somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মই যে দেশে আজন্ম পাপ, সে দেশে কার কাছে কি বলি

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবনে একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে যিনি অপমানিত হয়েছেন তিনি হয়ত আমার মত কখনই ভুলতে পারবেন না এই কষ্ট। একবার আবুধাবিতে গিয়েছিলাম ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে। ৪৮ ঘন্টা থাকব হোটেলে। তারপর ঢাকার ফ্লাইট। ইমিগ্রেশনের সাদা স্কার্ফ ওয়ালা হুজুর রীতিমত আমার পাসপোর্টটা নিয়ে খেলা শুরু করলো। আমার নামের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার নাম জিজ্ঞেস করলো তিনবার।
আমি ভদ্রলোকের মত প্রতি জিজ্ঞাসাতেই নাম বলি, হুজুর ততবারই মশকরার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন আরবি আর ইংরেজীর দ্বৈত মিশ্রণের অদ্ভুত ভাষা দিয়ে। আমি যতই ইংরেজী বলার ভাব দেখাই, যতই স্মার্ট হবার চেষ্টা করি ততবারই যেন হুজুর আমার আশে পাশে থাকা বাঙালী শ্রমিক ভাইদের দিকে তাকিয়ে খানিকটা বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা চালান আমার পরিচয়। যেন এসব শ্রমিকেরা চুরি করে খায় এই দেশে। যেন এদের রক্ত ঠিক রক্ত না। এক সময়ে কঠিন করে মার্জিত ধমকে কাজ হয়, কিন্তু একটা হারামীর মত হাসি হুজুরের অসভ্য মুখে লেগেই থাকে।

একবার তাসখন্দে বের হয়েছিলাম লন্ডনের ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে। বাংলাদেশী শুনে, ইমিগ্রেশনের লোকটার মুখের ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছিলো মানুষ কি করে পারে এমন পশুর মত মুখ বেঁকাতে? সেবারও ঠিক কিছু বলা হয়নি, কাকে বলব? কি বলব?

অস্ট্রেলিয়াতে যাবার পথে আমাকে আটকালো তিন যায়গায়। লন্ডনের ফ্লাইটে উঠবার আগে, সাউথ কোরিয়ায় আর ঠিক প্লেনে উঠবার আগে। আমার আশে পাশে এত অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে। অথচ ভদ্রভাবে ডেকে নিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলো আমাকে। কই যাবেন, কেন যাবেন? বুঝি নিরাপত্তার ব্যাপার। এও বুঝি, সাথে যে নিঃসঙ্গ সবুজ পাসপোর্টটা।

সাউথ কোরিয়াতে ছিলাম দুই রাত। কোরিয়াতে ঢুকবার আগে ইমিগ্রেশন অফিসার আমার পাস্পোর্টটা চেক করার নামে যা করলো, তার নাম সোজা ভাষায় ধর্ষন। অথচ পাসপোর্টে ভিসা ছিলো, পাস্পোর্টের মেয়াদ ছিলো। শুধু সমস্যা ছিলাম আমি। কারন আমি একজন বাংলাদেশী। আমার পাসপোর্টের রঙ সবুজ।

এবার যখন নেদারল্যান্ডে গেলাম, তার আগের ভিসা পাবার কাহিনী তো এপিক স্টোরি। এত লম্বা কাহিনীতে আজ আর না যাই। তারা তাদের ওয়েব সাইটে লিখে রেখেছে- for some nationalities, (such as Pakistan, Bangladesh, Nigeria, Afghanistan and more) other Schengen countries need to be consulted before issuing visa. This consultation process may take up to two weeks; কথাগুলোর বাংলা খুব সরল দাঁড়ালেও, ভেতরকার মানে সরল নয়। এই দুই সপ্তাহের নাম করে ওরা যেই খাটুনিটা একদিনের ভিসার জন্য আমাদের খাটিয়েছিলো, যেই অপমানের ভেতর দিয়ে আমরা গিয়েছিলাম, সেটি হয়ত ভুলবনা কোনোদিন। তার চাইতে বড় কথা হচ্ছে দেশের উদাহরণ দিতে গিয়ে ঠিক ঠিক পাকিস্তানের নামের পাশেই বাংলাদেশের নামটিও উচ্চারিত হয়। এই গ্লানি কোথায় রাখি?

এতগুলো কথা বলবার কারন আসলে গত কয়েকদিনের একটা ঘটনা। বিশ্ব ব্যাংক আমাদের ঋণ দেবার নাম করে যা করছে সেটির থেকে এই ব্রীজ কোনোদিন না হলেই এখন খুশি হই। অর্থ দেবার নাম করে তারা আজকে যে খেলা খেলছে আর ভিক্ষার থালা হাতে ওদের প্রত্যেক্টি কথাতেই যে আমরা জ্বি হুজুর- জ্বি হুজুর করে ঘুরছি, এসব দেখে নিজেকে খুব অসহায় লাগে। এতগুলো মানুষ দেশটার জন্য প্রাণ দিলো, এত অশ্রু, এত কষ্টের দেশ কি এসব দেখার জন্য?

কাকে দোষ দিব বলেন? কিসের জন্যই বা দোষ দিব? রাজনীতিবিদদের গালি দিব? দেশের আমলাদের গালি দিব? দেশের বিরোধী দলকে গালি দিব? কি হবে তাতে? অপমানের ওরা কি বোঝে? একজন বাংলাদেশী হিসেবে একটা পাস্পোর্ট নিয়ে যখন ভীন দেশের ইমিগ্রেশনে মাথা নীচু করে ভেতরে ভেতরে অশ্রু ঝরাই, সে কান্নার কি দাম আছে এদের কাছে? একটা পাসপোর্টের অপমান যে মায়ের অপমান, এটা ওরা কোনোদিনি বুঝবে না। চোখের সামনে দিয়ে সেদিনের দেশ মালেশিয়ার পাসপোর্ট হাতে গট গট করে চলে যায়, আমেরিকান, ব্রিটিশ, অস্ট্রেলিয়ান, কানাডিয়ান পাসপোর্ট হাতে চলে যায়, আর দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আমাদের...

জন্মই যে দেশে আজন্ম পাপ, সে দেশে কার কাছে কি বলি..
(সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৯
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×