আজ থেকে প্রায় ৪৩০ বছর আগে। সময়টা ১৫৮৬(কম বা বেশি হতে পারে ,ব্যাপারটা নিয়ে এখনোও বিতর্ক ) সাল ।তখন এই ভারতীয় উপমহাদেশের কতৃত্ব ছিল মুঘল সম্রাট আকবরের হাতে । এবং পুরো বাংলা ছিল বিভিন্ন জাতিভেদে বিভক্ত। রাজা আকবর ক্ষমতায় থাকাকালিন জাতিভেদে ভুলাতে গিয়ে চাইলেন যে , এদেশে বসবাসকারি হিন্দু,মুসলিম,ক্রিশ্চিয়ান , বৌদ্ধ ,এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সমস্ত জাতির এবং ধর্মের মানুষকে নিয়ে একটা সমঝোতামুলক সমাজব্যাবস্থা এবং একই ধর্মের অধীনে একটা জাতি তৈরি করার জন্য। এবং তিনি তার জন্য তৈরি করলেন "তৌফিক ই এলাহি" নামক একটা ধর্ম । তত'কালিন সময়ে এই উপামহাদেশের মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি । ফলে বিভিন্ন ধর্ম থেকে বিভিন্ন ধর্মে অর্থাত হিন্দু থেকে মুসলিম এ, মুসলিম থেকে হিন্দুতে, ক্রিশ্চিয়ান,বৌদ্ধ এবং বিদেশি থেকে দেশিতে একেকজনের কৃষ্টি, ধর্মের আচার ,নিয়ম কানুন আবশ্যিকভাবেই অনুপ্রুবেশ করে অযচিত ভাবেই , ফলে সব ধর্মই তার মৌলিকতা হারায় এই উপমহাদেশে । রাজা আকবর, এও চিন্তা করলেন যে , ফসলি জমি থেকে খাজনা এবং ব্যাবসা বানিজ্য ,হালচাষ , এগুলো যাতে সবার সাথে সবার মিলে করতে পারে তার জন্য একটি পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার তৈরি করার ।
তিনি তখন উপমহাদেশে আরবি ,ইংরেজি ভাষায় ব্যাবহৃত দিনলিপি সিস্টেম পরিবর্তন করে চালু করেন "পহেলা বৈশাখের" বর্তমান বাংলা ক্যালেন্ডার ।
রাজা আকবর তখন হিন্দু(ব্রাক্ষ্মন) পন্ডিত এবং তার রাজ্যের জ্ঞানী ব্যাক্তিদের নিয়ে বৈশাখ থেকে চৈত্র এই বার মাসের নামকরনে বাংলা ক্যালেন্ডার চালু করেন ।
মজার কথা হল এই সময়ে ,মাসের নামের সাথে তিনি মাসের প্রতিটা দিনের নামও করেন বিভিন্ন নামে, এবং এই নামগুলো আসে বিভিন্ন আরাকান শব্দগুচ্ছ থেকে । কিন্তু সাধারন মানুষের পক্ষে তা এই ৩১/৩০ দিনের নাম মনে রাখা সম্ভব না দেখে, পরে তারিখের পদ্ধতিই চালু করেন।
কিন্তু তার এই সিস্টেমের সাথে আমাদের বর্তমান নাচানাচির জন্য কিছু কিন্তু রয়েই যায় ।.............................
কিন্তু-১ঃ এখানে কথা হল ,রাজা আকবর ছিলেন আরাকান বংশোদ্ভুত , মঙ্গল দেশিয় রাজা । যার সাথে এদেশিয় বাঙালিদের রক্ত/কৃষ্টি কোনদিক দিয়েই ছিটেফোটা সম্পর্ক ও নাই । তবে একজন অবাঙালি কিভাবে বাঙালিত্বের জন্ম দেয় ,বাঙালিত্বের এই জন্মতেইতো ভন্ডামি ছিল ।আরেকজনের চাপিয়ে দেয়া নীত কিভাবে বাঙালিত্বের মৌলিক কালচার হয় ??????????
তবে আসলেই কি পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রকৃত সম্পদ নাকি বিদেশিদের কাছ থেকে হাত পেতে নেওয়া ভিক্ষা ?
আপনার বিবেক কি জবাব দেয়?
