়ের কিছু নেই। দেশের সম্পট লুট করে পুরো জাতির সামনে দিগম্বর হলেও ভাবনার কিছু নেই। একটা সময়ে সরকার নিজেই তাদেরকে রক্ষা করবে, নতুন করে লুটপাটের ব্যবস্থা করে দিবে।
প্রকৃতঅর্থে এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতে যদি এই সরকারী দল কখনো বিরোধী দলে যায় তবে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার সে হারাল। ভবিষ্যতে তারেক-কোকোরা যদি সোনালী ব্যাংককে পুরো দেউলিয়া করে দেয় তখন এর বিরুদ্ধে বলার অধিকার আওয়ামী লীগের আর থাকল না। কারণ হলমার্ক-কে কেন্দ্র গত দেড় বছরে সরকার যা করেছে তা তারেক-কোকোদের আচরণের চেয়ে উন্নততর কোন কিছু নয়। আওয়ামী প্রমাণ করেছে তারেক-কোকোদের চেয়ে ভাল করার যোগ্যতা তাদের নেই এবং শাসকেরা সব আসলে একই গোয়ালের গরু।
তবুও চাপাবাজি থেমে থাকবে না। সরকার-কে প্রটেকশন দেবার মতো লোকের অভাব হবে না। আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটিতেও সরকারের পক্ষে হাল ধরার মতো লোকের কমতি হবে না। আর আমাদের দেশে হাল ধরাটাতো খুবই সোজা। কারণ এখানে প্রটেকশন দেয়া হয় নিজের খারাপ কাজের বিপরীতে অন্যের অপকর্মের তুলনার মাধ্যমে। খারাপ কাজের বিপরীতে ভাল কাজের তুলনা করার মতো সরল বা অপদার্থ আমরা নই।