বাংলা ব্লগের সাথে আমার জানাশুনার সময়কালটা প্রায় ৫ বৎসর। প্রাথমিক অবস্থায় আমার কাছে আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কটাই সবচেয়ে আকর্ষনীয় বলে মনে হত। তবে এই আকর্ষণটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাস্তব বিবেচনায় একটা সময়ে মনে হল এসব বিতর্কের বেশিরভাগেরই কোন উদ্দেশ্য বা গন্তব্য নেই। ক্ষেত্রবিশেষে অবান্তরও মনে হয়েছে। ধর্মকে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগটা যেমন শতভাগ সত্যি তেমনি নাস্তিক পরিচয়ে এসবের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন তারা যে কতোটা সঠিক পন্থায় বিরোধীতা করছেন বা এ বিষয়ে তারা কতোটা আন্তরিক এনিয়ে সন্দেহটা আমার মনে ক্রমশ ডানা বাধতে থাকে।
বাংলা ব্লগসাইটগুলো দেখলে যে কারোরই মনে হতে পারে ধর্মই আমাদের একমাত্র মুক্তির পথ অথবা মুক্তির পথে একমাত্র প্রতিবন্ধক। কিন্তু ধর্মকে আমার কাছে কখনই অতোটা শক্তিশালী বলে মনে হয়না। আমাদের জাতীয় চরিত্রের অসততা, দ্বৈততার (যা আস্তিক নাস্তিক উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য) তুলনায় ধর্ম প্রভাবশালী অথবা কেউকেটা কিছু নয়। আমি নিজে ধর্ম পালন করিনা বা মানিনা। এটা পালন করার জন্য কেউ আমাকে বাধ্য করছেনা বা বাধ্য করার সাহস দেখাতে পারছেনা। তবে এটাও অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষেরই ব্যক্তিগত জীবনধারার প্রবাহ নির্মাণে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটাও সত্যি যে, ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মের এই প্রভাব সময়ে সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। এটাকে সত্য মেনে এখানে বিবেচনার বিষয় হচ্ছে ধর্মের এ রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠার ব্লগীয় নাস্তিকতা কতোটা প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।
ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মের প্রভাব এবং এর সূত্র ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মের প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাতে যে বিষয়গুলো প্রভাব বিস্তার করে তাহলোঃ
(১) ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষা;
(২) মসজিদ/মক্তবভিত্তিক প্রারম্ভিক শিক্ষাব্যবস্থা;
(৩) ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন।
ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা পালন করে ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা। কারণ ব্যক্তি যে পদ্ধতিতে শিক্ষালাভ করে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাই তার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে প্রতিফলন ঘটায়। মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে এমন এক শিক্ষব্যবস্থা যার সোপান একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলো মূলত দুটো ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত। এটির সরকারি স্বীকৃতি আছে। অপরটি হচ্ছে সরকারি অনুমোদনবিহীন তথাকথিত কওমী মাদ্রাসা। বস্তুত তারা সরকারের স্বীকৃতির তোয়াক্কাও করেনা। এদের বেশিরভাগেরই অর্থের উৎস মধ্যপ্রাচ্য এবং এদেশের মানুষের যাকাত,ফেতরা, দান ইত্যাদি। