somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরু ও পাগল ছেলেটা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মঞ্চের সামনে লোকজন এসে বসে আছে। পর্দা ওঠে নি। মাইক্রোফোন টেস্ট হচ্ছে। তবলচি টুং টাং করে শব্দ করছে। গিটারিস্ট তার টিউন করেছে। এত বড় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে একটু নার্ভাস হওয়ারই কথা। নিরু দেখতে ছোট খাট মেয়ে। মায়ের শাড়ী পড়েছে। সাজ সজ্জার সঙ্গে মিল রেখে কপালে লাল টিপ। প্রবোধ চৌধুরীর ময়ূরী কবিতা আবৃত্তি করার কথা। সঙ্গে নজরুল সঙ্গীত।প্রস্তুতি যথেষ্ট তবুও ভয়ে গলা চেপে আসছিল।একটা ছেলে এসে আদা চা দিয়ে গেছে। একটু দুরে আরও কয়েকজন পারফর্মার তাদের অংশ ঝালাই করে নিচ্ছে। নিরু বার বার পথের দিকে চাইছিল। টিএসসির দক্ষিণ বারান্দায় লোক কম হয়। সে ভাবল শ্যামা আসছে না কেন?

ইউনিভার্সিটি জীবনের প্রথম প্রোগ্রাম। প্রিয় বন্ধুরা হৈ চৈ করে আসবে। তার বেস্ট ফ্রেণ্ড মানে শ্যামা। আধা ঘণ্টা বাকি - শ্যামার কোন খোঁজ নেই। নিরু অবশ্য শ্যামার মোবাইলে কল করতে পারতো। কিন্তু করবে না। শ্যামা কি অফিস করতে আসবে যে হাজিরা দিলেই হল? অবশ্য দেরী হওয়ার কারণটা বুঝতে নিরুর কষ্ট হয় না।

শ্যামা ডুবে গেছে। চশমা পরা একটা ছেলের সঙ্গে দু’দিন তাকে দেখেছে । দু’জন হি হি করে হাসছিল রিকশায় - তাও দেখে ফেলেছে। মেয়েটা আগে এমন ছিল না। ও নিরুর জন্য জীবন দিয়ে দিত। টিভির সিরিয়াল থেকে নখ কাটা সব কিছুই দুজন দুজন কে শেয়ার করে। অথচ গত কিছুদিন ধরে দেখছে সে ঘটনাগুলো লুকোচ্ছে। ফোন করলে বলে, পরে কলব্যাক করি, ঠিক আছে? কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে সিমেন্টের বেদীতে একদিন দু’জনকে বসে থাকতে দেখেছে। যেন ওদের জন্ম ওখানেই, বড় হয়েছে ওই জাগাতেই।
নিরু রেগে গিয়ে কবিতার শেষ লাইনটা বেশ জোরেই তাড়া দেয়। আবার অভিমানের স্টেশনে থামে। আচ্ছা ভালবাসা জিনিসটা কি এমনই? স্বার্থপর? স্পষ্ট বুঝতে পেল সে ঈর্ষা কাতর। হয়তো তাকে কেউ ভালবাসে না বলে এমন করছে। সে নিজেকে বলল,..ধুর!

লোকজন বাড়ছে। ফাইনাল ইয়ারের একজন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছে। সে বলে গেল পনের মিনিট বাকি। এমন সময় পিছন থেকে শ্যামা বলে উঠলো,
“কিরে! ক্লোজআপ নম্বর ওয়ান, তোকে লাগছে তো দীপিকার মতো। হায় আল্লা! কী দারুণ শাড়ী! চুলে ফুলও!? কাঁপছিস যে?”

নিরু হাসল না। সে শ্যামাকে জানে। চালু, অজুহাতের ঢিপি। ঢং করে দেরী হওয়াটা ঢাকছে। শ্যামার পাশে চশমাটাওয়ালাটা একই চীজ, যদিও বোকা বোকা হাসছে। ওর সম্বন্ধে জেনেছে দু’দিন আগে। ওর পিছনে অপরিচিত আর একটা ছেলে। পরনে জিন্স, টি শার্ট। লম্বা ছিপ ছিপে । চুল গুলো ছোট করে ছাঁটা। নিরুর ইদানীং সবাইকে খুব লম্বা লাগে। হয়তো নিজের জন্যই। দু তিন ইঞ্চি লম্বা হলে তাকে কতই না ভাল দেখাতো।

