নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ভারতবর্ষের ইতিহাস চিহ্নিত করেছে একজন সেনানায়ক, রাজনীতিবিদ, দেশপ্রেমিক হিসেবে। এ তাঁর খন্ডিত পরিচয় মাত্র। বিশেষ করে ভারতবর্ষের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অন্যান্য তৎকালীন অনেক জাতীয় নেতার সংবাদপত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হলেও গণজ্ঞাপক, লেখক, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সংবাদপত্র পরিচালক হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র প্রায় অনুল্লেখ্য থেকে গেছেন ।
সারাদিনের নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি সামলে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ফরোয়ার্ড, আত্মশক্তি পত্রিকার জন্য বুদ্ধিশানিত অগ্নিময় লেখা লিখেছেন, লিখেছেন সম্পাদকীয়, চিন্তাভাবনা করেছেন পত্রিকার প্রচার ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাজরোষে ফরোয়ার্ড বন্ধ হওয়ায় রাতারাতি প্রকাশিত হয়েছে নিউ ফরোয়ার্ড আবারও নাম বদলে হয়েছে লিবার্টি।
এগারোবার কারারুদ্ধ হয়েছেন সুভাষচন্দ্র। রাজপথে ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে রক্তাক্ত হয়েছেন। জেলের মধ্যেও নির্যাতিত হয়েছেন নির্মমভাবে। তবু তার কলম থেমে থাকেনি। শুধু তাঁর পরিচালিত কিংবা সম্পাদিত পত্র-পত্রিকা নয়, ব্রিটিশবিরোধী জনমত সৃষ্টি করতে সমসাময়িক বহু পত্র-পত্রিকায় তার জাতীয়তাবাদী ও সাম্রারাজ্যবাদবিরোধী লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। দেশের বহু বিখ্যাত তরুণ লেখক ও প্রতিভাশালী ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি এক লেখকগোষ্ঠী তৈরী করেছিলেন যাঁদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, শিবরাম চক্রবর্তী, নীরদ সি চৌধুরী প্রমুখ। ফরোয়ার্ড পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের Freedom কবিতাটি ছাপা হয়েছিল।
তাঁর সম্পাদিত রাজনৈতিক মুখপত্র ইংরাজি সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড-ব্লক ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে মহাফেজখানার নানা নথিপত্রে।
বিশ্ব স্তরে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত সংগঠিত করার লক্ষ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজাদ হিন্দ রেডিও। এই প্রতিষ্ঠানের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের ছয়টি দেশে; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশৃঙ্খল এবং উত্তাল প্রেক্ষাপটে যা প্রায় অবিশ্বাস্য। প্রতিটি শাখাই সফল গণমাধ্যম পরিচালনার আদর্শ দৃষ্টান্ত বলে বিবেচিত হতে পারে। নেতাজির নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ রেডিও হয়ে উঠেছিল পেশাদার এবং আদর্শনির্ভর পরিচালনা নীতির সার্থক দৃষ্টান্ত।
গণমাধ্যম জগতে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটল সূদূর জার্মানিতে। এলগিন রোডের বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে পালিয়ে নানা দেশে ঘুরে ১৯৪২ সালে তিনি উপস্থিত হলেন হিটলারের জার্মানিতে। তৎকালীন জার্মান সরকারের সহায়তায় বার্লিনে প্রতিষ্ঠিত হল আজাদ হিন্দ রেডিও। পরবর্তীকালে এই সংস্থার সদর দপ্তর স্থানান্তরিত হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে এই সদর দপ্তর আবার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, আজাদ হিন্দ বাহিনী অধিকৃত অঞ্চলগুলির মধ্যে সর্বাধিক নিরাপদ শহর রেঙ্গুনে। যখন আজাদ হিন্দ রেডিওর সদর দপ্তর জার্মানি থেকে সরিয়ে নেওয়া হল তখন এই পূর্বতন শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন-এ.