somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় রেলমন্ত্রী, দয়া করে পদত্যাগ করে আপনার নেত্রী ও দলকে স্বস্তি দিন

১২ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিগত দু’বছরে আমার মনে হয় গেল মাসটাতেই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। সমুদ্রসীমা মামলার জয়ের পর তিনি ও তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর দলের নেতৃবৃন্দ সবকিছু ফ্রন্টফুটেই খেলছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে এক সময়ের বামনেতা এবং বর্তমানের কালো বিড়াল বিশেষজ্ঞ জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গাড়িতেই সেই বিড়ালের অস্তিত্ব খুজেঁ পাওয়ায় সরকার সম্ভবতো আবার ব্যাকফুটে চলে গেল। আগামী ১৮ এপ্রিল সমুদ্র বিজয় উপলক্ষ্যে দলের যুব সংগঠনের পক্ষ্য থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমি জানিনা এ পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতোটা স্বস্তিতে এ সংবর্ধনা গ্রহণ করতে পারবেন।

গত দু’দিনের পর্যবেক্ষণে এটা পরিস্কার যে, মাননীয় মন্ত্রীর এপিএস সাহেবের গাড়ি হতে পাওয়া টাকাগুলো কীভাবে সংগৃহীত হয়েছে এবং এগুলোর গন্তব্য কোথায় ছিল। মাননীয় মন্ত্রী নিজেকে যতোই চালাক হিসাবে দেখাতে চাননা কেন কিংবা তিনি সাংবাদিকদের যতোই রক্তচক্ষু দেখান না কেন, ওনার গত দুদিনের কর্মকান্ডের মাধ্যমে ওনি নিজেই প্রমাণ করেছেন এ ঘটনার পালের গোদাটা তিনিই। ঘটনার প্রথমদিনে ওনি ওনার এপিএসের পক্ষালম্বন করলেন। বললেন এগুলো এপিএস সাহেবের ব্যক্তিগত টাকা এবং তিনি সম্ভবতো অপহরণের শিকার হয়েছেন। বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করায় মনে হলো ওনি তাঁদের উপরও বিরক্ত। ইশারা-ইংগিতে বুঝালেন তাঁদের কাজ-কর্ম সীমান্ত এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত, এখানে সেখানে নাক গলানোর কোন এখতিয়ার নেই। শুধু তাই নয়, অপরাধীদের রক্ষার তাগিদেই ওনি ওনার পিএস এবং যুগ্মসচিব (প্রশাসন)-কে দায়িত্ব দিয়ে একটি হাস্যকর তদন্ত কমিটি গঠন করলেন।

মাননীয় মন্ত্রী ভেবেছিলেন এসব জোড়া-তালি দিয়ে তিনি ও তাঁর শিষ্যরা পার পেয়ে যাবেন। আজকে থেকে ১০-১২ বছর আগে হলে হয়তো নিজে পার হয়ে শিষ্যদেরও পার করে আনতে পারতেন। কিন্তু এখন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া অনেক শক্তিশালী, সচেতন ও সাহসী। গতকাল দেশের সবকটি পত্রিকা এ ঘটনাটিকে লিড নিউজ আকারে প্রকাশ করে। রিপোর্টগুলোতে প্রকৃত ঘটনা এবং মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্যের অসংলগ্নতা তুলে ধরা হয়। মাননীয় মন্ত্রীর গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলা হয়। ফেস বুক, বাংলা ব্লগসাইট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোগুলোও দিনভর প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল এ ঘটনা। এসব সাড়াশি প্রচেষ্টা লক্ষ্য করে মাননীয় মন্ত্রী অনুধাবন করতে পারলেন এভাবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা সম্ভব হবেনা। তাই নিজে বাঁচতে স্নেহের এপিএসকে আপাতত বলি দিলেন।

মাননীয় মন্ত্রী এপিএসকে বলি দিয়ে যতোই নিজে বাঁচার চেষ্টা করেন না কেন এ ঘটনা বা অপরাধের দায় তিনি কোন প্রকারেই এড়াতে পারেন না। গত দু’দিনে ওনার কথাবার্তায় অসংলগ্নতা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে এটা পরিস্কার যে পালের গোদাটা সম্ভবতো তিনি নিজেই। প্রথমদিন মাননীয় মন্ত্রী তার এপিএসের পক্ষ্যে সাফাই গেয়ে বললেন দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর টাকা যখন ইচ্ছা যেখানে রাখতে পারেন বা নিতে পারেন। অথচ গতকালকে বললেন এতোগুলো টাকা পাওয়া দুঃখজনক। তাঁর এপিএস, জিএম এবং রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রথমদিনই বলেছেন তাঁরা মন্ত্রী মহোদয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। গাড়ির গতিবিধিতেও তেমনটা মনে হয়। কারণ গাড়িটি আটক হয়েছে বিজিবি হেডকোয়াটারে যা মন্ত্রীর বাড়ির গন্তব্যপথ। অথচ মাননীয় মন্ত্রী গতকাল বলেছেন তাঁরা তাঁর বাসায় যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। যদিও প্রথমদিন তাঁরা তাঁর বাসায় যাচ্ছেন বলার পরও মাননীয় তাঁদের গন্তব্য সম্পর্কে স্বীকার অস্বীকার করে কোন মন্তব্য করেননি।

