মাঝে মাঝেই মাঝ রাতে আতকে উঠে ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ঘুম থেকে জাগা পেয়েই দেখি হার্টবিট অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে বেড়ে গেছে।
পুরো শরীরে তার আরো বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে।
কিন্তু এমন তো কথা ছিল না, তবে কি আমার হার্টও আমার সাথে জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাচ্ছে???
কি পেলাম, কি পেতাম, কি পাবো এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ফজরের সালাতের সময় হয়ে যায় তাও টের পাইনা।
হার্টের যে মাসলগুলো আছে ওরা বড্ড বেশি বেয়ারা, আমার কথা তো শোনেইনা, ঔষধের কথাও শোনেনা।
আর শুনবেই বা কেন, ওর কি কোনো রেস্ট আছে??
ও তো সেই মায়ের পেটের ভেতরে থেকেই নিরন্তর পাম্প করে যাচ্ছে।
একদিন আমি হার্টকে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা তুমি যে সবসময় এইযে বিশ্রামহীন ভাবে ব্লাড পাম্প করতেই থাকো, তোমার কি কষ্ট হয়না??
বিরক্তি আসেনা?
হার্ট আমায় তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে, আমি তো তোমার জন্য পাম্প করি না, আমি পাম্প করি আমার নিজের বেঁচে থাকার জন্য, কারণ তুমি বাঁচলেই তো আমি বাঁচব!
অবশ্য হার্ট আরো বলে, ওর মনে খুব দুঃখ।
আমি বললাম কেন দুঃখ??
ও বলে, আমরা যে সমস্ত খাবার খাই, তার বেশিরভাগের মধ্যে ভেজাল আর চর্বি থাকার কারণে আমাদের ধমণী আর শিরার ভেতরে চর্বি জমে সেগুলো সংকুচিত হয়ে যায়, এতে করে তার অনেক বেশি শক্তি দিয়ে পাম্প করতে হয়, আস্তে আস্তে ও দুর্বল হয়ে যায়।
আমি হার্টকে বললাম, আচ্ছা তোমার জীবনে কোন প্রেম-ট্রেম আছে, তুমি কি কাউকে ভালবাস??
হার্ট উত্তরে বলে, হ্যাঁ, ওর সাথে একজনের ভীষণ ভাল সম্পর্ক। দুজন দুজনকে প্রচন্ড পরিমানে ভালবাসে। সে হলো ফুসফুস।
তবে ইদানিং ফুসফুসের সাথে হার্টের একটু টানাপোড়েন চলছে।
ফুসফুস এখন আর আগে মত বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারেনা।
কারণ চারদিকে এত এত ধুলোবালি আর দূষিত বাতাস, ফুসফুসের চেহারাও নাকি আগের মত আর আকর্ষণীয় নেই।
হার্ট আমাকে একটা রিকোয়েস্ট ও করল,
আমি কিছু খাবার খেলে হার্ট ভাল বোধ করে।
সেগুলো সময় পেলে খেতে বলেছে,
যেমনঃ পেঁপে, কলা, সবুজ শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, আপেল, স্ট্রবেরি, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি।
আমি হার্টকে বললাম, তুমি কি আর কিছু বলতে চাও??
হার্ট বলে, ফুসফুস কে যেহেতু সে অনেক ভালবাসে; তারজন্যেও একটা উপরোধ করল।
বলল আমাকে রাস্তায় বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে।
আর খুব ঠান্ডা খাবার ও খেতে নিষেধ করেছে। এতে নাকি তার প্রেয়সী ফুসফুস ভাল থাকে।
আমি হার্টকে আশ্বস্ত করলাম, এখন থেকে মাস্ক ব্যবহার করব।
এবার হার্টকে আমার কিছু কথা শেয়ার করলাম।
বললাম আমার চিনি আর লবণ খেতে খুব ভাল লাগে।
হার্ট কথাটি শুনে খুব মন খারাপ করল।
বলল তুমি জানোনা???
এই চিনি আর লবণ কে হোয়াইট পয়জন বলা হয়।
তুমি প্লিজ এই সাদা বিষ আর খাবেনা।
আমার খুব কষ্ট হয়, আমি দূর্বল হয়ে যাই।
হার্টের এরকম আকুল আবেদন আমারও মনকে নাড়া দিল।
তাকে বললাম এখন থেকে যতটা সম্ভব চিনি আর লবণ দুরে রাখব।
হার্টের সবচেয়ে অপছন্দের জিনিস সম্পর্কে জানতে চাইলে ও বলল, ওর নাকি চিংড়ি মাছ সবচেয়ে অপছন্দের, কারণ এতে নাকি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল LDL ( লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) থাকে যা ওকে খুব কাহিল করে দেয়,
আর পছন্দের খাবার বাদাম, যেখানে উপকারী কোলেস্টেরল HDL (হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) থাকে।
হার্ট আমার সাথে অনেকক্ষণ থেকে কথা বলতে বলতে ও একটু টায়ার্ড!
এদিকে আমারও অফিসের সময় হয়ে গেছে।
তবে ওর সাথে আর একদিন জমিয়ে আড্ডা দিবো বলে আজকের মত বিদায় নিলাম.......
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