সি.এন.। এই নাম্বিয়ার পরবর্তীকালে যখন সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার গঠিত হয়েছিল, তখন জার্মানিতে সেই সরকারের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজাদ হিন্দ রেডিও ইংরাজি ছাড়া সাতটি ভারতীয় ভাষায় অনুষ্ঠান এবং সংবাদ প্রচার করত। এই ভাষাগুলি হল হিন্দি, তামিল, বাংলা, মারাঠি, পাঞ্জাবি, পুস্তু এবং উর্দু। কেননা, তৎকালীন ভারতবর্ষে এই ভাষাগুলি সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করতেন। এছাড়াও স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য জার্মান ভাষায়ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হত। আজাদ হিন্দ রেডিওতে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং বক্তৃতা দেবার জন্য নেতাজি মাত্র তিনমাসের চেষ্টায় জার্মান ভাষা শিখে নিয়েছিলেন। তিনি স্বয়ং নিয়মিত ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা, জার্মান ও রুশভাষায় স্বদেশবাসী এবং বিশ্ববাসীর উদ্দেশে তার এবং আজাদ হিন্দ সরকারের লক্ষ্য ও কর্মসূচি ব্যাখ্যা করতেন। নেতাজি অনুরাগীদের পাশাপাশি এই সম্প্রচারের ওপর নিয়মিত নজর রাখতেন ব্রিটিশ, মার্কিন এবং মিত্রশক্তির গুপ্তচরেরা।
বার্লিন এবং সিঙ্গাপুরের পর আজাদ হিন্দ সকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল টোকিও। বস্তুত এই শহর থেকেই আজাদ হিন্দ সরকার এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্য রসদ সরবরাহ করা হত। আজাদ হিন্দ রেডিও নিপ্পন শাখার সদর দপ্তর ছিল এই টোকিওতে। এই রেডিও স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব সুভাষচন্দ্র অর্পণ করেছিলেন হরিপ্রভা মল্লিক নামে এক বঙ্গতনয়াকে। তৎকালীন সময়ে একজন মহিলা স্টেশন ডিরেক্টর একটি রেডিও স্টেশন পরিচালনা করছেন-এ ঘটনা ছিল বিরল। হরিপ্রভা নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। হরিপ্রভা মল্লিক ১৮৯০ খ্রিঃ বাংলাদেশের ঢাকা শহরে এক ব্রাহ্ম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১২ খ্রিঃ তিনি জাপানে যান এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯১৫ খ্রিঃ তিনি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বঙ্গমহিলার জাপান যাত্রা রচনা করেন। এই বইটি নেতাজির নজরে আসে এবং তিনি স্বয়ং হরিপ্রভার সঙ্গে যোগাযোগ করে আজাদ হিন্দ সরকার তথা দেশের সেবায় নিয়োজিত হবার আবেদন করেন। নেতাজির ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৪১ সালে হরিপ্রভা আজাদ হিন্দ রেডিও নিপ্পন শাখার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আত্মবিস্মৃত বাঙালি এই মহিলার নাম প্রায় ভুলতে বসেছে।
এই আজাদ হিন্দ রেডিওর সিঙ্গাপুরে শাখা থেকে ১৯৪৪ সাল ৫ জুলাই প্রদত্ত এক ভাষণে নেতাজি প্রথম মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধিকে জাতির জনক (Father of Nation) আখ্যায় ভূষিত করেন। পরবর্তী কালে এই নামে গান্ধিজি সমগ্র দেশবাসীর কাছে পরিচিত হন। একটি মজার এবং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল আজাদ হিন্দ রেডিও কিন্তু কোনো রকম ভরতুকি বা কারো অনুদানের উপর নির্ভর করে পরিচালিত হত না। এই প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে রীতিমত লাভ করত এবং লভ্যাংশের কিছুটা আজাদ হিন্দ সরকারকে দান করত। তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এও প্রায় অবিশ্বাস্য এক নজির।
মহাপরিচালকের সুদক্ষ নেতৃত্ব ব্যতীত এই অসম্ভব সম্ভবপর হত না। এই আজাদ হিন্দ রেডিওর রেঙ্গুন দপ্তর থেকে সম্প্রচারিত বক্তৃতায় নেতাজি Give me blood and I will give you freedom. কখনও রেডিও সেটে সুদূর কোনো দেশের জানা বা অজানা কোনো শহরে প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ রেডিওর কোনো না কোনো শাখা থেকে নেতাজির মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বর ভেসে আসত তার জন্য ভারতবর্ষের নগরে প্রান্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ অপেক্ষা করে থাকতেন। বেতারে ভেসে আসা নেজাজির কণ্ঠে ধ্বনিত জয় হিন্দ এবং বন্দেমাতরম ধ্বনির কণ্ঠ মেলাতেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তরে অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ।
আজাদ হিন্দ রেডিও তাদের কার্যক্রম শুরু করে ২ নভেম্বর ১৯৪১ সালে। ঐ দিনই বার্লিনে এক অনুষ্ঠিত একটি মিটিং -এ নেতাজি প্রস্তাব করেন জনগণমন হবে স্বাধীন ভারতের জাতীয় সংগীত। এই তথ্য এবং জনগণমন অধিনায়ক” সংগীত প্রচারিত হয় আজাদ হিন্দ রেডিওতে৷ ঐদিন আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। যেমন - হিন্দুস্তানী (হিন্দি) হবে ভারতের জাতীয় ভাষা, জয় হিন্দ হবে ভারতের জাতীয় সম্ভাষণ এবং সুভাষচন্দ্র পরিচিত হবেন ফুয়োরার নামে। এই জার্মান ফুয়েরায় শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল নেতাজী। এই প্রতিটি তথ্যই প্রথম মানুষ জানতে পারে আজাদ হিন্দ রেডিওর সম্প্রচারের মাধ্যমে। এই এতগুলি অজানা তথ্য একত্রিত করলে আমরা দেখব স্যাম বেনেগাল যথার্থই বলেছিলেন Bose the Forgotten Hero যার প্রকৃত অবদান আমরা ভুলতে বসেছি।
সূচনায় আজাদ হিন্দ রেডিও আর্জি হুকুমত এ হিন্দ বা আজাদ হিন্দ সরকার এবং জার্মানিস্থিত Indian legion প্রতিষ্ঠানে প্রচার মন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। কিন্তু অচিরেই অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য ব্যাপ্তিতে এবং গ্রহণযোগ্যতার তার স্বাতন্ত্র প্রতিভাত হল। আজাদ হিন্দ ফৌজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য স্বাধীন ভারতবর্ষের সম্ভাব্য সরকারের নীতি ও কর্মসূচি, নেতাজি স্বপ্ন পরিকল্পনা ইত্যাদি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্প্রচারিত হতে থাকল এই বেতার তরঙ্গে। এর সঙ্গে যুক্ত হল প্রশাসনিক বিচক্ষণতা এবং বিপণন দক্ষতা। প্রতিষ্ঠার সময় আজাদ হিন্দ রেডিও পরিচালিত হতো একটি Special Bureau অধীনে। এই Bureau প্রধান ছিলেন Adam-Von-Tro নামে এক জার্মান কূটনীতিবিদ। জার্মানিতে গিয়ে দায়িত্ব নিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। পরে নেতাজি জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে প্রবাসী ভারতীয় নাম্বিয়ার ডিরেক্টর হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯ জানুয়ারি ১৯৪২ সালে নেতাজি স্বয়ং আজাদ হিন্দ রেডিও ম্যানিফেস্টো পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন Our moral duty to acquaint you with the world events and to win your confidence in our activites. to achieve freedom for our dear motherland. Let it become medium for co-operation between those outside and those inside India. The distinguishing feature will be that our transmission will be by the Indians and for the Indians.
