অফিস থেকে নিচে নামলাম, এখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে, দুপুরে এখনো খাওয়া হয়নি। ক্ষুধায় পেট চো-চো করছে। অফিসে নতুন দায়িত্ব পাবার পর থেকে এমন দুরাবস্থা। বেতন তো কিছু বাড়েনি, বাড়ার মধ্যে বেড়েছে শুধু কাজের চাপ। যাইহোক, দুপুরে সাধারণত আমি অফিসের পাশেই ১টা ছোট রেস্টুরেন্টে খাই। দোকানের মালিক সবসময় রাগী রাগী চেহারা নিয়ে থাকে দেখে আমি তার নাম দিয়েছি "এংরী বার্ড"। আজ অবশ্য আমি নিজেই তার চে বড় "এংরী বার্ড"। প্রতিদিন এই দুপুর তিনটা চারটার দিকে খাওয়াটা এখন সহ্যের উপরে উঠে যাচ্ছে। টেবিলে বসে গরুর মাংশ, ভাত আর ডাল অর্ডার দিলাম। বেয়ারা এসে দিয়ে গেল একটু পর। খেতে শুরু করতে গিয়ে খেয়াল হলো, আহ!, হাত'ই তো ধোয়া হয়নি।
হাত ধুয়ে এসে দেখি, আরেহ! অবাক কান্ড, নোংরা কাপড় পরা একজন, সম্ভবত কোনো রিক্সাওয়ালা আমার টেবিলে বসে আমার খাবার খাওয়া শুরু করেছে। সাথে সাথে রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেল। মনে হল গিয়ে ঘাড় ধরে উঠিয়ে দেই। যাইহোক, আমি কর্পোরেট অফিসের একজন ফিটফাট মানুষ, এক প্লেট খাবারের জন্যে চিল্লা-পাল্লা করাটা আমার জন্যে শোভা পায় না। আবার নতুন করে আবার খাবার অর্ডার দিব সেটাও করতে ইচ্ছা করলো না, কেমন একটা বিব্রতকর অবস্থা। এখান থেকে ঝামেলা ছাড়া বের হতে পারলেই খুশি। আমি তার সামনের চেয়ারে বসে তার দিকে চেয়ে একটা সুন্দর হাসি দিলাম। সেও দেখি দেখা-দেখি আমার দিকে চেয়ে একটা সুন্দর হাসি দিল। কি করব! আমিও একটা প্লেট নিয়ে অবশিষ্ট ভাত টুকু তাতে নিলাম। সে আমার দিকে আরেকবার তাকালো, তারপর মাংসের বাটিটা আমার দিকে এগিয়ে দিল, দেখলাম এখনো ৩-৪ টুকরা মাংশ আছে। সেটা নিলাম, তারপর আমিও একটু ডাল নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিলাম। এই ভাবে এক জনের খাবার ভাগাভাগি করে শেষ হলো।
সে খাবার শেষ করে প্লেটেই হাত ধুয়ে গলায় ঝুলানো গামছা তে হাত মুছে কিছু না বলেই উঠে দাড়ালো। ব্যাটা আনসোশ্যাল অকৃতজ্ঞ অশিক্ষিত! যাইহোক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমি উঠে বেসিনে গেলাম হাত ধোয়ার জন্যে। হাত ধুয়ে এসে অবিস্কার করলাম, যে টেবিলে বসেছিলাম তার ঠিক পেছনের টেবিলের চেয়ারে আমার ব্লেজারটা ঝুলানো আর টেবিলে পড়ে আছে আমার অর্ডার করা খাবার গুলো, কেউ ছুঁঁয়েও দেখেনি |