"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" এই ধারণা বিক্রয় করিয়া কতক মনুষ্য বাজার মাত করিয়া রাখেন। এই ব্লগটাকেও তাহারা মাত করিয়া রাখিয়াছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক, বাহক ও লালনকারী বলিয়া নিজদিগকে প্রকাশ করিতে উহারা কোনরূপ শংশয় করেননা। ইহা নিঃসন্দেহে একটি মহত্ কর্ম। আমরা উহাদিগকে এরূপ কর্মে লাগিয়া থাকিবার জন্য সাধুবাদ জ্ঞাপন করি। ব্লগ-লিখন যে একটি ইন্টারনেট শিল্প তাহা উহাদের কল্যাণে এই ব্লগ সাইটে নতুন মাত্রা লাভ করিয়াছে।
যাহা হউক, আমি অদ্য পর্যন্ত "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" কি তাহা বুঝিতে সক্ষম হইয়া উঠিতে পারি নাই। ইহার মূল কারন ব্যক্তিগত ভাবে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করিতে পারি নাই এবং উহা দেখিবার সামর্থও আমার হয় নাই। আর যাহারা সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করিয়া থাকেন তাহারাও কখনো এই চেতনার কথাটা উন্মুক্ত করিয়া বলিয়া দেন নাই। উহারা সব সময় "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" বাগরীতিটি ব্যবহার করিয়া থাকেন। কিন্তু চেতনাটি কি ছিল তাহা বলিয়া আমাদিগের অজ্ঞতা দূর করিবার চেষ্টা করেন নাই।
ব্যক্তিগতভাবে এই অর্বাচীন বালক কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে দেখিবার সৌভাগ্য অর্জন করিতে পারিয়াছে। বড় হইবার পর একদিন শুনিলাম আমাদিগের গ্রামের একলোক মুক্তিযোদ্ধা। দরিদ্র মনুষ্যটি অন্যদের ক্ষেত্রে শ্রমিকের কর্ম করিয়া কোনরূপে জীবিকা নির্বাহ করিয়া থাকে। তাঁহাকে কদাপিও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলিয়া পরিচয় দিতে আমি দেখি নাই। তাহার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনিবারও সুযোগ হয় নাই। ইহা ছাড়াও বড় হইবার পর আরো জানিলাম আমাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এবং আমাদিগের দূর সম্পর্কের ভগিনীপতিও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দলপতি ছিলেন। তাঁহাকেও আমি কখনো মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনার কথা বলিতে কদাপি শুনিতে পাই নাই। আমার মাতার ৪ জন পিসতুতো ভাই যুদ্ধপূর্ব কালে ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন যাহারা যুদ্ধ শুরু হইতেই মুক্তিযোদ্ধাদের দলে ভিরিয়া গিয়াছিলেন। ইহাদেরকেও আমি কদাপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলিতে শুনিতে পাই নাই। ইহারা যে কেহ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাহাও আমি অবগত হইয়াছি তখন যখন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িতে শুরু করিয়াছি। আরেকবার এক মুক্তিযোদ্ধার গৃহসঙ্গী (হাউস মেট) হইবার সৌভাগ্য হইয়াছিল যিনি আহসান উল্লাহ্ কারিগরি কলেজ (বর্তমানকালের বুয়েট) হইতে পাশ করা প্রকৌশলী। তবলীগ জামাআতের সাথে থাকিয়া লম্বা শশ্রু ধারণ করিয়াছেন বলিয়া মুক্তিযুদ্ধকালে মাতৃগর্ভেও আসেন নাই এমন কিছু "মুক্তিযোদ্ধা" কর্তৃক অপমানিত হইয়াছিলেন। এই ভদ্রলোকও এই অর্বাচীনকে কদাপি বলেন নাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল। স্বদেশের বাহিরে আসিয়া আরেক মুক্তিযোদ্ধার সাথে পরিচিত হইলাম যিনি মসজিদের নামাজের আহবানকারী। এই ভদ্রলোক, যাহাকে আমরা চাচা বলিয়া সম্বোধন করি, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাহা আমি কষ্মিনকালেও কল্পনা করিতে পারি নাই। একদিন একজন ভ্রাতা জানাইলেন আমাদিগের চাচা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। চাচার প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল তাহা আরো বাড়িয়া গেল। চাচার সহিত বাক্যালাপ করিয়া জানিলাম যে তিনি মেজর রফিকের সেক্টরে যুদ্ধ করিয়াছেন। আর চাচা আমাদের "শেখ মুজিব" বলিতে পাগল। চাচাকে আমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম "কিসের লাগিয়া আপনারা যুদ্ধ করিয়াছিলেন?" তিনি একখানা উত্তর দিয়াছিলেন, যাহা আমি আপাতত পাঠকদিগকে জানাইতেছিনা? তবে কোন বিশেষ চেতনার কথা চাচা আমাকে জানাইতে অপারগ হইয়াছিলেন।
তাই অদ্য "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" বণিকদিগের কাছে এই অর্বাচীন বালকের জানিবার ইচ্ছা, "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" বলিতে আপনারা প্রকৃতই কি বুঝাইয়া থাকেন? অনুগ্রহপূর্বক প্রকৃত অর্থটা আমাদিগকে জানাইয়া বাধিত করিবেন, যাহাতে আমাদিগের অর্বাচীনতা দূরীভূত হইয়া যায়, আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরাও সমুদ্ভাসিত হইয়া উঠিতে পারি।
যাহারা মন্তব্য করিবেন তাহাদের জন্য দ্রষ্টব্যঃ "মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" এই ধারণাটার সংজ্ঞাই শুধু মন্তব্যে প্রদান করিবেন। অন্যকিছু লিখিলে তাহা মুছিয়া ফেলিতে বাধ্য হইব।
বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধ বণিকরা খুব সরব থাকেন। আশা করি তাহারা আমাদিগকে "মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা" সম্পর্কে অবগত করাইয়া বাধিত করিবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:২৫