ছেলেটি নিরুর চোখে একটানা তাকিয়ে থাকলো। কালো তীক্ষ্ণ চাহনি। চোখ নামাল না। যেন নিরুর সঙ্গে চোখে উইঙ্ক ব্লিঙ্ক খেলবে। নিরুতো মফস্বলে বড় হয় নি। এমন অতিস্মার্ট ছেলে দেখেছে পথে ঘাটে, বিয়ের অনুষ্ঠানে। এক ধরনের রক্ষণশীল মেয়ে সে। আর লম্বা ছেলেগুলো বোধ হয় এমনই হয়। ছেলেটা প্রথমেই বলল,
“যাক, বৈশাখী অলরাউন্ডারকে পেয়ে গেলাম। কবিতা, গান দুটোই হচ্ছে”
নিরু চটে যায়। এগুলো কি? প্রথম দেখাতে এমন টিজ করার মানে কি?

শ্যামা মিট মিট করে হেসে বলল, “আদনান! চুপ কর তো! ।ওর অনুষ্ঠানটা মাটি করিস না।”

ছেলেটা হাল থামল না। আবার চোখে চোখ পড়তেই নিরু চোখ নামিয়ে নিলো। পলকের লাগামটা হাত ছাড়া হতেই ছেলেটা গম্ভীর গলায় বলল,
“কোন কবিতা পড়ছ?”
“প্রবোধ চৌধুরীর ময়ূরী”। শুনে ছেলেটা বলল,
“এটা? ..

উত্তমাশা অন্তরীপ
পাড়ি দিয়ে আশার জলস্রোত, প্রদীপ হাতে আমি নারী
জ্বলে আছে, তোমাকে ভালবেসে – আমাকে বলেছিলে অন্ধকারে পেখম ময়ূর
তুমি তো এসব ভুলেই থাক? ভুলে যাও কুয়াশা কেটে গেলে”


“হ্যাঁ, এটাই”, নিরু একটু অবাকই হল। তার মানে ছেলেটা কবিতা পড়ে?
ছেলেটা হতাশ করে বলল,
“বৈশাখী অনুষ্ঠানে এসব প্যান প্যান কবিতা..পাবলিক খাবে?”

নিরু ভয়ঙ্কর ক্ষেপে গেল! গাল লাল হয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠান নষ্ট হবে ভেবে নিজেকে সামলে বলল, “কবিতাটা মোটেও প্যান প্যান না”।

কিন্তু ছেলেটা কেন এসব বলছে? ওর কি সেন্স নেই একদম? সে কি তাকে রাগাতে পছন্দ করছে? মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এ এক ধরনের অদ্ভুত কৌশল।

শ্যামার প্রেমিক ঘাড় ঘুরিয়ে সবুজ ঘাস দেখছে। শ্যামা যেমন উড়নচণ্ডী সে তুলনায় তাকে ভদ্রই মনে হচ্ছে । স্টেজ থেকে তক্ষুনি নিরুকে ডেকে পাঠাল।

নিরু মঞ্চে উঠলো। সবাই দেখছে একটা নতুন মেয়ে কি অসাধারণ দরদ দিয়ে কবিতাটা আবৃত্তি করছে। কিন্তু নিরুর মনে হচ্ছিল কেউ এটা শুনছে না। কবিতা শেষে হাত তালিতে সে আশ্বস্থ। তার গানটাও ভাল হল,

আমার নয়নে নয়ন রাখি
পান করিতে চাহ কোন অমিয়
আছে এ আঁখিতে উষ্ণ আঁখি জল
মধুর সুধা নাই পরান প্রিয়


সে অবাক হল গানটা গাইতে গিয়ে আদনানের কথা মনে হচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে? মঞ্চ থেকে সফল প্রোগ্রাম করে একটা ফুরফুরে প্রজাপতির মতো নেমে এসে দেখল ওরা কেউ নেই। শুধু শ্যামা বসে আছে।

নিরু যেন প্রতিশোধের নেশায় আদনানকে খুঁজছিল। হতাশ হল। শ্যামা মুচকি হেসে নিরুর মন বুঝতে চেয়ে বলল, “পলিন চলে গেছে। আর আদনান থাকতে চাইল। একটা ফোন পেয়ে চলে গেছে। আদনান কিন্তু তোর গানের প্রশংসা করেছে। বেচারা কথা বেশী বলে। কিন্তু কথা হলে বুঝতি মনটা সরল। ওর তিনটা বোন। বিয়ে হয় না। পিতৃহীন পুরো সংসার টিউশনি করে চালায়। কিন্তু কখনও এসব নিয়ে হা হুতাশ করবে না, বরং সব সময়ই ফান করবে।”

নিরু বিশ্বাসপ্রবণ মেয়ে। শ্যামার কথায় মুহূর্তে তার রাগ পানি হয়ে গেল।
অবশ্য আদনানের সঙ্গে সেই একমাত্র দেখা। নিরুর ক্লাস শুরু হলে হঠাৎ করেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়।

*
মাস ছয়েক পর। নিরু সেদিন এলিফেন্ট রোড থেকে সিটি বাসে ডিওএইচএস যাচ্ছিল। পাশের সিট খালি। আদনান বাসে উঠেই তাকে চিনতে পেরে পাশেরটা খালি সিটে ধপ করে বসে পড়ল
- “নিরু, তাই না? আমাকে চিনতে পার নি?”
-“হম্ম” নিরু মনে মনে বলল, “নামটা মনে রেখেছে দেখছি”
-“তোমাকে বলা হয় নি। আমি কিন্তু পাগল .. কী বলতে কি বলি সেটা সিরিয়াস ভাবে ধরো না। সেদিন একটু হাইপেই ছিলাম।”
-“না না, দেটস ওকে। কেমন যাচ্ছে?“
-“ভাল না। রুবিকন টিউশনি সেন্টারে যাচ্ছি শুক্রাবাদে। কারেন্ট টিউশনিটা ছেড়ে দিচ্ছি”
-“কেন? সমস্যা” একটু অনধিকার চর্চার মতো বলে নিরু বলল। ছেলেটার শুকিয়ে গেছে কয় মাসে। লম্বা দেখাচ্ছে আরও। গালের হাড় ভেসে উঠছে। চেহারায় ক্লান্তি।
-“কি করে বলি, বড় লোকের আদুরে কন্যাকে পড়িয়ে দিন যেত। ও লেভেলের। এমন গায়ে পড়া মেয়ে যে .....এসব ইঁচড়ে পাকাদের নিয়ে মহা সমস্যা”

আদনানের সমস্যাটা শুনে নিরুর হাসি পেল। কেউ এভাবে ধুম করে তার ছাত্রীর সমস্যা বলতে পারে?।আদনান পরের স্টপেজে নামার আগে বলল, তোমার ফোন নম্বর দেবে? যোগাযোগ থাকতে পারে তাহলে।

নিরু ঠিক বুঝতে পারছিল না। সে মিথ্যে করে বলল, আমার ফোনটা পালটাবো তো, এই নম্বর দিয়েও লাভ নেই। বরং শ্যামাকে বললেই হবে। আদনান বিন্দু মাত্র অপমানিত না হয়ে বলল, ঠিক আছে, আমার নম্বরটা দেই। ০১৭১..... তোমার ফোন ঠিক হলে মিসকল দিও।”

*
রাতে মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। নিরু অবেলায় ঘুমিয়ে ছিল। উঠে জানালার একটা কপাট খুলে ভাবছিল মিথ্যেটা সে কেন বলতে গেল? ফোন নম্বরে এমন কীই বা হয়? জানলাটা সে খুলেই রাখল।

চোখ বন্ধ করে ভাবছিল, যদি কোন এক আশ্চর্য কাণ্ড হয়। উপর তলার আন্টি ছেলের জন্য টিউটর খুঁজছে। আদনান যদি তলায় টিউশনি পায়। প্রতি দিনই আসে যায়। ধরা যাক সে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। সামনা সামনি দেখা হতে চোখে চোখ পড়ে গেছে। আর সেই প্রথম দিনটির মতো চেয়ে আছে।

নিরু আদনানকে ফোন করতে চাইল। একটা সঙ্কোচ মন থেকে সরে যায় নি। বন্ধ দরজায় কর্ডলেস ফোন হাতেকাজের মেয়েটা ধাক্কা দিচ্ছে।
-“আফা, আফনের ফোন”
-“হ্যালো, আমি শ্যামা, তোর মোবাইলে চার্জ নেই কেন?”
“ও”

শ্যামার জানালো পলিনের সঙ্গে সম্পর্কটা খারাপ সময় যাচ্ছে। পলিন খুব ঈর্ষা কাতর। নিরু বিস্মিত হল। সে জানত না। সে শুনলো, পলিন আদনানকে নিয়ে সন্দেহ করে। সে রিকশায় যাচ্ছিল, আদনানকে নীলক্ষেতে নামিয়ে দেয়ায় সময় তার প্রেমিক দেখেছে যা তার ভাল লাগে নি। নিরু এসব প্রেমের জটিলতা অপছন্দ করে। প্রেম করবে তারপর ফ্যাচ ফ্যাচ করে ঝগড়া ঝাটির গল্প করবে।

তবুও তার মনে হল শ্যামা হয়তো কিছু লুকাচ্ছে। নিরু বলল,
-“তুই যদি জানিস ছেলেটা মীন, তাহলে চলিস কেন?”
-“কিন্তু ওকে তো আমি খুব ফিল করি। এই একটা দিক ছাড়া ও তো ফাইন। আর এফেয়ার করলে জেলাসি থাকবেই”
-“কিন্তু তাই বলে..একজন কে সন্দেহ বাতিক গ্রস্থ লোক! আমি হলে..”
-“তুই আগে প্রেম কর...লভ ইজ অলওয়েজ ওয়ান সাইডেড। এক সাইড কে স্যাক্রিফাইজ করতেই হয়”
-“নারে ভাই, আমি তোর মতো পরী না, প্রিন্সেসও না। আমার এসব পুতু পুতু প্রেম ভাললাগে না”
-“আমারও ভাল লাগতো না রে, আমি একটা ডিসিশন নিসি”
-“কি?”
-“ওরে আমি কেয়ার না করে, ইচ্ছা করে খেপাব, আদনানকে বলে দরকার হলে, ওর জেলাসি বাড়ায়ে দেব। দেখি কি করে ও”
-"সো?"
-“আদনানের বার্থডে পরশুদিন। ওইদিন সব নিরবে যাব। ওকে শায়েস্তা করতে আদনানকে নিয়ে ওকে নিজেই বার বার খোঁচাব। দেখি সে কতদুর যায়”

*
২৩ তারিখ দুপুর বেলা। পরিস্কার নীল আকাশ। সব সাইন্স এনেক্সের সামনে জড়ো হল। আদনান জানল দুপুরে খেতে নিরবে যাচ্ছে। সারপ্রাইজটা লুকান। সবাই রিকশায় ওঠার পর নিরু আর আদনান বাকি থাকলো। শ্যামা বলল, তোরা দুজন একসঙ্গেই আয়।

এই ছিল প্রথম রিকশা চড়ার গল্প। আদনান একেবারে সাদা সিদে জামা আর প্যান্টে সেদিন। পায়ে চামড়ার স্যান্ডেল। পুরো রাস্তা ছেলেটা কোন কারণে চুপ ছিল। হয়তো তার সময়টা ভাল যাচ্ছে না।
নিরুর কেমন যেন মায়া হল। সেই শুরু করল,
-“মন খারাপ?”
-“না না” এড়াতে না পেরে বলল, “একটু ঝামেলা যাচ্ছে, একটা পার্টটাইম চাকরীর ডাক পেলাম কলসেন্টারে।”
-“ওরা তো অনেক খাটায়”
-“হ্যাঁ, কিন্তু বিষয় না, লাইফে কী আছে আর। তোমাকে কিন্তু অনেক খুঁজেছি জান? আর একটা কারণ আছে। শুনলে রেগে যাবে হয়তো। শ্যামার একটা বিষয় খুব ভাবাচ্ছে। কিন্তু প্রমিজ তাকে বলবে না।”
-“আমাকে খুজছ? বল কি বলতে চাও”
-“না, সময় লাগবে”
-“অসুবিধে নেই, বল। আমি কিউরিয়াস। শ্যামার বিষয়টা কি জানতে চাই। কিন্তু ওরা বসে থাকবে আমাদের জন্য”

ছেলেটা রিকশাকে সোজা রমাপতি লেন দিয়ে ঘুরে যেতে বলল
-“১০ মিনিট, ওকে?”
-“ওকে, ঘটনা কি শুনি”
-“নিরু, শ্যামা আমাকে বেশ কয়েকদিন ধরে ফোন করছিল। ও সম্ভবত: পলিনের সঙ্গে থাকছেনা। সে আমার দিকে উইক। তোমাকে বলাটা ঠিক হচ্ছে না জানি। তবু তোমাকে বলতে ইচ্ছে হল”
-“কি করে শিওর হলে?”
-“ওর সঙ্গে গত দিনের দেখায়, আমি মেয়েদের চোখ পড়তে জানি। আর ও ফোনে ঘুরিয়ে বলেছে। আমি ওকে এড়াতে চাই বলে..।”
-“ইস! কি পণ্ডিত তুমি, চোখ দেখেই সব বুঝে গেছ।”, এবার নিরু তার জমানো প্রতিশোধ নিতে বলেই ফেলল।
-“জিজ্ঞেস করলে না, আমি তোমার চোখের ভাষা পড়েছি কিনা?”
(নিরু চুপ করে থাকলো)। ছেলেটা বলল,
-“নিরু, আমি অনেক ভেবেছি। প্লিজ অন্যভাবে নিও না। এই উত্তমাশা অন্তরীপের কবিতাটা আমার সবচেয়ে প্রিয়। আর তোমার চোখে আমি সেই আশ্চর্য কবিতাটা দেখছিলাম বলে তাকিয়েছিলাম। তুমি কি আমার আপন হবে আরও? যদি আমার হাত ধরো, প্রমিজ করছি, আমি তোমাকে কখনোই ছেড়ে যাব না”

একটা পুরনো বাড়ির সামনে দিয়ে রিকশা যাচ্ছিল। বহুবছরের পুরনো জানালা। একটা পুরনো নাটকের দৃশ্যের মতো রিক্সাটা ঝাঁকি খেয়ে উঠলো। লাল দেয়ালের দিকে চেয়ে নিরু বলল,
-“আদনান, তুমি কি বলছ জান? এসব কবিতা.. নাটক সিনেমাতে হয়”
-“নিরু, ট্রাস্ট মি, আই লাভ ইউ”

নিরু খুব সাধারণ মেয়ে। সে নিজেকে সামলাতে পারছিল না। আবেগ লুকিয়ে রাখতে গিয়ে সে বলল,
-“থাক আদনান, এসব আমার ভাল লাগে না। আমরা ফিরে চলি। ওরা বোধ হয় অধৈর্য হয়ে গেছে”
-“ঠিক আছে নিরু। কথাগুলো না বললে কষ্ট থেকে যেত। শুধু একটা অনুরোধ। আমি অন্যদের মতো নই। ভাল না লাগলেও বন্ধুত্বটা রেখো”

রিকশা নিরবের দিকে চলতে থাকে। ঘন্টা বাজে টুংটাং শব্দে। আদনানের হয়তো একটা অভিমান জমতে থাকে নিরুর প্রতিক্রিয়ায়। নিরু হঠাৎ প্রশ্ন করল,
-“আচ্ছা আদনান..মানুষের জীবনের চাওয়াগুলো কি এত সহজে পূর্ণ হয়? মুহূর্তগুলো কি জীবনে এভাবেই আসে?”
-“কেন নয়? মানুষই তো ভালবাসে!” ।আদনান যেন আশাহ্নিত হল।

নিরু ঝিনুকের খোলস খুলে মুক্তো দেখিয়ে মিষ্টি করে হেসে ফেলল, বলল
-“ঠিক আছে, এখন ওরা অপেক্ষায়, রাতে ফোন করো, কথা হবে। আমার নম্বরটা ০১৯১২১১১.....। ”

নিরবে ঢুকতেই শ্যামা বলল, কীরে তোদের এত দেরী কেন? আদনান শ্যামার মুখের দিকে চেয়ে রহস্যময় একটা হাসি হাসল। সে আজকে যা জেনেছে তাতে সে পৃথিবীর অর্ধেক তার হাতের মুঠোয়। টেবিলের ওপর একটা তাজা ফুলের ঝুড়ি হাসছে। কিন্তু ওপাশে বসে থাকা মেয়েটিকে গোলাপের চেয়ে তাজা মনে হচ্ছে।

সময়ের রেশ কেটে যেতে সময় নেয়। আদনান অনেকদিন পর মন খুলে আকাশ দেখছে। তার মনে হল একটা সবুজ ঘাসের উদ্যানে বসে আছে। চারপাশে অজস্র ফুল। লাল বেগুনি। মায়ের শরীর খারাপ, টিউশনি সহ নানান সমস্যার কাঁটাগুলো সেই রং দিয়ে ঢেকে যাচ্ছে। কবিতাটা মনে পড়ল। এক পশলা মেঘের শব্দে একটা ময়ূর পেখম মেলে নেচে চলছে।

ফেরার সময় ছেলেটা ফোন কার্ডের দোকানে থামল।

নিরু তখন ভাবছিল, পাগল ছেলেটা সত্যিই কি চোখের ভাষা পড়তে জানে? আর তার কথাগুলো সে কী করে জেনে গেল।

-----
এটা আমার নিজস্ব গল্প না। অদৃশ্য সত্তার বাক্যালাপের গল্পের মন্তব্যে ওর গল্পটা আমি হলে কি লিখতাম। বলতে চেয়ে - বড় হয়ে যাওয়া আলাদা পোস্ট। একধরণের গল্পের অনুবাদ। বলার স্টাইল ও কাহিনী যথাসম্ভব এক রেখেছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৪০
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×