ভারতের তৎকালীন একমাত্র রেডিও প্রতিষ্ঠান ছিল, অল ইন্ডিয়া রেডিও (এ আই আর) এবং যুক্তরাষ্ট্রে ছিল ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) উভয়ই ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের কাজ ছিল ভারত এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ব্রিটিশ সরকারের কর্মসূচীর প্রচার করা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের অংশগ্রহণের সপক্ষে যুক্তি এবং অক্ষশক্তিতে অংশগ্রহনকারী দেশগুলির নেতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরা হত। এই দুই বেতারে প্রচারিত অনুষ্ঠানে। আজাদহিন্দ রেডিও দ্ব্যর্থহীনভাবে এদের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে। মজা করে আজাদ হিন্দ রেডিও সঞ্চালকরা এই দুই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছিল Anti-Indian এবং Bluff-Bluster Corporation বোঝাই যায় আজাদ হিন্দ রেডিও পরিচালকদের Satire এবং Humour বোধের অভাব ছিল না।
আজাদ হিন্দ রেডিও প্রচারের মাধ্যমেই নেতাজির সর্বশেষ ভাবনাগুলি ভারত এবং বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছেছিল। নেতাজির ফ্যাসিস্ট নায়কদের অনুকরণে নিজেকে ফুয়োরার হিসেবে তুলে ধরা, হিটলারের ঘনিষ্ঠতার ভারতের মুক্তি সংগ্রামে নাৎসিনি জার্মানীর সাহায্য গ্রহণ ইত্যাদিকে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেন। আসলে নেতাজি কার্ল মার্কসের সমাজবাদী দর্শনের অনুরাগী। এর সাথে তিনি মেশাতে চেয়েছিলেন জাতীয়তাবোধ ও শৃঙ্খলতা পরায়ণতা ; গান্ধীজির মানবতাবাদ। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্র চেতনার মেধাবী পাঠক। এই সব ভাবনার স্বকীয় সংশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন এক নতুন রাষ্ট্র দর্শনের প্রতিষ্ঠা। নেতাজির লক্ষ্য ছিল ভারতীয় মতে, ভারতীয় পথে, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। আর তার ভাবনা-স্বপ্ন-পরিকল্পনা মানুষের কাছে। পৌছে দেবার হাতিয়ার হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন তৎকালীন সময়ে সর্বাধিক জনপ্রিয় গণমাধ্যম বেতারকে।
নেতাজির জার্মানি পদার্পণ এবং তার পরবর্তী কর্মকান্ড নান বিতর্ক এবং রহস্যে আবৃত। এর প্রধান কারণ গ্রহণযোগ্য তথ্যের অপ্রতুলতা। বিশেষতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে জার্মানি এবং জাপানের পরাজয়ের সাথে সাথে বিজয়ী মিত্রশক্তি তাদের রচিত ইতিহাসে বিজিত অক্ষশক্তির ইতিবাচক তথ্যগুলি বিকৃত এবং নষ্ট করে দেয়। নেতাজি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্যের আকর হতে পারত আজাদ হিন্দ রেডিও বিভিন্ন শাখাগুলিতে রক্ষিত দলিল-দস্তাবেজগুলি। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী জার্মান, জাপান, সিঙ্গাপুর সরকার এমনকি স্বাধীন ভারত সরকার কেউই এগুলি সংরক্ষণ বা পুনরুদ্ধার বিষয়ে উদ্যোগী হয়নি। তাই ভারত ইতিহাসের এক স্বর্ণালী অধ্যায় প্রায় সবটাই হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্তরালে।
আজাদ হিন্দ রেডিও ছিল ভারতীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমগুলির মধ্যে পথিকৃৎ। বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা সার্বভৌম বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে এক যোগে এই প্রতিষ্ঠানের শাখাগুলি পরিচালিত হত। সময়ের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের বহুজাতিক উদ্যোগ সত্যি অভিনব। সুচারু এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গুণ এবং পরিচালন পরিকল্পনা না থাকলে এমন একটি প্রতিষ্ঠান চালনা করা সম্ভব ছিল না। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এই আপাত অসম্ভব কাজটি করেছিলেন তার একান্ত স্বকীয় সাবলীলতায়। তাই আমরা যদি তাকে ভারতীয় বেতারের জনক বলে আখ্যায়িত করি, তবে বোধহয় অত্যুক্তি করা হবে না।
এছাড়াও জনপ্রিয় আজাদ হিন্দ পত্রিকা ইংরাজি ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য ছাপা হত। জার্মানি থেকে উর্দুতে ভাইবন্দ পত্রিকাও প্রকাশ করেছে প্রবাসী ভারতীয়দের চোখের মণি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আজাদ হিন্দ গেজেট, স্বতন্ত্র ভারত পত্রিকা কিংবা ভয়েজ অব ইন্ডিয়া পত্রিকা আজাদ হিন্দ-এর সর্বধিনায়কের মস্তিষ্ক প্রসূত। এই প্রকাশনাগুলির মধ্য দিয়ে এক সর্বকালীন গণনায়কের দুরন্ত সাংবাদিক হৃদয়ের সন্ধান পাওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩০