নার্সিসাস--একটি গ্রীক পুরাণ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
“Fair Daffodils, we weep to see
You haste away so soon
As yet the early-rising sun
Has not attainted his noon
Stay, stay.”
Robert Herrick এর এই কবিতাটি আমাদের সবার-ই কম বেশি জানা।কিন্ত ড্যাফোডিল ফুলটি সম্পর্কে আমারা তেমন কীই বা জানি? ড্যাফোডিল হলুদ রঙ্গের “নার্সিসাস” প্রজাতির একটি ফুল, যা বসন্তে ফোটে। নার্সিসাস অনেক প্রজাতির হয়ে থাকে--কোনটা সাদা, কোনটা হলুদ।বহু পাপড়ির এই মনোহর ফুলটি বড় বেশি ক্ষণস্থায়ী। সকালে ফুটে বিকেলেই ঝরে পড়ে। নার্সিসাস ফুল নিয়ে রয়েছে একটি চমৎকার গ্রীক মিথ।
দেবতাদের প্রধান--জিউস, তাঁর ছিল ভীষণ এক বাজে অভ্যাস। তিনি পরনারিতে ভীষণভাবে আসক্ত ছিলেন। জিউসের স্ত্রী হেরা বিভিন্ন কৌশলে জিউসকে ধরতে গেলেও। জিউস ঠিকই সব সময় বুদ্ধি করে বেঁচে যেতেন। একবার হেরা তার গুপ্তচরদের মাধ্যমে জিউসকে প্রায় ধরেই ফেলেছিল---কিন্তু এক সুন্দরী জলদেবী--একো তার নাম--দুষ্টুমী করে জিউস ও তার প্রণয়নীর কণ্ঠস্বর নকল করে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করছিল।কথার বার বার প্রতিধ্বনি হওয়াতে গুপ্তচরেরা জিউসকে পরকীয়ারত অবস্থায় আর ধরতে পারল না। জিউসও পালিয়ে বাঁচলেন। তাই হেরা একোর উপর ভীষণ রেগে গেল গেলেন আর অভিশাপ দিলেন, “তোমার জিহ্বা এখন হতে আর কোন কথা উচ্চারণ করতে পারবে না।”--মুহূর্তেই বোবা বনে যায় একো। হয়তো সে চিরদিনের জন্য বোবা হয়ে যেত, যদি না দেবী তাকে আরেকটি অভিশাপ দিতেন,”শুধুমাত্র অন্যের কথার প্রতিধ্বনি করা ছাড়া।” আতংকগ্রস্থ একো মনের অজান্তেই বলে উঠে, ”শুধুমাত্র অন্যের কথার প্রতিধ্বনি করা ছাড়া?”একো হয়তো সত্যি বোবা হয়ে যেত, যদি না তাকে প্রতিধ্বনি করার ক্ষমতা দেয়া না হত।সামান্য একটুখানি দুষ্টুমীর জন্য তাকে এমন অর্ধবোবা হয়ে থাকতে হবে--এমনটা তো সে চায় নি। নিজের কণ্ঠস্বর হারিয়ে, মনের কথা বলার অধিকার হারিয়ে, দেবীর অভিশাপ থেকে বাঁচতে একো মনের দুঃখে চলে গেল বনে--যেখানে কেউ নেই--যেখানে তাকে অন্যের কথা প্রতিধ্বনি করতে হবে না। তবু কি সে রেহাই পাবে? এ যে স্বয়ং দেবী হেরার অভিশাপ! (ইংরেজীতে “echo” শব্দটি কিন্ত এখান থেকেই এসেছে, যার অর্থ প্রতিধ্বনি।)
এদিকে ছিল নার্সিসাস নামের এক সুদর্শণ যুবক। কত সুন্দরী যুবতীই না তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পাগল হল। কিন্ত অহংকারী নার্সিসাস তাদের দিকে ফিরেও তাকাত না। তেমনি একবার এক কিশোরী নার্সিসাস্কে প্রেম নিবেদন করল। সেই প্রেমকে প্রত্যাক্ষাণ করে অহংকারী নার্সিসাস বলল,”তুমি এমন একজনের প্রেমে পড়েছ যাকে তুমি শুধু দূর থেকেই দেখতে পারবে। কখনও কাছে পাবে না। এমনকি স্পর্শও করতে পারবে না।“ অপমানিত কিশোরী ক্ষীপ্ত হয়ে বিচারের প্রত্যাশায় সব দেবতাদের কাছে অনুযোগ করে, নার্সিসাসকে তেমন কষ্ট দাও, যে কষ্টে আমি পুড়ে মরছি।“ অভিযোগ শুনে দেবতারা অভিশাপ দিলেন,”যে কাউকে ভালবাসে না, সে যেন শুধু নিজেকেই ভালবাসে।“ এমন অভিশাপে সন্তুষ্ট হতে পারল না কিশোরীটি। তখন ন্যায়পরায়ন ক্রোধের দেবী নেমেসিস অভিশাপ দিলেন,” নার্সিসাস, তুমি এমন একজনের প্রেমে পড়বে যাকে তুমি শুধু দূর থেকেই দেখতে পারবে। কখনও তাকে কাছে পাবে না। এমনকি স্পর্শও করতে পারবে না।“ নার্সিসাস কিন্ত এসবের কিছুই জানতে পারল না।
একদিন নার্সিসাস বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল--সেই বনের ভেতর দিয়ে--যেখানে একো থাকত।সুদর্শণ নার্সিসাসকে দূর থেকে দেখে একো তার প্রেমে পড়ে গেল। কিন্ত কিভাবে একো তার মনের কথা নার্সিসাসঅকে জানাবে? সে যে অন্যের কথা নকল করা ছাড়া আর কিছু জানে না। নার্সিসাস কি তাকে ভালবাসবে? এক বুক চাপা কষ্ট নিয়ে একো নার্সিসাসের পিছু নিল। নার্সিসাসও কিভাবে যেন টের পেয়ে গেল কেউ তার পিছু নিয়েছে। তাই সে জানতে চাইল,”কেউ কি আছে?” গাছের আড়াল থেকে একো জানাল--“আছেএএ, আছেএএ, আছেএএএএ”।নার্সিসাস বলল, “তাহলে বেড়িয়ে এসো!” এবার একো গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে দুবাহু নার্সিসারের দিকে বাড়িয়ে দিল,” এসোওওও, এসোওওও,এসোওওও”।ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল নার্সিসাস,”কেবলমাত্র আমার মৃত্যুর পরেই আমার অধিকার দেব তোমার হাতে।“ কান্নাভেজা কণ্ঠে একো তার উত্ত্রে শুধু বলতে পারল,” আমার অধিকার দেব তোমার হাতে, তোমার হাতে, তোমার হাতেএএএ।“নার্সিসাস চলে গেল একোকে বনের মাঝে একা ফেলে।
ঘুরতে ঘুরতে পরিশ্রান্ত নার্সিসাস পৌছে গেল পাহাড়ের উপর এক শান্ত হ্রদের ধারে। পিপাসার্ত নার্সিসাস হ্রদ হতে যেই পানি পান করতে গেল, হ্রদের টলটলে পানিতে সে নিজের ছায়া প্রথমবারের মত দেখতে পেল। ভুলে গেল সে তার তৃষ্ণার কথা। পলকহীন চোখে সে তার নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে রইল আর ভাবতে লাগল, “এ আমি কার প্রেমে পড়লাম? যাকে শুধু দূর থেকেই দেখতে পারব। কখনও তাকে কাছে পাব না। এমনকি স্পর্শও করতে পারব না।! আজ আমি বুঝতে পারছি প্রেমের কি যন্ত্রণা। সেই সব নিষ্পাপ তরুণীদের অপমান করে কি অন্যায়-ই না আমি করেছি।“ (ইংরেজীতে “narcissism” শব্দটির উৎপত্তি এখান থেকেই হয়েছে, যার অর্থ আত্নপ্রেম।) ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর নার্সিসাস হ্রদ হতে আর সরে দাঁড়াত পারে না।যখনি সে পানিতে স্পর্শ করতে যায়, তার ছায়া যায় হারিয়ে। ধীরে ধীরে নার্সিসাস মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। এ সময় একো তার পাশে এসে দাঁড়ায়। কিন্ত কিছুই করার নেই তার, বলারও নেই। মৃত্যুর সময় নার্সিসাস একোকে বিদায় জানায়, “বিদায়, বন্ধু বিদায়।“ একো তার উত্তরে নিষ্ঠুর বন্ধুর উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করে,” বিদাআআআয়, বিদাআআআয়, বিদাআআআআয়”, যদিও সে তা বলতে চায় না।
একোর কোলে মাথা রেখে মারা যায় নার্সিসাস। মৃত্যুর পরেই একো পেল নার্সিসাসের অধিকার।কিন্ত বেশিক্ষণের জন্য নয়। নার্সিসাসের দেহ অদৃশ্য হয়ে তা থেকে জন্ম নিল এক শত পাপড়ীর এক মনোলোভা ফুল--“ নার্সিসাস”। কিছুক্ষণের মধ্যে ফুলটিও ঝরে পড়ল। বড় বেশি ক্ষণস্থায়ী এই ফুল--মানুষের জীবনের মতই। তবু মানুষ নিজেকেই ভালবাসে, স্বার্থপরের মত, নার্সিসাসের মত।
নার্সিসাসকে চিরতরে হারানোর দুঃখে একো পালিয়ে গেল অনেক দূরে, নির্জনে, কেউ জানে না কোথায়। হয়তো কোন বনে অথবা পাহাড়ের কোণে।দীর্ঘদিন অনাহারে থাকের ফলে একোর দেহ অদৃশ্য হয়ে গেলেও কণ্ঠস্বর রয়ে গেল।তাই নির্জন কোন স্থানে কেউ কোন কথা বললে একো আজো তাদের কথার উত্তর দেয়--প্রতিধ্বনির মাধ্যমে। হয়ত বলতে চায়,”আমি আছি”।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁঠালের আমসত্ত্ব
কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে
এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে । ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন
কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী
ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)
সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন