দোকলাম ভ্যালির অনড় অবস্থা যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে - এমন খবর ইদানিং পশ্চিমা মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। গত ১০ আগষ্ট ডিপ্লোম্যাটের অনলাইন পোর্টালে নীচের আর্টিকেল ছাপা হয়েছে।
Is India's Military Actually Ready for War With China?
বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতির যেসব অবস্থার কথা জানা যায়, আগ্রহী পাঠকদের জন্য পয়েন্ট আকারে সেগুলো উল্লেখ করা হল:
১। ভারতের ক্যাপ্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল গত জুন মাসে ভারতের পার্লামেন্টে ইল-৭৬ হেভি মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট এয়ারপ্লেনের রক্ষনাবেক্ষন, জংগী বিমানের আধুনিকায়ন এবং ভারতের মিজাইল সিসটেমের নির্ভরযোগ্যতা বিষয়ে গুরুতর ত্রুটির কথা উল্লেখ করে।
২। ভারতের সামরিক বাহিনী বলেছে, চীন ও পাকিস্তান, দুই পক্ষের হামলার বিরুদ্ধে একসাথে প্রতিরক্ষার জন্য প্রায় ৭৫০ জংগী বিমানের ৪২ টি স্কোয়াড্রন দরকার। কিন্তু মিগ-২১ -এর মতো পুরানো জেটগুলি (যা ৬০-এর দশক থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে) শীঘ্রই অবসর গ্রহণের কারণে ২০৩২ সালে নাগাদ ভারতের হাতে মাত্র ২২ টি স্কোয়াড্রন থাকবে। ফেব্রুয়ারী ২০১৭ পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের সামরিক বিমানের ৩৯ টি গত চার বছরে ক্রাশ করেছে। তারপর থেকে, আরো দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে দুটি মিগ-২১ বিমান রয়েছে।
৩। ভারতের "আকাশ" নামক ভুমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য মিজাইল সিসটেমের ৩০% নাকি প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারে নাই, নির্ধারিত মানের চেয়ে কম পাল্লা, ধীর গতি এবং ক্রিটিক্যাল ইউনিটের ফেইলুর ছাড়াও কিছু মিজাইলের নজল ফেইল করার কারণে নাকি সেইগুলি মাটি থেকে টেকঅফও করতে পারে নাই।
৪। গতবছর মোদি সরকার ঘোষনা করেছিল, চীন সীমান্তের ছয় যায়গায় "আকাশ" মিজাইল সিসটেম স্থাপন করা হবে। এখন পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যায়, এর একটাও তারা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয় নাই।
৫। গত জুনে ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের জোর গলা বক্তব্য "ভারতের সেনা বাহিনী আড়াইটা ফ্রন্টে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত (চীন-১, পাকিস্তান-১, আভন্তরীন বিচ্ছিন্নতাবাদি গ্রুপ-০.৫) " - যে একটা ফাঁকা বুলি ছিল সেইটা এখন পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে।
৬। ভারতের ক্যাপ্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, ভারতের কাছে ৪০% ক্রিটিক্যাল এমুনেশনের পরিমান এত কম যে মাত্র ১০ দিন সেইগুলি দিয়ে যুদ্ধ করা যাবে।
৭। সম্প্রতি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হাউইটজার কামানের নল নাকি গোলা নিক্ষেপ করার সময় ফেটে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
৮। রাশিয়া, ইউক্রেন, চীনের সাথে ট্যাংক রেস খেলতে গিয়ে ভারতের দুইটা ট্যাংকই নাকি বিকল হয়ে গেছে - এইটাতো এখন পপুলার একটা নিউজ।
৯। শিলিগুরি করিডোর, (যার নিকটবর্তী ডোকলাম ভ্যালিতে চীন-ভারত মুখোমুখি হয়ে আছে ) ভারতের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। সম্প্রতি ইনডিপেনডেন্ট.কো.ইউকে এর সুত্রে জানা যায় চীন যুদ্ধের শুরুর দিকেই জংগী-বিমান এবং কৌশলগত ক্ষেপনাস্ত্রের মাধ্যমে ভারতের মাউন্টেইন ট্রুপসকে প্যারালাইজ করে দেয়ার কথা চিন্তা করছে। উত্তর-পূর্ব সাতটি রাজ্য কয়েকটি রেললাইন, হাইওয়ে এবং পাওয়ার লাইনের মাধ্যমে মূল ভারতীয় ভুখন্ডের সাথে যুক্ত তার সবকয়টিই এই শিলিগুরি করিডোরের কাছাকাছি কয়েকটি নদী অতিক্রম করেছে। চাইনজ মিলিটারির ব্রিজগুলি ধ্বংস করার জন্য এমনকি বিমান বাহিনীও পাঠানোর দরকার নাই, কয়েকটি কৌশলগত মিজাইল দিয়েই নিঁখুত ভাবে চীনারা এই কাজটা করতে পারে। ফলাফল সেভেন সিসটার মূল ভারতীয় ভুখন্ড থেকে লম্বা সময়ের জন্য আলাদা হয়ে যাওয়া, যুদ্ধ কালীন পরিস্থতিতে যা খুবই ভয়াবহ।
১০। ভারত যদি বাংলাদেশের ভুখন্ড ব্যবহার করতে চায়, সেইটাও খুব একটা ফলপ্রসু হবে না। কারণ, স্পাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চীন সেটা সবসময় জানতে পারবে, এবং বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের কিছু ব্রিজ উড়িয়ে দিলে সেইটাও বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও ল্যান্ড রুট না থাকলে ভারত চেষ্টা করবে আকাশ পথে রি-ইনফোর্সমেন্ট পাঠাতে। এখানে সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাড়াবে চাইনিজ বিমান বাহিনীর ফিফথ জেনারেশন স্টেলথ জংগি বিমান। ফলাফল হবে অত অল্প সময়ে "দেখতে পাওয়া যায় না" এমন শত্রুর হাতে বিশাল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি। সেই সাথে ভারতের মাওবাদি সহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠি চোরাগুপ্তা হামলা চালানো আরম্ভ করবে তা তো বলাই বাহুল্য।
১১। অতি পুরাতন সোভিয়েত যুগের বিমান বাহিনী দিয়ে হিমালয় পর্বতমালা অতিক্রম করে চীনের উপর হামলা করতে গেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা আছে। ভারতের বিমান বাহিনীর আরেকটা সীমাবদ্ধতা হল, জংগি বিমানের পাইলট স্বল্পতা। প্রতি ১ টা বিমানের বিপরীতে ভারতের পাইট সংখ্যা ০.৮, মানে ১ এর চেয়ে কম (পাকিস্তান, চিন, যুক্তরাষ্ট্রের পাইলট সংখ্যা বিমান প্রতি ২ এর উপরে)। বিমান মরলে তা দ্রুত পূরণ করা সম্ভব কিন্তু পাইলট মরলে দ্রুত পাইলট ট্রেইন আপ করা সম্ভব না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৫