somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূত্রবিসর্জন ও ধর্মমন্ত্রণালয়ের ভণ্ডামি

০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেখানে সেখানে মূত্রবিসর্জন ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে আরবি ভাষা ব্যবহারের অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন। ক’দিন ধরে শুরু হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে আরবি ভাষায় দেয়াল লিখন। প্রকাশ পাচ্ছে 'যেখানে সেখানে প্রস্রাব না করার' বার্তা।

ভাবছিলাম এ বিষয়ে কিছু একটা লিখবো। ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছেটা ঘুরে যায়। কিন্তু না লিখে পারছি না। একটু দেরিতে হলেও লিখতে হলো। আমাদের দেশের সাংসদ-মন্ত্রীরা যা শুরু করছেনে তাতে আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের হাল-হকীকত কতটুকু চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিলো। আমরা লক্ষ্য করেছি, কিছুটা কাজও হয়েছে। এবং সাথে সাথে লক্ষ্য করলাম সরকারের মন্ত্রীদের অদূরদর্শী কর্মকাণ্ডও। দেখলাম তাদের মেধাশূণ্যতার হালচাল।

বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের একটি ভিডিও ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাচ্ছে। এতে তিনি বলছেন, ‘দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরের মসজিদগুলোতে প্রস্রাবের জায়গা থাকলেও অনেকে বাইরে প্রস্রাব করছে। 'এখানে প্রস্রাব করিবেন না' লেখা দেয়ালেও লোকে প্রস্রাব করছে’।

আমরা বরাবরই এমন কিছু আত্মঘাতি কাজ করি যেগুলো হয় ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক, হয় ধর্মের প্রতি চরম ধৃষ্টতা। ধর্মমন্ত্রণালয় যত্রতত্র প্রস্রাব বন্ধে যে উদ্যোগটি নিয়েছে সেটি কোনো বিবেকবান, রুচিশীল ও ধর্মপ্রাণ মানুষ মেনে নিতে পারে না। বিশেষ করে ৯০ভাগ মুসলমানের দেশে এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ভিডিওটিতে বলা হয়েছে, ‘৯০ ভাগ মুসলিম-অধ্যুষিত বাংলাদেশে আরবি একটি পবিত্র ভাষায় হিসেবে বিবেচিত, যদিও খুব কম লোকই এ ভাষা জানেন বা বুঝেন। তাই প্রকাশ্যে প্রস্রাব না করার বার্তাটি রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোতে আরবি ভাষাতে লিখে দিচ্ছেন’।

ভাবতে আবাক লাগে, আমাদের চিন্তা-চেতনা আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে! প্রস্রাব বন্ধে কি আর কোনো পথ ছিলো না? আর কোনো কৌশল পাওয়া গেলো না? একটি ভাষার অপব্যবহার করতে হবে কেনো? আমরা এতোটা খারাপ কেনো? বিশ্বের কাছে কি আদৌ আমরা ভালো কিছু জানান দিতে পারবো? নাকি বস্তাপচা আইডিয়ার প্রসবই করে যাবো?

মানবজাতির সর্বপ্রকার সমস্যা সমাধানের একমাত্র ঠিকানা ঐশিগ্রন্থ ‘আলকুরআন’। আমরা জানি এ মহাগ্রন্থটি আরবি ভাষায়। অবর্তীণ হয়েছে বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. এর উপর। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আরবি ভাষার প্রতি মানুষের দুর্বলতা থাকবে। আরবি ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবে। কিন্তু এ বিষয়টিকে পুঁজি করে আরেকটি ফায়দা হাসিলের কাজ কেনো করতে হবে?

সরকারের পক্ষ থেকে যথাস্থানে পাবলিক টয়লেট বানিয়ে দিলেই তো হয়ে যায়। এটা তো জটিল কিছু না! তখন আর কেউ যেখানে সেখানে প্রস্রাব করবে না। এর জন্য একটি ভাষাকে পুঁজি বানিয়ে ভণ্ডামো করার তো কোন প্রয়োজন দেখছি না?

‘কোথাও কোথাও আবার দিকনির্দেশক চিহ্নসহ আরবির পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা হচ্ছে : '১০০ হাত দূরে মসজিদ' অর্থাৎ বলে দেয়া হচ্ছে যে সেখানে গেলে প্রস্রাবের জায়গা পাওয়া যাবে’।

ধর্মমন্ত্রীর কাছে আমার প্রশ্ন, মসজিদগুলোকে কি আপনার বাপের টাকায় বানানো? মসজিদকে পাবলিক টয়লেট বানাতে চান? মসজিদ কি প্রস্রাব-পায়খানা করার জাগা? এতো ফাউল চিন্তা আপনার মাথায় কীভাবে আসলো? মসজিদ হলো এবাদতখানা। এখানে মুসল্লীরা তাদের প্রয়োজনমতো হাজত পুরা করবে।

এতে আরো বলা হয়, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এই অভিনব উদ্যোগ ইতিমধ্যেই দারুণ কার্যকর হয়েছে’। এটাও একটা ভুল কথা। এ কার্যকর স্থায়ী না। কারণ মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিয়েছেন আপনাদের ভেলকিবাজী। কিছুদিন পর যখন সবাই যেনে যাবে আসলে এটা ছিলো একটি কৌশলমাত্র। আরবিতে প্রস্রাব না করার কথাই লিখা ছিলো। তখন দেখা যাবে, আরবির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা কমে গেছে। ভীতির অনুভূতি লুপ্ত হয়ে যাবে। কোথাও আরবি লেখা দেখলে সম্মান করবে না। এমনকি যারা আরবি বুঝে না তারা যখন কোথায় কুরআনের আয়াত পড়ে থাকতে দেখবে তখন কিছু মনে করবে না। একটা সময় কুরানের আয়াতের উপর দিয়ে হাটলেও বুঝবে না যে, এটা ছিলো কুরআনের আয়াত! এর দায়ভার কে নিবে? আসলে আপনাদের এ ভাবনাটি সম্পূর্ণ উদ্ভট এবং বিকৃত মস্তিষ্কের কাণ্ডজ্ঞানহীন অসত চিন্তাধারা।

সবশেষে বলবো, দেশের জন্য ভালো কিছু করুন। এ দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের। একটু বুঝে-শুনে চিন্তা-ফিকির করুন। মাথায় যাই আসলো তাই করে ফেলবেন! এটা কিন্তু ঠিক না, লোকে পাগল বলে। আর মন্ত্রণালয়ের যদি কোনো কাজ থাকে না তাহলে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিন। মানুষের কাতারে আসেন। মানুষ হন।
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×