অন্যদিনের গতানুগতিক পোস্টের থেকে বেরিয়ে আজ আমরা বিশ্লেষণমুলক একটি পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করবো-
সাবমেরিন জিনিসটা বিজ্ঞানের এক অন্যতম অসাধারণ আবিষ্কার এবং বর্তমান যুগের নৌ রণাঙ্গনের বিধাতা বলা যেতে পারে।এটি যেকোন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট। সমরবিদদের মতে "সেনাবাহিনীর আর্টিলারী, বিমানবাহিনীর বোমারু এবং নৌবাহিনীর সাবমেরিন এই তিনটা জিনিস যেকোন যুদ্ধের ফলাফল বদলে দিতে সক্ষম"।
দক্ষিন এশিয়া এলাকাটি বলা যেতে পারে একটি বেশ জটিল এবং যুদ্ধ প্রবণ এলাকা বললেও ভুল হবে না।সম্পুর্ন এশিয়ার মধ্যে পারমানবিক শক্তিধর তিনটি দেশ একসাথে অবস্থান করছে (চীনকেও আমরা গননা করছি)।আর এখানে সামরিক ভারসাম্যহীন এবং পরস্পরের প্রতি প্রতিহিংসা এবং সীমান্তজনিত বিভিন্ন বিরোধ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই। তাই এই এলাকার দেশগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোকে টার্গেট করে নিজেদের সামরিক শক্তি বিকশিত করার দিকে বেশ মনোযোগী।
দক্ষিন এশিয়ায় সামরিক শক্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে চীন, এরপরে ভারত,পাকিস্তান।এই তিনটি দেশ পারমানবিক শক্তিধর দেশ এবং শিল্পখাত সহ অন্যান্য খাতে ব্যাপক উন্নতি করে যাচ্ছে।এরপরে তুলনামূলক কম সামরিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ,মিয়ানমার (দক্ষিন পূর্ব এশিয়াভুক্ত দেশ),শ্রীলংকা,নেপাল,ভুটান,মালদ্বীপ।
মুল প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক......
পারমানবিক শক্তিধর তিনটি দেশ পরস্পর পরস্পরের বিরোধী।ভারতের সাথে চীন,পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব জন্মলগ্ন থেকেই। তারা একে অন্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামরিক শক্তির বিকাশ করে চলেছে।আর ভারত স্বভাবতই ক্ষমতালোভী,স্বার্থপর এবং কতৃত্বপরায়ন দেশ।তারা সবসময়ই তুলনামূলক কম শক্তিধর দেশগুলোকে নিজেদের বশে রাখতে চায়।যদিও বর্তমানে ছোট দেশগুলো এ নিয়ে ভারতের উপর বেশ বিরক্ত।
বাংলাদেশের কথা আমরা চিন্তা করলে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ভারতের জন্য বেশ চিন্তার কারন।বাংলাদেশ পুরো ভারতের এমন এক যায়গায় অবস্থিত যেখানে ভারতের অখন্ডতা রক্ষার কবজ অবস্থিত এবং ভারতের পুর্ববর্তী ৭ টি প্রদেশ (সেভেন সিস্টার) এর মধ্যবর্তী বাধা।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রমাগত সামরিক এবং আর্থসামাজিক উন্নতি ভারত মোটেই ভালো চোখে দেখছে না।কারন ভারতের সবচেয়ে বড় হুমকি এবং প্রবল ক্ষমতাধর চীন বাংলাদেশের পরম বন্ধু দেশ এবং সকল অগ্রযাত্রা এবং উন্নয়নের বিকল্পহীন বন্ধুরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ চীন থেকে ২ টি ট্রেনিং সাবমেরিন (Type-035G Ming Class Submarine) ক্রয় ভারতের গাত্রজ্বালা অনেক বাড়িয়েছে। কারন চীন থেকে সাবমেরিনগুলো কেনা হয়েছে এবং এই সাবমেরিনকে তারা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছে।তাই প্রথম দিকে তারা অনেক ভ্যাটো দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।তাছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের ৯০% মানুষ তীব্র ভারতবিরোধী। ভারত বিনা কারনে সীমান্তে সাধারনত বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা,লুণ্ঠন, ধর্ষনসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও ভারতের তরফ থেকে কোন সদাচার পাওয়া যাচ্ছে না।তাই বর্তমানে সরকারও কিছুটা হলেও নাখোশ।
তবে আশার কথা হলো ট্রেনিং সাবমেরিন দুটি কেনার পর বাংলাদেশ এখন চীন থেকে আরো আধুনিক দুইটি এট্যাক সাবমেরিন কিনতে যাচ্ছে।আমরা এটি নিয়ে মার্চ মাসে একবার পোস্ট করেছিলাম,কিন্তু অনেকেই তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।এমনকি এখনো এটা নিয়ে কথা হয়।যাই হোক কিছু দিন আগে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা (কমোডোর র্যাংকের) নিশ্চিত করেছেন "বাংলাদেশ চীন থেকে আরো ২ টি এট্যাক সাবমেরিন ক্রয় করতে যাচ্ছে"।যা ভারতের গাত্রদাহ আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।সাবমেরিন দুটি চীনের নির্মিত Song Class বা Yung Class সাবমেরিন হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।এসব সাবমেরিনে AIP (Air Independent Pressure) system বিদ্যমান।এর আগে রাশিয়া থেকে ২ টি Kilo Class সাবমেরিন কেনার কথা থাকলেও AIP system না থাকায় তা কেনা হচ্ছে না।
২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বহরে চারটি (৪ টি) সাবমেরিন থাকবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ এর আওতায় নেভির জন্য ৬-৮ টি সাবমেরিন কেনা হবে।
এইসব সাবমেরিন হবে দক্ষিন এশিয়ার গেম চেঞ্জার।এর আগে ভারত বা মিয়ানমার গোপনে আমাদের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করতো,বর্তমানে তা অনেক কমে যাবে।শুধু তাই নয়,নেভির সার্ফেস ফ্লিট, এভিয়েশন উইং, বিমানবাহিনীতে মেরিটাইম স্ট্রাইক স্কোয়াড্রন গঠন,কোস্টগার্ডের শক্তিমাত্রা বৃদ্ধি,কোস্টাল ডিফেন্স সিস্টেম সহ সব রকম আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
Credit: Defence Technology of Ba
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪২