রাজধানীর পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় আজ রোববার সকালে দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিশ্বনাথ দাস নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে আজ সকাল সোয়া নয়টার দিকে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত আইনজীবীরা একটি মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে গেলে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইনজীবীদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে পথচারী বিশ্বনাথ দাস দৌড়ে সেখানকার একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বিশ্বনাথকে এক রিকশাচালক পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশ্বনাথকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তির বড় ভাই উত্তম কুমার দাস-কে উদ্ধৃত করে প্রথম আলো জানায়, ৫৩ নম্বর ঋষিকেশ দাস রোডের বাসা থেকে আজ সকালে কাজের উদ্দেশ্যে শাঁখারীবাজারে যাচ্ছিলেন বিশ্বনাথ। ছাত্রদলের কর্মী মনে করে দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়েছে। বিশ্বনাথ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলেও তিনি দাবি করেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেও বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্বনাথের ভাগ্য আজ আমাকেও বরণ করতে হত। আজ বিশ্বনাথের পালা ছিল, কাল আমার পালা আসবে, পালা আসবে আমাদের সমগোত্রীয় আরো অনেকেরই। অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও মনে হচ্ছে আজকে নেয়াহেত ভাগ্যগুণেই বিশ্বনাথ হওয়া থেকে বেঁচেছি। কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে তিন কিলোমিটারের মতো পথ হেঁটে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ আসার পর আরো অনেকের দেখাদেখি আমি নিজেও ছুটে পালালাম মহল্লার গলির পথে। জানার মতো পরিস্থিতি ছিলনা কেন ছুটছি। আমার মতো আরো অনেকেই যে যেখানে পারলেন আশ্রয় নিলেন। প্রাণ বাঁচাতে মহল্লার ভেতর দিয়ে, অন্য পথ ধরে গন্তব্যে পৌছলাম। একটু আগে বিশ্বনাথের নিউজটা পড়ার পর নিজেকে বিশ্বনাথের থেকে বিচ্ছিন্ন কেউ বলে মনে হয়নি। ভাগ্যক্রমে আমাকে লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা খুঁজে পায়নি। পেলে নিশ্চিতভাবেই প্রাণের ভয়ে পালানোর অপরাধে হয়তো আমার লাশটাও এতোক্ষণে মর্গে পড়ে থাকত।
বিশ্বনাথের মৃত্যুতে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কিছু আসবে যাবেনা। কারণ বিশ্বনাথরা ক্ষমতার কোন নিয়ামক নয়। ক্ষমতার নিয়ামক হচ্ছে তাঁরা যারা রাস্তায় লাঠিসোটা নিয়ে হরতাল, অবরোধ করতে পারবে অথবা হরতাল, অবরোধ প্রতিরোধ করতে পারবে। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রেরও কোন ক্ষতি নেই। বিশ্বনাথরা রাষ্ট্রকে দু’পয়সা টেক্স দেয় না, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ-কে দিনভিত্তিক মাসোহারা দেয় না। তাঁরা শুধু কোনরকমে নিজেরা বাঁচতে চায়, নিজের পরিবারটাকে বুকে নিয়ে নিত্যদিনের কষ্টগুলোতে আনন্দ খুঁজতে চায়। এমন উৎপাদন বিহীন মানুষদের জন্য রাষ্ট্রের পরিশ্রমটুকুনই পণ্ডশ্রম।
অপদার্থ বিশ্বনাথরা কেন বুঝেনা তাঁর দিন এনে দিন খাওয়াটা রাষ্ট্রের জন্য কোন গুরুত্বের বিষয় নয়। এমন গোলযোগের সময়ে তাঁর বাইরে বের হওয়াটাই নির্বুদ্ধিতা। নির্বুদ্ধিতা বললে কম বলা হবে, বলা উচিত অপরাধ। তাঁর একদিনের বিনা শ্রমের কারণে পরিবার একদিন উপোস থাকলে কি এমন ক্ষতি ছিল? রাষ্ট্রের জন্য, ক্ষমতাসীনদের জন্য, ক্ষমতার আকাঙ্খীদের জন্য এই সামান্য ত্যাগ-স্বীকারের যোগ্যতা যার নেই তাঁর মরাই ভাল।
ক্রিকেট বিজয়ের এই মহেন্দ্রক্ষণে বিশ্বনাথের মতো একটি অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসংগিক বিষয় আপনাদের সামনে এনে সময় নষ্ট করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। আমার দেশ মহান, আমার দেশই সেরা।