‘আমার দেশ’ এর মাহমুদুর রহমান-কে গ্রেফতারের জন্য গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প মাহমুদুর রহমান নামক কালসাপের মুখ হতে ছাড়া হয়েছে আর যে কারণে দেশে এতো হানাহানির ঘটনা ঘটেছে তাতে মাহমুদুর রহমানকে বহু পূর্বেই গ্রেফতার করা যেত। সরকার বা তার গুণধর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন তা করেননি তার ব্যাখ্যা তারাই দিতে পারবেন। এতোকিছুর পরও যখন ‘শাহবাগ’ এই গুণধর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি এতো আস্থা দেখান, তাকে স্মারকলিপি দেয়ার মতো যোগ্য মনে করেন তখন কিছুটা অবাকই হতে হয়। আরও অবাক হতে হয় যখন দেখি মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য স্মারকলিপি দেয়া হচ্ছে কিন্তু ‘শাহবাগ’ তথা আন্দোলনের এক অগ্র সেনানী রাজিবের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের বিষয়ে সে স্মারকলিপিতে কোন কথা নেই। এ আচরণে অবাক হয়েছি, সাথে কিছুটা লজ্জাও পেয়েছি।
আমার ইমিডিয়েট পূর্বের ব্লগটির সূত্র ধরে আবার বলতে হচ্ছে, রাজীব নিহত হওয়ার পর বা সে নাস্তিক ছিল এটা প্রচার পাবার পর থেকেই ‘শাহবাগ’ রক্ষণাত্বক এবং ধর্মের সাথে আপোষের পন্থায় চলে গেছে। উপাসনালয়গুলোতে শহীদদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন এবং রাজীবের হত্যার বিচার নিয়ে উচ্চবাচ্য না করা এমন ধারণাকে কিছুটা হলেও যৌক্তিক করে। এটা অস্বীকার করার বা এ কারণে লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই যে ব্লগে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয়। যারা এটা করেন তাদের বেশিরভাগই নাস্তিক। এটা হলফ করে বলা যায় যারা ব্লগে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন তাদের সকলেই যুদ্ধপরাধীদের বা ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে সব সময়ে সোচ্চার ছিল। সে কারণেই শাহবাগ এর আন্দোলনে যে সমস্ত ব্লগাররা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নাস্তিক। এটা নিয়ে হঠকারিতা, লজ্জাবোধ বা লুকানোর কিছু নেই। হঠকারিতা আর কৌশল এক বিষয় নয়।
এখানে স্বীকার করে নেই যে, ব্লগার রাজিব নিহত হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি ওনাকে চিনতাম না। ওনার কোন লেখা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে তিনি যদি নাস্তিক থেকে থাকেন বা আন্দোলনের সাথে জড়িতদের মধ্যে কেউ কেউ নাস্তিক থেকে থাকেন সেখানে লজ্জার বা লুকানোর কোন কিছু নেই। এটাকে লুকানো এক ধরণের হঠকারিতা। বরঞ্চ এই সাহসী মানুষগুলোর প্রতি আমাদের সন্মান থাকা উচিত। কারণ তারা নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে হাজার বছরের অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বলছেন। সত্য বলা কোন ধর্মবিদ্বেষ নয়। সত্য বলাটা কারো চরিত্র হনন বা মানহানী নয়। কেউ যদি বহুবিবাহ করে থাকেন, কেউ যদি বাল্যবিবাহ করে থাকেন, কেউ যদি তার পালিত পুত্রের স্ত্রী কে বিয়ে করে এবং এটা কে জায়েয করার জন্য ঐশী বাণী নাজিল করেন, কেউ যদি ধর্মের নামে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে থাকেন আর ঐ মানুষের নীতিকে কোন গোষ্ঠী যদি ধর্মের নামে রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন তখন ঐ ব্যক্তির নীতি বা চরিত্র নিয়ে আলোচনা করার অধিকার বা দায়িত্ব আমার অবশ্যই আছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজের অতি ক্ষুদ্র অংশই এই দায়িত্বটা পালন করছেন। বাকিরা ঐ প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেন।
মাহমুদুর রহমান-কে গ্রেফতারের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তবে রাজীবের খুনীদের গ্রেফতার বা তার হত্যার বিচার কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জামাত-কে নিষিদ্ধ করতে হবে। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া। কিন্তু দুটো বিষয়ের শেষোক্ত বিষয়গুলোতে শাহবাগ-কে অতিমাত্রায় উদাসীন মনে হয়। অবশ্য এটা স্রেফ আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি।
যাহোক, সবকিছুর পরেও শাহবাগ এর সাফল্য কামনা করি।