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মাদ্রাসাগুলোতে কিছুটা আধুনীক শিক্ষার সংস্পর্শ থাকলেও যতটুকুন পর্যন্ত ধর্ম স্বীকৃতি দেয় এর সীমানা ততটুকুন পর্যন্তই। অপরদিকে কওমী মাদ্রাসার সিলেবাস একেবারে মধ্যযুগীয়। যুগের প্রয়োজনীয় শিক্ষা হতে বঞ্চিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো হতে পাশ করা এসব শিক্ষার্থীরা চাকরীর প্রতিযোগিতায় মূলধারার শিক্ষার্থীদের সাথে কুলিয়ে ওঠতে পারেনা। অপরদিকে কওমী মাদ্রাসা হতে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির কোন সুযোগই নেই। মসজিদ, মাদ্রাসা বা গুটিকয়েক তথাকথিত ইসলামিক প্রতিষ্ঠানেই এদের কর্মক্ষেত্রে নির্ধারিত। ফলে এসব মাদ্রাসা হতে পাশ করা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী মূলত পূর্ণ/সেমি বেকারত্বে ভোগে। এসব হতাশাগ্রস্থ বেকার যুবকরা তখন আধুনীক সমাজ/শিক্ষাব্যবস্থাকে তাদের শত্রু ও প্রতিদ্বন্ধী মনে করে। তারা বুঝতে পারে যদি ১৪০০ বছরের পুরনো সেই ব্যবস্থা আবার প্রতিষ্ঠিত হয় তবেই সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হবে। সে কারণেই তারা একটি ধর্মভিত্তিক সমাজ ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে।
একজন মানুষ আধুনীক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও নিজেকে ধর্মীয় তথা সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে নিজেকে ঢেকে রাখতে পারেন। এটারও প্রধান কারণ ব্যক্তির প্রারম্ভিক শিক্ষা। আমাদের দেশের প্রায় ৯০% শিক্ষার্থীর (ধনী ও দরিদ্র উভয়েরই) শিক্ষাজীবন শুরু হয় মসজিদ/মক্তবভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে। এখানেই তাকে শিখানো তার ধর্মই একমাত্র সঠিক, বাকি সব ধর্ম মিথ্যা। তাদের প্রেরিত পুরুষই সত্য, একমাত্র তাকে অনুকরণেই মুক্তি। বাকি সব পথ ভুল। শিশু অবস্থায় মানুষ যা শিখে কিছু ব্যতিক্রম বেশিরভাগই পরবর্তী জীবনে সে শিক্ষার বৃত্তে ঘোরপাক খায়। ঠিক সে কারণেই পরবর্তী জীবনে আধুনীক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও অনেক ব্যক্তির ধর্মের কু-প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছেনা।
একবিংশ শতাব্দীর এই ক্ষণে যখন আমরা নিজেদের পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সভ্য বলে দাবি করছি ঠিক তখনও আমাদের সমাজ/রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইনের মাধ্যমে। এ আইনের বদৌলতেই কন্যাসন্তানেরা পুত্র সন্তানের তুলনায় পিতার সম্পত্তি/সম্পদের সমঅধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পুত্রসন্তানের বাবাকে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে কোন চিন্তা করতে হয়না। কিন্তু পুত্রবিহীন কন্যাসন্তানের বাবাকে তার মেয়েদের অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য বেঁচে থাকা অবস্থায়ই মেয়েদের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে বাকিটা জীবন বেঁচে থাকেন। কারণ পুত্রবিহীন বাবার সম্পত্তিতে কন্যাদের পাশাপাশি তার ভাই/ভাইয়ের সন্তান/বোন/বোনের সন্তানের অধিকার জন্মে। যে সমস্ত বাবা-মা পরিনত বয়সে উপনীত হয়ে তাদের সম্পত্তি কন্যঅদের নামে লিখে দিতে পারছেন তাদের কন্যারা ভাগ্যবান। কিন্তু কোন কারণে এর পূর্বেই পিতার মৃত্যু হলে সে সংসারের কন্যাদের তাদের নিকট আত্মীয়দের দ্বারা অত্যাচারিত ও বঞ্চিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। সনাতন হিন্দু সমাজে মেয়েদের অবস্থা আরো খারাপ। আইন অনুযায়ী পিতার সম্পত্তিতে হিন্দু মেয়েরা কোন অধিকার পায়না। হিন্দু সমাজে যৌতুক, বধু নির্যাতনের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পিতার সম্পত্তিতে মেয়ের অনধিকার।
উল্লেখিত বিষয়সমূহকে আমার কাছে আমাদের সমাজে, রাজনীতিতে, ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় প্রভাবের মূল কারণ বলে মনে হয়। ব্লগার হিসেবে একেবারে প্রারম্ভিক অবস্থা থেকেই আমি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি, এখনও করছি। এটা আমাকে কখনই হতাশ করেনা যে, যারা নিজেদের-কে নাস্তিক হিসেবে দাবি করেন তাদের কাছ থেকে খুব কম সাড়া পেয়েছি। তবে সামগ্রীকভাবে যা আমাকে হতাশ করে তাহলো যারা নিজেদের নাস্তিক হিসেবে দাবি করছেন তারা এ বিষয়গুলো নিয়ে খুব কমই ভাবছেন, লিখছেন। বরং তারা ব্যস্ত মুহম্মদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে। তারা লিখছেন মুহম্মদের বহুবিবাহ, ক্রীতদাসীভোগ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ব্যঙ্গচিত্র আর হাদিসে বর্ণিত ষাট ফুট উচ্চতার মানুষের বৈজ্ঞানীক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমার কাছে এগুলোকে কুতর্ক বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়না এ তর্কগুলোর কোন বৈষয়িক মূল্য আছে। আমার মতে একজন নাস্তিক হবে বৈষয়িক, যৌক্তিক এবং প্রাসংগিক। সে বিবেচনায় তর্ক হওয়া উচিত ধর্মের যে সমস্ত কু-প্রভাব এখনও সমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে এবং যে সিস্টেমের কারণে এ প্রভাব দিন দিন বাড়ছে।
সরকার চেষ্টা করছে। কারণ একটি সেমি প্রগতিশীল এবং ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের দল হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ নিজেও এ ধর্মীয় কু-প্রভাবের শিকার। ধর্মান্ধদের পুরো সমর্থনটাই থাকে মৌলবাদী জামাত-বিএনপির দিকে। সে কারণে নিজের স্বার্থেই সরকার চেষ্টা করছে বা করবে এ বিষবৃক্ষের মূল শিকড়টা উপড়ে ফেলতে। সরকার একটি নারীনীতি (যা বাস্তবায়ন হলে নারীরা ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইনের কু-প্রভাব থেকে অনেকটাই রক্ষা পেত) বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী কয়েক দিন আগে বলেছেন, সরকার নারী-নীতি বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। সরকার একটি সার্বজনীন একমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নেরও চেষ্টা করছে যা করতে সক্ষম হলে ধর্মীয় শিক্ষার নামে মধ্যযুগীয় সমাজ প্রতিষ্ঠা তথা জঙ্গী উৎপাদনের কারখানা চিরতরে বন্ধ হত।
তবে সবচেয়ে বড় সত্য আমাদের রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত কালচার হচ্ছে নগদ লাভ, দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা নেই। সে নগদ লাভ বিবেচনায় সরকার হয়তো এটা নিশ্চিত নয় যে এসব নীতির বাস্তবায়নে সে রাজনৈতিকভাবে বর্তমানে কতোটা লাভবান হবে। সরকার হয়তো আশংকা করছে যে, এগুলোর বাস্তবায়ন হলে এদেশের ধর্মভীরু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ধর্মান্ধদের প্ররোচনায় ওদের দিকেই ঝুকে পড়বে। সে কারণেই সরকার এসব নীতির বাস্তবায়নে এক পা এগুলো দু’পা পিছায়। এ অবস্থায় বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে আমাদের ব্লগের নাস্তিক বা প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে পারতেন। ক্ষমা চেয়েই বলতে হয় আমাদের ব্লগের নাস্তিক সমাজ সেই দায়িত্ব পালনে প্রায় ব্যর্থ হয়েছেন। সত্যি বলতে তাদের নজরও সেদিকে নেই। আপনি আওয়ামী লীগের মতো একটি সেমি-প্রগতিশীল ও মোটামুটি ধর্মনিরপেক্ষ দল ক্ষমতায় থাকার সময়েও আপনি যা করতে পারছেন না জামাত-বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সেটা পারবেন তেমন ভাবাটা অর্বাচীনের মতো আচরণই হবে।
