অসমাপ্ত-১:
-ভাইয়া আজকে ইংরেজি পড়ান
-কিন্তু আপু আমি তো তোমাকে ফিজিক্স পরাই.. হঠাৎ আজকে ইংরেজি কেন?
-না ভাইয়া, আপনি ফিজিক্স পড়াইতে পড়াইতে একদম জর পদার্থের মত হয়ে গেছেন, আপনার অনুভুতির প্রাবল্য শূন্যে নেমে গেছে।
-অনুভুতির প্রাবল্য? এইটা আবার কি আপু?
-না ভাইয়া, আসলে আপনাকে দেখতে কিউট লাগলেও কিন্তু মনে হয় না, আপনি এতটা গম্ভীর!
কথাটা বলেই সুপ্তি মেয়েটা একেবারে ফিক করে হাসি দিয়ে উঠল...
আমি একদম রাগ করেই বলে দিলাম..
-দেখ সুপ্তি , তুমি ইন্টার পড়ুয়া ছাত্রী,
তোমার এই দাঁত ভাঙ্গা কঠিন ইংরেজি অন্তত আমি পড়াতে পারবোনা।
-কি বলেন ভাইয়া, ইঞ্জিনিয়ারিং পরেন আর আমাকে ইংরেজি পরাতে পারবেন না! এই সেদিন ই না বললেন আপনাদের বৈগুলাতে একলাইন ও বাংলা নেই.. সব ই ইংরেজিতে...
আমি যতদুর সুপ্তিকে চিনি, ও হারার কিনবা ছাড়ার মত মেয়ে না, আর আজকে আমাকে খুব ভালভাবেই ধরেছে...
-ঠিক আছে ইংরেজি কি পরাবো বল।?
-ভয়েস চেঞ্জ! একদম ই বুঝিনা..
-ওকে...
-ভাইয়া এই এক্সাম্পল টা সলভ করে দেন,"I wanT you in my heart"
আমি শুধু ভাবলাম, এই টিউশনিটাও একদম মাসের শেষে এসে ছেড়ে দিতে হল,এই মাসটাউ আবার আম্মার কাছে টাকা চাইতে হবে, নয়ত ডিপার্টমেন্ট থেকে কক্সবাজার ট্যুরটা মিস হয়ে যাবে।
আর আম্মাও আছে তখন হেঁসে হেঁসে বলবে, খুবতো বলেছিলি বাপের টাকা আর লাগবেনা।
ভাবতে ভাবতেই আবার বাস্তবে ফিরে আসলাম, মনে মনে বললাম.. শালা, অভাগা যেদিকে যায়, সাগরও ও শুকাইয়া যায়...
-আমি কিছু না বলে,কলমটা নিয়ে ওর খাতাতে"sorry to say, i cant teach you from the next day" লিখে দরজা দিয়ে বের হয়ে চলে আসার সময় শুনতে পেলাম, সুপ্তি উঁচুস্বরে বলছে...
"ভাইয়া, যাবেন না প্লিজ, আমি আর কখনো আপনাকে ইংরেজি পরাতে বলবনা...ভাইয়া...
দরজা পেরিয়ে রাস্তায় বেরোনোর সাথে সাথেই মনে হল কাজটা কি আসলে ঠিক হল? অন্ততপক্ষে এমন হুটহাট না করে মেয়েটাকে বোঝানো তোযেত। না জানি মেয়েটা কি মনে করছে নিজেকে, আসলে এই বয়সটায় নাকি মেয়েরা এরকম ঈ হয়। অনেকটা সপ্নচারি আর আবেগময়।
ধুর ছাই আমার এই সাত -পাচ ভেবে কোন কাজ নাই। যা করেছি বেশ করেছি, ঠিক করেছি। আসার সময় একটা থাপ্পড় মারা কর্তব্য সমতুল্য ছিল,,,
অই রিকশা... ডাক দিতেই একটা রিকশা আসল।
-মামা, শংকর যাবেন?
-উঠেন, তয় ভাড়া কিন্তু ৮০ টাকা!
-মানে? ২৫ টাকার ভাড়া তুমি ৮০ টাকা কিভাবে চাও,? সাইন্স ল্যাব থেকে শংকর এই টুকুন মাত্র রাস্তা।
-উঠেন ৩০ টাকা দিয়েন তাহলে,
রিকশায় উঠে এবার আমার খারাপ লাগতে শুরু করল টিউশনিরর ব্যাপারটা নিয়া,, আর একটা দিন পরেই ত টাকাটা পেয়ে যেতাম,,ধুর সালার,
ভাগ্যটাই খারাপ!
হঠাত পকেটে থাকা নকিয়া ১১০০ মোবাইলটা বেজে উঠল,
- কি খবর, তুমি নাকি আর আসবেনা, সুপ্তিকে পড়াতে?
-না আসলে আন্টি, আমি আর সময় করে উঠতে পারছিনা,
-ঠিক আছে, তাহলে বাবা কালকে এসে তোমার টাকাটা নিয়ে যেও,
সুপ্তির মা মানুষটা আসলেই ভাল,,
কিন্তু বাপটা একটা বজ্জাতের হাড্ডি,, সারাদিন পান খায় আর কথা বলার সময় সামনের মানুষগগুলোকে পানের ছিপ্টি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়, আমার মনে হয় বেটা একটা জন্মগত খাচ্চড়,,,
এই ভদ্র মহিলাটা যে কিভাবে এই বিশালপেটওয়ালার সাথে সংসার করে যাচ্ছেন,,
তবে আর যাই হোক শেষ পর্যন্ত টাকাটা পেলেই হয়,,,
রিকশাচালক বলল মামা, ভাড়া কেন এত বেশি চাইসি জানেন?
_কেন?
-আসলে মামা দুর্নীতি করতে ইচ্ছা হয় মাঝেমাঝে,,
বাংলাদেশএর মানুষ গুলো সত্যি ঈ এরকম, সবাই সুযোগের অভাবে সত.....
রুমে ঢুকতেই আবার নিশির ফোন,,
কই তুমি?
-এখানে? রুমে
কি কর?
-ঘাস খাই! খাবা? তবে লবন এক্টু কম হইসে,,
তুমি খেতে পারলে আমি পারবনা কেন? যদি তুমি সুযোগ দাও আর কি,
এই নিশি মেয়েটাই কেমন জানি, যাই বলি রাগ করেনা, তবে কাঁদতে পারে খুব, যেটা আমার একেবারেই অসহ্য, অল্পতে কান্নাকাটি করা ।
আসলেই আজকে তখন ঘাস খাইতেসিলাম, বুয়া লবন ছাড়াই লাউ শাক রান্না করে গিয়ছে,,তো সেগুলা ঘাস ই তো হবে,
কি ব্যাপার কথা বলছনা কেন, নিশি বলে উঠল,থাক তুমি, বাই।
যাক গিয়া, এত ভয় পাবার কিছু নাই। এটা পার্মানেন্ট যাবেনা,,,
(#চলবে...