বাংলাদেশের দিনপঞ্জিতে গত মঙ্গলবার আরেকটি হরতাল যোগ হল। যেকোন হরতালই জাতির জন্য দুঃখজনক। খেটে খাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী সকলেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব অবশ্য বহুল ব্যবহৃত এবং খুবই পুরনো কথা। ক্ষমতাসীন দল, অর্থনীতিবিদরা প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই এ ক্ষতির বিষয়ে বিবৃতি, পরিসংখ্যান দিয়ে আসছেন। তবে এতোসব নেতিবাচকতার মধ্যে গত মঙ্গলবারের হরতালে আমি কিছুটা হলেও উৎফুল্ল। জামায়াতের এই হরতাল বা মরিয়া মনোভাব এটাই প্রতিষ্ঠিত করে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সঠিক পথেই এগোচ্ছে। তাদের মরণ-কামড় দেয়ার এই প্রচেষ্টা আমাকে আশ্বস্ত করে যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে প্রায় সফলতা অর্জনের কাছাকাছি।
মঙ্গলবারের হরতালটি আরো একটি বিশেষ কারণে দীর্ঘদিন স্মরণে থাকবে। এই প্রথম কোন হরতাল পালনকারী দল হরতালের কোন বিশেষ ঘটনার দায় নিজেদের বলে স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দিতে অঙ্গীকার করেছেন। হরতালের দিন সকালে রাজধানীর প্রগতি সরণিতে একদল হরতাল-সমর্থক মার্কিন দূতাবাসের একটি গাড়িতে হামলা চালায়। তাদের ছোড়া ঢিলের আঘাতে গাড়িটির কাচ ভেঙে যায়। এতে গাড়িচালকসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহন হন। ঘটনার পর মার্কিন দূতাবাস হামলার নিন্দা জানিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানায়। এরপরই জামাত তাদের ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। তবে সেদিনের হরতালে জামাত শুধু মার্কিন দূতাবাসের গাড়িই নয়, রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে অসংখ্য গাড়ি পুড়িয়েছে। এসব গাড়ির মালিক বা সুবিধাভোগী এদেশের জনগণ। বিবেচনার বিষয় হচ্ছে সাধারণ জনগণের জানমাল বা সম্পদের ক্ষতি নিয়ে তাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, দায়-দায়িত্বটা শুধু মার্কিন দূতাবাসের কাছে। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এদের শিকড় এদেশের মাটিতে নয়। এদেশ বা এদেশের মানুষকে এরা ধর্তব্যেই আনেনা।
আমি বিশ্বাস করি ন্যায়বিচারের স্বার্থে এখানে সরকারের যথেষ্ট কিছু করার আছে। মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে জামাত কার্যত এটাও প্রতিষ্ঠিত করেছে সেদিনের অন্যান্য সব নাশকতাতেও এরা জড়িত ছিল। কাজেই জননিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সরকারের উচিত হবে ঐ দিনে যতোগুলো নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং এতে যে পরিমাণ সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের টাকা জামাতের কাছ থেকে আদায় করে তা ক্ষতিগ্রস্তদের বুঝিয়ে দেয়া। শুধু তাই নয়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে সরকারকে সেদিন যতোগুলো নাশকতার ঘটনা ঘটেছে সে সবের জন্য ঐ এলাকার জামাত শিবিরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ প্রতিটি মামলায় জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব-কে আসামী করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। স্থানীয়ভাবে প্রতিটি নাশকতার জন্য স্থানীয় নেতৃত্বের পাশপাশি কেন্দ্রিয় নেতৃত্বকে আসামী করতে হবে এ কারণে যে তাদের প্রত্যক্ষ মদদেই এই জনবিরোধী কার্যক্রমসমূহ সংঘটিত হয়েছে।
আরেকটি বিষয় এখানে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। বেশ কিছুদিন ধরেই পত্রিকায় আসছে যে জামাত-শিবিরের হামলার সময়ে পুলিশ অসহায়, নির্বিকার থাকে। সাধারণ মানুষ, গার্মেন্টস এর কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের পেটানোর সময়েতো পুলিশ অসহায় থাকেনা। তবে এক্ষেত্রে হঠাৎ পুলিশ এতো অসহায় কেন? পুলিশের এ অসহায়ত্ব বা নির্বিকার থাকার বিষয়টি সরকারের গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত।
আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রেসের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তার সময়েও খুবই উত্তেজিত থাকেন। কখনও কখনও তাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী বলেও মনে হয়। তার মুখ-ভঙ্গীতে মনে হয় তিনি সবসময়ই পল্টন ময়দানে অবস্থান করেন। পল্টনী কথাবার্তায় নয়, অত্যন্ত বিচক্ষণতা, দক্ষতা এবং অবশ্যই কঠোরভাবে (প্রায়োগিক ক্ষেত্রে) এই রাষ্ট্রদ্রোহীদের শায়েস্তা করতে হবে।