মাসাইদের দেশে - পর্ব ১
মাসাইদের দেশে - পর্ব ২
তখন ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। এরই মধ্যে ঘরের ছেলে বারাক ওবামা হোয়াইট হাউজ জয় করেছেন। পিতৃভূমি কেনিয়া তাই উৎসবমুখর। জানতে পারলাম ওবামার দাদী এখনো তাদের গ্রাম কোগেলোতে বাস করেন৷ উৎসবের আমেজ সেই কোগেলো থেকে এই নাইরোবি পর্যন্ত। আর তা টের পাওয়া গেল গাড়িতে গাড়িতে ওবামার ছবি দেখে। রাস্তায় হকাররা বিক্রি করছে ওবামার ছবি, আমেরিকার পতাকা। আমার কেনিয়ান কলিগদের মুখেও ওবামা বন্দনা। তাদের প্রত্যাশা একটাই—নতুন প্রেসিডেন্ট কেনিয়ার দিকে মুখ তুলে তাকাবেন৷
মাসাই মারায় গিয়েছি মাসখানেক হয়ে গেল। নতুন কোথাও যাওয়া দরকার। শুনলাম কেনিয়া নাকি পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ ফ্লেমিংগো-এর আবাসস্থল, আর তার বেশিরভাগই লেক বগোরিয়ার বাসিন্দা। দ্বিতীয় কোন চিন্তা করতে হলে না, আমাদের পরবর্তী গন্তব্য লেক বগোরিয়া।
১৪ ফেব্রুয়ারী ২০০৯, শনিবার। ভ্যালেন্টাইন্স ডে, তাই না? তাতে কি, আমাদের কারো সাথে তো আর ভ্যালেন্টাইন নাই। আগের সেই আটজনই রওনা দিলাম লেক বগোরিয়ার উদ্দেশ্যে। পথে আবার সেই গ্রেট রিফ্ট ভ্যালি—পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপত্যকা।
ভ্যালির সুবিশাল পর্বতশ্রেণীর গা ঘেঁষা প্রশস্ত রাস্তা ধরে যাচ্ছি আমরা। জানা যায়, এটি তৈরি করা হয় ব্রিটিশদের হাতে সেসময়কার ইতালীয় যুদ্ধবন্দিদের দিয়ে। বন্দিদের ধরে ধরে আনা হত এই বনজঙ্গল পাহাড় কেটে সড়ক বানাবার জন্য।
ঝকঝকে এই সড়ক পার হবার সময় মনে হল সেই যুদ্ধবন্দিদের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেলাম!
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছাই নাকুরু শহরে। এ শহরকে একসময় পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে পরিষ্কার শহর বলা হতো। সেটা শহরে ঢোকা মাত্রই টের পেলাম। লেক নাকুরু ঘিরে গড়ে উঠেছে এই ছিমছাম গোছানো শহর। নাকুরু হল নাইরোবি আর লেক বগোরিয়ার মাঝ বরাবর। আমাদের আরো ২ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে হবে।
বগোরিয়া লেকের প্রবেশপথেই গুরুগম্ভীর সতর্কবাণী: “Visitors view hot springs at their own risk- Be aware hot water, slippery, and sinking grounds.” আমরা কেউ পাত্তা দিলাম না; আসলে ভয় পাবার কিছু নাই, একটু সাবধান হলেই হলো। ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই ক্যামেরার শাটার পড়ল ফটাফট। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য—হাজার হাজার ফ্লেমিংগো লেকে সৃষ্টি করেছে এক গোলাপি আভা।
ফ্লেমিংগোর মেলা
লেকের মিঠা পানি ফ্লেমিংগোসহ আরো নানা জাতের পাখি আকৃষ্ট করে। ১৮৮৫ সালে আর্চবিশপ জেমস হ্যানিংটন এই লেকটি আবিষ্কার করেন এবং একে আফ্রিকার সেরা দর্শনীয় স্থান বলে অভিহিত করেন।
লেকের ধারে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির পটভূমিতে এরকম রয়েছে শত শত হট স্প্রিং বা গরম পানির ফোয়ারা। এগুলোর উত্তাপ এতোই বেশি যে ফোয়ারার ধারেকাছে ঘেঁষা প্রায় অসম্ভব। বেশ কিছু মৃত ফ্লেমিংগো পড়ে থাকতে দেখলাম সেগুলোর আশেপাশে। কথিত আছে এই পানির রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে। সেজন্যই হয়ত কয়েকজনকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা গেলো।
ফুটন্ত হট স্প্রিং
সবগুলো ছবি আমার ক্যানন PowerShot A460 দিয়ে তোলা, তাই অতীব নিম্নমানের। ইউটিউবে এই লেক নিয়ে বিবিসির অসাধারণ একটা ভিডিও পেলাম। ভিডিওটি এখানে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।