তাই সার্বিক পর্যবেক্ষণে মাননীয় মন্ত্রী সন্দেহেরে উর্ধ্বে নন। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী ওনার কর্মকান্ডে সরকার বিব্রত। তবে যেহেতু ওনি পার্টির একজন সিনিয়র লিডার তাই সাহস করে কেউ কিছু বলছেন না। এক্ষেত্রে মাননীয় মন্ত্রীর যদি ন্যুনতম ব্যক্তিত্ববোধ থেকে থাকে তাহলে ওনার উচিত নিজে থেকে পদত্যাগ করা। অবশ্য পদত্যাগ করার আগের কাজ হিসেবে তিনি এ ঘটনা তদন্তের জন্য অফিসিয়ালি দুদককে অনুরোধ করতে পারেন। কারণ ওনার পিএস বা যুগ্ম-সচিবের পক্ষে কোনকালেই ওনাকে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হবেনা। নিরপেক্ষ তদন্তের পর যদি তিনি নির্দোষ হোন এবং ওনার নেত্রী যদি চান তাহলে তিনি পুনরায় বুক ফুলিয়ে আবার স্বপদে ফিরতে পারেন। আপাতত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ওনার পদত্যাগ করাই শ্রেয়।

এখানে প্রসংক্রমে আমাদের উপমহাদেশের ওনার মতোই একজন রেলমন্ত্রীর আচরণ স্মরণ করিয়ে দিতে পারি। পন্ডিত জওহর লাল নেহরুর ক্যাবিনেটে (১৯৫১-৫৬) রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন গান্ধীবাদী নেতা জনাব লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৫৬ সালে আন্ধ্রা প্রদেশ এর মাহাবুব নগরে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ১১২ জন মানুষ মারা গেলে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন, যদিও তিনি ঐ দুর্ঘটনার সাথে কোন প্রকারেই সরাসরি জড়িত ছিলেন না। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা বা তার মতামত নেয়ারও প্রয়োজন করেননি। প্রধানমন্ত্রী সেবার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। এর তিন মাস পরে তামিলনাডুতে এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৪৪জন মানুষ মারা গেলে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী পুনরায় মন্ত্রীর পদ হতে পদত্যাগ করেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জওহর লাল নেহরু এবার তাঁর পদত্যাগ পত্র করেন। পার্লামেন্টে জনাব শাস্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে নেহরু বলেন, ‘যদিও তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং তা গ্রহণ করা হয়েছে তবে এর অর্থ এই নয় যে জনাব শাস্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তার পদত্যগপত্র এই কারণে গ্রহণ কার হয়েছে যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে ও শিখতে পারে তিনি সংবিধান, গণতন্ত্র ও দায়িত্বের প্রতি কতোটা সৎ এবং নিবেদিত ছিলেন।’ কৃতজ্ঞ ভারতবাসী পরবর্তীতে জনাব শাস্ত্রী-কে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে তার সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠার প্রতিদান দিয়েছিলেন।

আমি কোন অবস্থায়ই জনাব সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মতো সৎ, নিবেদিত, গণতন্ত্রী মনে করিনা। তারপরেও ওনাকে একজন কৃতজ্ঞ বা রুচিশীল মানুষ মনে করতে আমার কোন আপত্তি নেই। প্রথম জীবনে আওয়ামী বিরোধী বামপন্ত্রী একজন নেতা হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তীতে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করে মন্ত্রী মর্যাদায় উপদেষ্টা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং মন্ত্রীও হয়েছেন। যে দল তাঁকে এতোকিছু দিয়েছে একজন রুচিশীল এবং কৃতজ্ঞ মানুষ হিসেবে ওনি নিশ্চয়ই চাইবেননা যে ওনার কারণে দল ও নেত্রী কোন বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ুক, বিশেষ করে সামনে যখন গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাই ওনার উচিত একজন কৃতজ্ঞ এবং রুচিশীল মানুষের পরিচয় দিয়ে এখনই পদত্যাগ করে নেত্রী ও দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করা।

মাননীয় মন্ত্রীর পদত্যাগে বাংলাদেশ আওয়াম লীগের দীর্ঘমেয়াদী কতোটা লাভ হবে তা জানিনা। তবে নিশ্চিতভাবেই এটা বলা যায় যে, আগামী ১৮ এপ্রিল সমুদ্রজয়ের সংবর্ধনাটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বস্তিতেই উপভোগ করতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৫:০৬
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×