ছোটবেলায় একটা গান অনেক ভাল লাগত-"যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই"। তখন মনে হত পৃথিবীর সকল সুর যেন একটি বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। তখন আমি অনেক ছোট, সমাজের বাস্তবতা বোঝার বয়স হয় নাই। সকল সংকীর্ণতা থেকে দূরে ছিলাম।
আরেকটু বড় হলাম। দেশটাকে তখন বুজতে শেখা শুরু করছি মাত্র। দেশের রাজনীতি আমার মস্তিস্ককের ভিতরে ধীরে ধীরে সংকীর্ণতা ভরে দিচ্ছে। তখনও এই গানটা ভাল লাগত। তবে নিজেকে অনেক দুরের মনে হত!
প্রত্যেকটা মানুষই পরিবারের রীতিনীতি,দর্শন নিয়ে বড় হয়। একজনের ফ্যামিলিতে যদি কোন রাজনৈতিক দর্শন থাকে তাহলে সেই পরিবাবের শিশুদের মধ্যে এই একই দর্শনের বীজ রোপিত হয়ে বছরের পর বছর ধরে সেই রাজনৈতিক দর্শনের অন্ধ অনুগামী হয়ে থাকে। এই দেশে এই প্রবনতা আরও বেশি। আমার ফ্যামিলিতে এরকমই একটি রাজনৈতিক দর্শন ছিল। একটি অন্ধ দর্শন ছিল। আমিও তার বাহিরে যেতে পারি নি। আমিও যতই বড় হতে থাকি সেই দর্শন আরও প্রবলভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
এরকমই এক অন্ধ সময়ে কোথাও রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সেই গানটি শুনলাম " যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই "
গানটাকে অনেক আপন মনে হল কিন্তু আমার আমার সাথে বেঁধে দেয়া এক রাজনৈতিক মতবাদের কারনে গানটা শুনেও মন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করলাম। কারন আমার দর্শন ভিন্ন।
সেই থেকেই নিজের ভিতরে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। বিবেকের যুদ্ধ, অন্ধ দর্শনের যুদ্ধ। একটা গান কিভাবে রাজনৈতিক সম্পদ হয়! একজন বাক্তি যিনি স্বাধীনতার বীজ বপন করেছেন তিনি কিভাবে শুধুই একটা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে! তিনি তো এই বাংলার সকল মানুষের জন্য। স্বাধীনতার জন্য যারা কাজ করেছে কেউই কোন রাজনৈতিক দলের সম্পদ হতে পারে না। তারা সবাই দেশের রত্ন, আমাদের অনুপ্রেরনা। রাজনিতির ভিক্তিতে কাউকে আলাদা রাখা উচিত নয়। তেমনি "প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ" অনেকে মনে করে এটাও অন্য কোন রাজনীতির সম্পত্তি। কিন্তু আপনাদের উচিত এই অন্ধ, মিথ্যা দর্শন ছেড়ে সত্যিকার রাজনৈতিক দর্শন গ্রহন করা।
আমি পেরেছি! যে দলের মতবাদ আমার ভিতরে থাকুক না কেন দেশের স্বার্থে- সব। দেশের স্বাধীনতাদানকারী নেতারা কোন দলের না, তারা এই জাতির। আজ শেখ মুজিবের জন্মদিন। সকলকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা। আমার এখন আর এই গান নিয়ে কোন দ্বিধা নেই - যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই। এখন রাত পোহালে এই কথাটাই শুনতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৭