কিন্তু-২ঃ পহেলা বৈশাখের মেলা দুই বাংলায় পালিত হত অনেক আগে থেকেই ।কিন্তু বাংলাদেশের রমনার বটমুলে যে,পহেলা বৈশাখের মেলা পালন করা হয়ে থাকে ,সেই মেলার আয়োজনের সুচনা হয় ১৯৬৭ সাল থেকে ।এর সুচনা করে, বাংলাদেশের স্বঘোষিত নাস্তিক , ওয়াহিদুল হক এবং সানজিদা খাতুন ।
তারা দুজন ই ছিল ,ছায়ানট এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ।তাদের নিজস্ব চুলকানি স্বরুপ তারা ছায়ানট এর সাথে মিলিত হয়ে এই মেকি পহেলা বৈশাখের পালনের ভন্ডামি শুরু করে ।
উলেখ্য যে ,এই নাস্তিকদ্বয় দুজনেই সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করলেও ,তারা মুসলিম এর কালচার পালন করেই নাস্তিকতা করে গেছে ।
তাদের মৃত্যুর পরে ,তাদের লাশকে কবর কিনবা চন্দন সমেত আগুনে না পুরিয়ে হাসপাতালে দান করে দেওয়া হয় ।এবং তাদের লাশের সামনে কোরআন তিলাওয়াত না করে বাদ্যযন্ত্র সহকারে গাওয়া হয় “ রবীন্দ্র সংগীত “
কিন্তু-৩ঃআচ্ছা ,রবীন্দ্রনাথ এর গান তাদের লাশের সামনে গাওয়া হল ,যাতে তারা বাঙালিয়ানার ষোল কলা পুর্ন করতে পারে ।কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সময় ত তার লাশের সৎকার করা হয়েছিল চন্দন ও আগুনের স্পর্শে । তবে তার বেলায় কি বাঙালিয়ানা ষোল কলা পুর্ন হয়েছে??
ব্যাপারটা কি পুরটাই ভাউতাবাজি নয় ?? এই ধরনের বাঙালিত্ব কি তবে মেকি নয় ?
কিন্তু-৪ঃ কথায় কথায় অনেকেই বলেন রবীন্দ্রনাথ হলেন বাঙালিত্বের প্রফেট ।বাঙালিত্ব শিখতে হলে শিখতে হবে শাড়ি
পরা , কপালে টীপ পরা ,শিখতে হবে পাঞ্জাবি পরা, শিখতে হবে রবীন্দ্রনাথকে ।আচ্ছাএখন কথা হল এই বাঙালিয় নামের এই সমস্ত জিনিস গুলো কি আদৌ বাঙালিদের পুরোপুরি মৌলিক জিনিস ?
চলেন একটু জানার চেষ্টা করি ।
প্রথমে আসি শাড়ি প্রসঙ্গে
==============
শাড়ির উতপত্তি জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সুদুর অতীতে ,২৮০০ থেকে ১৮০০ খ্রিষ্টপুর্বে । অর্থাৎ সভ্যাতার প্রায় শুরুতে । ভারতবর্ষীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের মাঝে সেই সময়ে শাড়ির প্রচলন খুজে পাওয়া যায়।তখন পুরোহিতরা যে ধুতি ব্যাবহার করত ,বলা হয়ে হয়ে থাকে সেখান থেকেই শাড়ির প্রচলন শুরু হয় ।
# অন্য আরেকটি মতবাদে বলা হয়ে থাকে যে,ভারতে কেরেলা প্রদেশে (অর্থাৎ নন বাঙালি স্থান ) প্রদেশে ব্যাবহৃত দুই প্রস্থের পোষাক “ মান্দাম নারিয়াথাম” হতে শাড়ীর উৎপত্তি । এছারা, এই শারির মিল পাওয়া যায় আরো কয়েকটি নন বাঙালি ভারতীয় জায়গা থেকে ,এমনকি উতপত্তিও মনে করা হয়ে থাকে সেখান থেকে ।
চোলি, উত্তরিয়া, স্তান্নাপাতা, কুরপুশিকা, প্রভৃতি পোষাক ব্লাউজের মত করে পরা হত অনেক স্থানে । কিন্তু পুর্ন ব্লাউজ ছিলনা । পরবর্তিতে ১৯ শতকে আধুনিক জ্ঞানদানন্দিনি অনেকটাই বৃটিশদের অনুকরনে ব্লাউজের প্রথাটি চালু করেন । শাড়ী পরার সঙ্গে আরেকটি বিষয় চলে আসে ,সেটি হল পেটিকোটের ব্যাপার ।
এই পেটীকোটের প্রচলন হয় ভীনদেশি অবাঙালি মুসলিমদের হাত ধরে ।
অর্থাৎ এই শাড়ি পরার ট্র্যাডিশনটি কখনোই মৌলিক ভাবেই, বাঙালির নিজস্বতা নয় ,সেটা কিছুটা হলেও অনুধাবন যোগ্য ।
# এবার একটি chilli minded যুক্তি দেই , আচ্ছা আমরা যে এই টীপ পরাকে বাঙালি ট্র্যাডিশন বানিয়ে ফেলেছি, কিন্তু ব্যাপারটা তো সম্পুর্ন
ভাবেই ইংরেজ কেমিস্টদের অবদান ।ওরা কত কষ্ট করেই না আপনারেই টীপ লিপস্টিক এর ফর্মুলা তৈরি করেছে । ওদের আগে কি বাঙালি
নারীরা আদৌ এই প্রসাধনি ব্যাবহার করত ???
