somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুহাম্মাদ নামের সংক্ষেপণ বা এব্রিবিয়েশন সংক্রান্ত জরুরি কিছু কথা

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটার সাথে হয়তো অনেকেই একমত হবেন, আবার অনেকে পুরনো ডায়ালগ মারবেন। কিন্তু লেখাটার গভীরতার দিকে একটু দৃষ্টি দিলে আশা করি কেউই আমার সাথে ভিন্নমত পোষণ করবেন না। তো আসুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাই।

‘নাম’ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আদম আলাইহিস সালামকে সর্বপ্রথম নামের শিক্ষাই দেয়া হয়েছিল। অস্তিত্বে যা কিছু আছে সবকিছুর একটা না একটা নাম আছে। থাকতে হয়। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সে হিসেবে তার নাম হতে হবে শুদ্ধ, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর।

যা মনে চাইল তা’ই রেখে দিলাম, নামের আগে পরে ইচ্ছে স্বাধীন বিশেষণের স্তুপ লাগিয়ে দিলাম, অথচ সেগুলো ভুল না শুদ্ধ সেটা খেয়াল করলাম না, এটা অনুচিত। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কোনো ভুলকে আমরা এখনো চালিয়ে নিতে পারি না। তা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। সচেতন হওয়া দরকার।

২.
প্রথমেই নামের শুরুতে মুহাম্মাদ নিয়ে কথা বলি। হিন্দুরা উপমহাদেশীয় মুসলিম সম্মানি ব্যক্তিদের নামের শুরুতে তাদের সমাজে প্রচলিত ‘শ্রী’ ও ‘শ্রীমতি’র ব্যবহার শুরু করলে মুসলমানরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার গরজে নামের শুরুতে মুহাম্মাদ ব্যবহার শুরু করেন।

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপারটি হচ্ছে উপমহাদেশের অন্য কোনো ভাষায় ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটি এব্রিবিয়েশনের কবলে না পড়লেও বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে এব্রিবিয়েশনের (Abbreviation) পাল্লায় পড়ে কোথাও মোঃ, কোথাও মুঃ, কোথাও মুহাঃ/মোহা:/ মুহা:/ মুহা./ প্রভৃতি আকার নিয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একটু চিন্তা করুন তো, কতটুকু উচিৎ? কতটুকু শুদ্ধ? কতটুকু সুন্দর? একে তো সংক্ষেপণ, তদুপরি ভুল। আমরা জানি বিসর্গ(ঃ) বাংলা বর্ণমালার একটি বর্ণ বিশেষ। এটা কিভাবে সংক্ষেপণের চিহ্ন হতে পারে? বাংলা ভাষার কোন ব্যাকরণের বইয়ে এটিকে সংক্ষেপণের চিহ্ন হিসেবে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে? এটা চলে আসা ভু্ল।

আমরা কি এ ভুল বহন করেই যাবো? অনেক নামী দামী লোকেরা ব্যবহার করে এসেছেন, তো সমস্যা কোথায়? কথাটা আরেকটি বোকামি। সময় সাশ্রয়ের কথা বলাটাও বালখিল্যতা বৈ কিছুই নয়।

৩.
আরেকটা বিষয় হলো নামের শুরুতে Md (এমডি)’র ব্যবহার। এটাই বা কেমন ব্যবহার! মুহাম্মাদ নামতো নিতে হয় প্রাণভরে, মনখুলে। কিন্তু এই কিপ্টেমি কেনো? পুরো মুহাম্মাদ লেখতে সমস্যা কোথায়? নিজের ভাষার উপর পণ্ডিতি করতে করতে অন্যের ভাষার উপর অযৌক্তিক এ পণ্ডিতি প্রদর্শন কেনো?

বিধর্মীদের যারা এই এব্রিবিয়েশন জানে না তারা বুঝবেটা কী? তারা যদি একটা অফিসের কয়েকজনের নামের শুরুতে এই এমডি দেখে একটা অফিসের বহুসংখ্যক এমডি (managing director) মনে করে হাসাহাসি করে তাহলে কি তাদের দোষ দেয়া যাবে?

কেউ যদি মেডিসিন ডক্টর (Medicinae Doctor) ধরে নেয় তাতেও দোষ দেওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এটি একটি এহতেমালি বিষয়। সবাইতো আর আপনার এমডি’র মিনিং বুঝবে না। এখানেও সেই একই প্রশ্ন Muhammad বা Mohammad লেখলে অসুবিধাটা কী? কোথায় গলত?

