লেখাটি এখান থেকে নেয়া হয়েছে!
আমি দুঃখিত যে আমাকে বাংলায় লিখতে হচ্ছে। আসলে আমি চাই উর্দুতে লিখতে কিন্তু আমার মুসলমান ভাইদের অনেকেই উর্দু জানেনা। তারা উর্দু, আরবি, ফারসির চর্চা ছেড়ে দিয়েছে। তারা আঁকড়ে আছে বাংলার মত একটা থার্ডক্লাস হিন্দুয়ানী ভাষা। বাংলা প্রকৃতপক্ষে হিন্দুদের ভাষা। এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। বাংলা এই পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশেরও কোন ভাষা নয়। এটা কলকাতার হিন্দুদের ভাষা। হিন্দুরা লোম কাটেনা, প্রস্রাবের পর পানি দেয় না, হিন্দু মালাউনরা নাপাক। তেমনি তাদের এই বালের বাংলা ভাষাও নাপাক। বাংলার সাথে ইসলামী ঐতিহ্যের কোন সম্পর্ক নেই। বাংলায় তেমন কোন মুসলমান কবি-সাহিত্যিক নেই। যা গুটিকয়েক আছে তারাও প্রকৃত মুসলমান নয়। তারা মালাউনদের খাস চামচা। হুমায়ুন আহমেদ নাস্তিক, হুমায়ুন আজাদ মুরতাদ, রবিঠাকুর মালাউন, কাজি নজরুল বিয়ে করেছে এক মালাউনকে, নজরুল লিখেছে শ্যামাসংগীত আবার লিখেছে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠছে। সুতরাং বাংলা পরিহার করুন। অনেক দুঃখের বিষয় শ্রদ্ধেয় গোলাম আযম স্যারকে সদ্য লোম গজানো অনেক বাচ্চা ছেলেপুলে ভাষাসৈনিক ডাকে। অথচ গোলাম আযম স্যারও এই হিন্দুয়ানী বালের বাংলাকে ঘৃণা করেন।
১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এক সমাবেশে ভাষণ দেন। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাকে একটি মানপত্র দিয়ে তাতে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানানো হয়। এ মানপত্রটি পাঠ করেন ইউনিয়নের তৎকালীন সেক্রেটারি গোলাম আযম। আসলে এটি পাঠ করার কথা ছিল ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট অরবিন্দ বোসের। কিন্তু লিয়াকত আলীকে ভাষা আন্দোলনের দাবি সংবলিত মানপত্র পাঠ একজন হিন্দু ছাত্রকে দিয়ে করালে তিনি বুঝে যাবেন এটা চ্যাটের বালের মালাউনদের ষড়যন্ত্র¬ এ আশংকা থেকেই একজন মুসলমান ছাত্র হিসেবে সেক্রেটারি গোলাম আযম স্যারকে সেটা পাঠ করতে দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ গোলাম আযম স্যার বাধ্য হয়েই এই কাজটি করেছিলেন। গোলাম আযম স্যার স্বীকার করেছেন, এই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নিতান্তই আকস্মিক। তার ভাষায়, ’৪৯-৪৯ সালে ইউনিভার্সিটি ইউনিয়নের নির্বাচন না হওয়ায় এ সেশনেও জিএস-এর দায়িত্ব আমার উপরই রইল। কিন্তু হলে না থাকায় আমার জন্য এ দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়লো। তাই ভারপ্রাপ্ত জিএস হিসেবে নির্বাচিত সদস্যদের একজনের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ’৪৮ এর ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করার জন্য একটি মেমোরেন্ডাম (স্মারকলিপি) রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভিপি আবদুর রহমান চৌধুরীর উপর (যিনি বিচারপতি হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন)। একটি কমিটি স্মারকলিপিটি চূড়ান্ত করে। ইউনিভার্সিটি ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাইস চ্যান্সেলর ড. সৈয়দ মুয়াযযাম হোসেন তখন বিদেশে থাকায় ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর জনাব সুলতানুদ্দীন আহমদকে সভাপতিত্ব করতে হয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পর তিনি গভর্নর হয়েছিলেন। ছাত্র মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সামনে মেমোরান্ডামটি কে পাঠ করে শুনাবে এ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলো। ছাত্র ইউনিয়নের ভিপির উপরই এ দায়িত্ব দেওয়া স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু স্মারকলিপিতে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক দাবি-দাওয়ার তালিকায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ থাকায় সবাই একমত হলো যে, ঐ পরিস্থিতিতে একজন হিন্দুর হাতে প্রধানমন্ত্রীকে তা পেশ করা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ মুসলিম লীগ সরকার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পেছনে হিন্দুদের হাত আবিষ্কার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হিসেবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ছাত্রইউনিয়নের জিএস গোলাম আযমকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ ১৯৫২ সালের ৬ মার্চ রংপুর কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক থাকা অবস্থায় গোলাম আযমকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫০ সালে তার উর্দু শেখার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘…আমাদের আমীর উর্দুভাষী হওয়ায় উর্দু শোনা ও বুঝার সুযোগ পেয়ে ভালোই লাগলো। উর্দু ভাষার এক প্রকার মিষ্টতা আছে, যার কারণে শুনতে শ্রুতিমধুর মনে হয়।… আমাদের আমীর উর্দুভাষী হলেও কোলকাতার অধিবাসী হওয়ায় বাংলা মোটামুটি বুঝেন ও কিছু কিছু বলতেও পারেন বলে আমাদের জন্য শিখতে সহজ হলো। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের সময় উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকায় উর্দু শিখবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সে ক্ষোভ আর রইল না। উর্দু শেখা শুরু হয়ে গেলো।‘’ (জীবনে যা দেখেছি, ১ম খন্ড, পৃ: ১১২)
পাকিস্তানি আমলে ১৯৭০ সালের জুন মাসে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাক্কার শহরে এক বক্তৃতা প্রসঙ্গে গোলাম আযম স্যার ‘খোদার সেরা দান’ বাংলা ভাষা ও ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এক মারাত্মক রাজনৈতিক ভুল এবং তিনি নিজে এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য দু:খিত। গোলাম আযম স্যার বলেন, উর্দু হচ্ছে এমন একটা ভাষা যার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার উপযুক্ত প্রচার ও প্রসার সম্ভব। কারণ ‘উর্দু পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের সাধারণ ভাষা এবং এতে তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পদ সংরক্ষিত রয়েছে।’ নিজের ভ্রান্ত ভূমিকা সম্পর্কে খেদোক্তি করতে গিয়ে গোলাম আযম স্যার আরও বলেন, বাংলা ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেই সঠিক কাজ হয়নি। (দৈনিক আজাদ, ২০ জুন, ১৯৭০)মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ভাষা দিবসের স্মারক শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেটিকে স্বাগত জানায় গোলাম আযম স্যার বলেন যে, শহীদ দিবসের নামে হিন্দুয়ানি প্রথার চর্চা চলছিলো নাকি এখানে। প্রমাণ হিসেবে এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে ১২ মে ও ১৬ জুলাইয়ে প্রকাশিত দুটো সংবাদ তুলে দেওয়া হলো:
১২ মের সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশের ইতি হোক শিরোনামে লেখা হয় : হিন্দুস্তানী সংস্কৃতি মুসলমান সংস্কৃতিতে প্রবেশ করে পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি ক্ষেত্রের প্রচণ্ড ক্ষতিসাধন করেছে। যার ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় শ্লোগানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আল্লাহু আকবর ও পাকিস্তান জিন্দাবাদ বাক্যগুলি বাদ পড়ে এগুলোর জায়গা নিয়েছিলো জয় বাংলা। মুসলমানী ভাবধারার জাতীয় সঙ্গীতের স্থান দখল করেছিলো মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু কবির রচিত গান।...
শহীদ দিবসের ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগী মুসলমান ছাত্রদের জন্য দোয়া কালাম পড়ে মাগফেরাত কামনার পরিবর্তে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে হিন্দুয়ানী কায়দা, নগ্নপদে চলা, প্রভাতফেরী, শহীদ মিনারের পাদদেশে আল্পনা আঁকা ও চন্ডীদেবীর মূর্তি স্থাপন ও যুবক-যুবতীদের মিলে নাচগান করা মূলত ঐসকল পত্রপত্রিকা ও সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলির বদৌলতেই এখানে করা সম্ভব হয়েছে।
১৬ জুলাই `ইতিহাস কথা বলে` সম্পাদকীয়তে তারা লেখে : আইউব খানের গভর্নর আজম খান ছাত্রদের খুশী করার জন্য যে শহীদ মিনার তৈরি করলেন তাকে পুজা মন্ডপ বলা যেতে পারে কিন্তু মিনার কিছুতেই না। যাহোক সেনাবাহিনী সেই কুখ্যাত মিনারটি ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ গড়ে শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন জেনে দেশবাসী খুশী হয়েছে।
সুতরাং ভাষাসৈনিক ডেকে আর স্যারের অপমান করবেননা। গোলাম আযম স্যার ফালতু ভাষা সৈনিক নন তিনি ইসলামের সৈনিক।
-যে ফেসবুক গ্রুপে এই লেখা পোস্ট হয়েছে তার লিঙ্ক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-E-Islami)
কোন ফেইক আইডি থেকে অন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠনের লোক বা সত্যিই জামাতের যদি কোন লোক এই কথা বলে থাকে তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই।
যদিও জামাতের নামে গ্রুপ, এটাও হতে পারে অন্য কেউ জামাতের নামে পোস্ট করেছে যিনি জামাতের সাথে জড়িত না। সেরকম কেউ যদি হয়ে থাকে আরেকজনকে ফাঁসানোর জন্য নিজের অস্তিত্বকে অবমাননা করা কি ধরনের মানসিকতা! তার বিচার চাই।
আর যদি সত্যিই যদি জামাতের কেউ এই কাজ করে থাকে তার চরম শাস্তি চাই।