অর্থাত এক্ষেত্রেও পরনিরভরশীলতা !!!!!!!
এবার আসি পাঞ্জাবি প্রসঙ্গে
================
এ ব্যাপারটীও বাঙ্গালির নিজস্বতা নয় । হিন্দুরা ধুতি ,আর মুসলিমরা পরত জোব্বা (অনেকটা আল্লাখাল্লা প্রকৃতির) ।আর পাঞ্জাবির ব্যাপারটি
আসে মুঘোলদের কাছ থেকেই ,যেই মুঘোলরাই আরাকান বংশোদ্ভুত এবং জাতে মঙ্গলীয় ।
রবিন্দ্রনাথ ও বাঙ্গালিত্বের প্রফেটঃ
============
প্রথম কথা হল রবিন্দ্রনাথ কি প্রথম বাঙালি না তার হাত ধরেই বাঙ্গালিত্বের শুরু হয়েছে । রবিন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে অনেক বড় মাপের মানুষ
। কিন্তু যে কথাটি কোন বিখ্যাত ব্যাক্তিকে অতিরঞ্জন করতে গিয়ে ,উলটা বানোয়াট কাহিনি তৈরি করা হয় ,সেটি দিয়ে নিঃসন্দেহ তাকে
অপমান ই করা হয় করা হয় । রবিন্দ্রনাথ ও তো পশ্চিমাদের অনুসরন করে গেছেন ,ঐ লন্ডনে আইন পরার সময় ,এবং এটাই বাস্তব ।
আচ্ছা বাঙ্গালিত্বের প্রফেট বলে খ্যাত কবিগুরু নিজে কার কাছে বাঙ্গালিত্ব শিখেছেন? কারন তিনি ত আর এই বাঙালি জাত টাকেই প্রথম তুলে ধরে আনেননি ।
কিন্তু-৫ঃ আচ্ছা, একজন বিদেশি আরকান কেন তার চাপিয়ে দেয়া ইচ্ছায় বাঙালি পহেলা বৈশাখের সুচনা করবেন ? তবে আমরা যখন বর্তমান বিদেশিদের থার্স্টি ফার্স্ট নাইত, হ্যাপি নিউ ইয়ার পালন করি তখন সমস্যা কোথায় ? কারন পহেলা বৈশাখ ও বিদেশি আর এগুলো ত বিদেশি । আর বাঙালি ভাষায় ত অনেক বিদেশি শব্দের ব্যাবহার আছে । তবে এখন দু একটা বিদেশি শব্দ আসলে সম্পস্যা কি ?
# সমস্যা অবশ্যই আছে । কালের বিবর্তনে পৃথিবির প্রত্যেকটা জাতিই তাই মৌলিকতা হারিয়েছে এটা সত্য , কিন্তু অন্য জাতি থেকে কিছুটা নিয়ে তারা সমৃদ্ধ হয়েছে ।
কিন্তু বাঙ্গালির বেলায় ত পুরো ব্যাপারটাই হয়েছে সম্পুর্ন ভাবে বিদেশিদের ভিক্ষাতে ।
তবে এমন বাঙ্গালিত্ব কি আসলেই মেকি নয় !!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৫১