৪.
ধরে নিচ্ছি আপনার জায়গা জমিনের বিশাল সঙ্কট। মুহাম্মদ নামটা লেখার মতো জায়গা আপনার নেই! যাকগে, আপনি যখন এব্রিবিয়েশন করবেনই তাহলে যতটুকু সম্ভব শুদ্ধভাবে করছেন না কেনো? কেনো এই অশুদ্ধর চর্চা?

আমার দাবি রাসূলে আরাবির নাম হিসেবেই যদি লেখেন তবে পুরো মুহাম্মাদই লেখবেন। আর সংক্ষেপণের প্রতীক হিসেবে(ঃ) এটা বাদ দিন। এটা সংক্ষেপ’র চিহ্ন না। বাংলাভাষায় সংক্ষেপের চিহ্ন কী সেটা জেনে নিন। প্রয়োজনে বাংলা একাডেরি দ্বারস্থ হোন।

তবে তার দরকার নেই। আমিই বলে দিচ্ছি। একান্তই যদি সংক্ষেপণ করবেন তাহলে ডট (.) ব্যবহার করুন। মোহাঃ/ মুঃ মোঃ না লেখে মুহা. বা মো. লিখুন। কিছুটা না হয় বিশুদ্ধতার কাছে আসুন। অশুদ্ধ চর্চার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসুন। অনুরোধ থাকলো।

৫.
এই যে আরেকটি বিষয়, মুহাম্মাদ অমুক আহমদ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দু’টি নামকে একসাথে নিয়ে আসা। টু ইন ওয়ান উইথ রিপিটেশন। নামে আহমদ থাকলে তো নবিজির নাম থাকলো। আবার মুহাম্মদ লাগানোর দরকার কি!

অথবা মুহাম্মদ থাকলে আহমদের দরকার কি? অনেকেতো তিনটা নামও ব্যবহার করেন! এই অতিরঞ্জনের কোনো মানে আছে? আর মহিলাদের নামের শুরুতে মুসাম্মাত লেখা আরেক সপ্তাশ্চর্যের ব্যাপার। মুসাম্মাত’টা এলো কোত্থেকে সেটার ইতিহাস অজানা?

মুসাম্মাত আরবি শব্দ। ইসমে মাফউলের সিগা। যার অর্থ, নামকৃত। নামের প্রারম্ভে এটা নিয়ে আসার কী যৌক্তিকতা? সম্ভব হলে আখতার, খাতুন আর বেগমের কাহিনীটাও জানাবেন।

৬.
সা. > আ. > রা. > রাহ. এ এব্রিবিয়েশনগুলোর ব্যাপারেও একই কথা। কেন করা হচ্ছে এসব? কেন এতো কিপ্টেমি। হাদিসের কিতাবাদীতে হাজার হাজারবার মুহাম্মাদ নাম আসে এবং প্রতিবারই পরিপূর্ণভাবে صلی اللہ علیہ وسلم লেখা হয়ে থাকে।

মুহাদ্দাসিনরা কেন এব্রিবিয়েশের পথে হাঁটেন না? একেতো এব্রিবিয়েশন, তদুপরি ব্র্যাকেট’র ইসতেমাল। বিশেষ করে সা.- এর ক্ষেত্রে—এটা মোটেও ঠিক না। মুহাম্মাদ রাসূল এর নাম শুনার সাথে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা ওয়াজিব।

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির অকল্যাণ হোক, যার নিকট আমার নাম উচ্চারণ করা হলো, অথচ আমার উপর দুরুদ পাঠ করেনি’ – [তিরমিযি]। তো একে ব্র্যকেট ইউজ করে খাটো করবো কেনো?

অগোছালোভাবে কিছু কথা বললাম। ভুল হলে শুধরে দেবেন। শুদ্ধ হলে আসুন! ছড়িয়ে দিই। আমলে নিই। পুরোটা পরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্রেকিং নিউস ! স্বৈরাচারী হাসিনার নতুন ফোন কল ফাঁস হইছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৮



ব্রেকিং নিউস ! স্বৈরাচারী হাসিনার নতুন ফোন কল ফাঁস হইছে।যারা এখনো শুনেন নাই তাদের জন্য লিংক দিয়ে দিচ্ছি শুনেন ,কসম খোদার বেপক বিনোদন পাবেন।আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় অফিসে টোকাইরা হাগু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×