সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পুরো নারায়ণগঞ্জতো বটেই নিজ বাড়ির কেন্দ্রে পর্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হবার পর চিহ্নিত গড ফাদার শামীম ওসমান এতোদিন অস্বাভাবিক রকম নীরব ছিলেন। শাহবাগ এর গণজাগরণ মঞ্চ এবং তৎপরবর্তীতে ব্লগার রাজীবের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে তিনি আবার সরব হন। ব্লগার রাজীব নিহত হবার পর তিনি যখন তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে চাষারার মোড়ে মিছিল করে ঐ চত্বরের নাম রাজীব চত্বর করলেন তখনই বুঝা যাচ্ছিল যে তিনি এই আন্দোলন এবং রাজীব হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শণের খেলায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন এর আওতাধীন যেকোন সড়ক নামকরণের প্রশাসনিক ক্ষমতা একমাত্র সিটি কর্পোরেশন এর। কিন্তু শামীম ওসমান এই নামকরণের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করলেন নির্বাচনে হারলেও পেশী শক্তি বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জের নিয়ন্ত্রণকর্তা তিনি নিজেই। এখানে যে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন নিহত ব্লগার রাজীব এর নামে চত্বরের নামকরণের বিরোধীতা আমি করছি না। বিরোধীতা করছি গণজাগরণ মঞ্চ এবং ব্লগার রাজীবের হত্যাকান্ড কেন্দ্র করে চিহ্নিত গডফাদার এর নিজের রাজনৈতিক ফায়দা লুটার প্রচেষ্টাকে।
রাজীব চত্বর নামকরণের সময়েই অনুমান করা হয়েছিল শামীম ওসমান এই গণজাগরণকে কেন্দ্র করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করবেন এবং সেটা করার জন্য বরাবরের মতোই তিনি কোন নীতি-নৈতিকতার ধার ধারবেন না। কয়েকদিন পরেই নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তার ছেলেকে অপহরণের পর খুন করা হল। নিষ্পাপ ছেলেটির চেহারার দিকে তাকালে কোন পেশাদার খুনীরও মায়া হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক খুনীদের কোন মায়া নেই। শত শত নিষ্পাত ত্বকীর দেহকে পদদলিত করেও নিজের ফায়দা লুটতে এসব রাজনৈতিক গডফাদার নামের ডাকাতদের কোন আপত্তি বা মনোবেদনা নেই। নিহতের বাবা এ খুনের জন্য সরাসরি দায়ী করেছেন চিহ্নিত গডফাদার শামীম ওসমান-কে। নারায়ণগঞ্জের ছোট্ট শিশুটিও জানে এই ডাকাত শামীম এবং তার পরিবারের তদারকি ব্যতীত কোন অপকর্মের ঘটনা এখানে ঘটতে পারে না। সব অপকর্মের সাথেই এই পরিবার হয় শুরু থেকে নচেৎ ঘটনার পরবর্তী সময়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িত থাকে। আমি এখানে নিশ্চিত যে কোন বাবাই তার সন্তানের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করেন না। এখানে নিহত ত্বকীর বাবাও তার ছেলের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছেন এমনটা বলার দৃষ্টতা দেখানো পাপ হবে। বরঞ্চ মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি এবং ত্বকীর বাবার বক্তব্যে এটা পরিস্কার যে গণজাগরণ মঞ্চ এবং এর সাথে জামাত শিবিরের বিরোধ-কে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ন্যায় গডফাদার শামীম ওসমান এবং তার পরিবার তাদের রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক বিরোধীদের দমনে নেমেছেন।
ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জের সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকারদের বিচারের দাবিতে গঠিত নারায়ণগঞ্জের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তাও তিনি। ত্বকীর বাবার বক্তব্য অনুযায়ী এসব প্রগতিশীল আন্দোলনের কারণে চিহ্নিত গডফাদার এর ব্যবসায়ীক ও রাজনৈতিক অসুবিধা থেকে প্রণোদিত হয়ে গডফাদার এবং তার পরিবার ত্বকী-কে হত্যা করেছে। শাহবাগ এর গণজাগরণ মঞ্চ আজ চল্লিশ বছর পর এ জাতির জন্মের বিরোধীতাকারী খুনী জামাত শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করার এক দুঃসাহসিক অভিযানে নেমেছে। কিন্তু তারা কি তাদেরই এক সহকর্মীর ছেলের খুনের বা তাঁর খুনীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানোর সাহস রাখেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৫