আমার মনে হয় সুবর্ণ একটা সময় চলে যাচ্ছে। সে কারণেই নাস্তিকতার নামে ব্লগে যা দেখি তা আমাকে হতাশ করে। আমি হতাশ হই যখন দেখি গুটিকয়েক ব্যক্তি ছবির হাট বা আজিজ মার্কেটে নিজেদের ব্যক্তিগত আলাপচারিতাকে “অবিশ্বাসীদের সম্মেলন” হিসেবে প্রচার করে ছবি সম্বলিত পোস্ট দেয়। এটা স্রেফ ব্যক্তি বা গুটিকয়েকের ‘নাস্তিকতার’ ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন হতে পারে। আমি হতাশ হই যখন দেখি কোন কোন ভাববাদী নাস্তিকতাকে সব সমস্যার সমাধানের উপায় হিসেবে বাতলান বা সব ইস্যুতেই ধর্ম বা নাস্তিকতাকে টেনে আনেন। সেদিন দেখলাম ব্লগের একজন স্বঘোষিত নাস্তিক বলছেন, পরিপূর্ণ মানবতাবাদী হওয়ার জন্য নাস্তিকতা অত্যাবশ্যক। বটে, উত্তম দর্শণ। ভদ্রলোকের দর্শণ থেকে বুঝলাম, হেনরী ডুনান্ট, মাদার তেরেসা, গান্ধী, বিবেকানন্দ, ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহরা কেউই পরিপূর্ণ মানবতাবাদী ছিলেনা। কারণ জানামতে তাদের কেউই নাস্তিক ছিলেন না। শেষপর্যন্ত যা বুঝলাম, তার সারকথা হচ্ছে এসব মৃত মহাপ্রাণদের কবর থেকে ওঠে এসে ঐ স্বঘোষিত নাস্তিক মহোদয়ের কাছ থেকে মানবতার শিক্ষা নিতে হবে।
আমি নাস্তিকের মাঝে কোন শ্রেণীবিভাগ, বিভেদ, বৈষম্য করিনা। তেমনটা করা উচিতও নয়। তবে স্বাভাবিক বিবেচনার দায় থেকে এটা বিশ্বাস করি, যে যে ধরণের সমাজব্যবস্থা থেকে ওঠে এসছেন বা যার শিকড় যেখানে অবস্থিত সেই সমাজের বা শিকড়ের প্রতি দায়িত্ব পালনা করা এবং এর আগাছাসমূহ দুর করা সেই ব্যক্তির প্রাথমিক দায়িত্ব। একবিংশ শতাব্দীর এই সভ্য সময়েও সনাতন হিন্দু সমাজে কন্যাসন্তানেরা বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয় না। ব্লগে অনেক নাস্তিকের দেখা পেয়েছি যারা সনাতন হিন্দু সমাজ থেকে ওঠে এসছেন। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েই বলব, হিন্দু মেয়েদের বাবার সম্পত্তিতে অধিকারের দাবি সম্বলিত খুব বেশি লেখা বা প্রচেষ্টা আমি তাদের কাছ থেকে পাইনি। অথচ ধর্মের সমালোচনামূলক লেখায় তারা সানন্দে অংশগ্রহণ করেন। আমি এটা বলিনা যে, ওসব লেখায় তাদের অংশগ্রহণ অনুচিত। আমি আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করি যে, অনাচারটা যে স্থান বা সমাজেই ঘটুক না কেন এবং আপনি সে সমাজের অংশ না হলেও নৈতিকতার দায় থেকে এর বিরুদ্ধে বলতে আপনি বাধ্য। তবে এ সার্বজনীন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যে সমাজ থেকে আপনি ওঠে এসছেন সেই সমাজের আগাছাগুলো দুর করাও আপনার দায়িত্ব। আমি বাঙালি হিন্দুসমাজকে মুসলিম সমাজের তুলনায় অনেক বেশি উদার এবং সংস্কারমুখী মনে করি। আমার বিশ্বাস ইতিহাসও আমার বক্তব্যের স্বপক্ষ্যে রায় দিবে। সে বিবেচনায় এখনও সনাতন হিন্দু সমাজে বাবার সম্পত্তিতে মেয়ের অনধিকার আমাকে অবাক ও হতাশ করে।
সংস্কার, পরিবর্তন বা প্রগতিটা ব্যক্তিকে এমনভাবে আনতে হবে যাতে করে ব্যক্তি যাদের জন্য এটা করতে চাচ্ছেন তারা যেন এটাকে তাদের ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখে। এ প্রক্রিয়ার সাফল্যের জন্য আপনাকে তাদের একজন মনে করাও জরুরী। প্রাথমিক অবস্থায় জনসাধারণ হয়তো এটাকে অতোটা ইতিবাচক হিসেবে নাও নিতে পারে। তবে ব্যক্তির কর্ম-প্রচেষ্টা বা উপস্থাপনাটা যেন সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক পরিবর্তনের ধাচের মধ্যেই থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ব্লগে নাস্তিকতার নামে যে লেখাগুলো দেখি তাদের বেশিরভাগেই এসবের উপস্থিতি দেখতে পাইনা। বরঞ্চ বেশিরভাগ লেখাকেই বাস্তবতার সাথে সংগতিহীন, প্রকৃত সমস্যা বিবর্জিত, একপেশে, জেদী এবং অহেতুক বিতর্কের মাধ্যম হিসেবে মনে হয়। অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি মাধ্যমে কেউ কেউ হয়তো আলোচিত হচ্ছেন ঠিকই , তবে ইতিবাচক কোন পরিবর্তনের দেখা মিলছেনা।
দয়া করে এ লেখাটিকে আদেশ, উপদেশ, পরামর্শমূলক কোন কিছু ভাববেন না। এটা স্রেফ অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যক্তির ব্যক্তিগত উপলব্ধি মাত্র।