নিশি রাতের আতঙ্ক!!!
রাত আনুমানিক দুটো আড়াইটা
হবে। একটা কট মট, কট মট শব্দে
ঘুম বেঙ্গে গেল। ঘুম বাঙ্গতেই খেয়াল
হলো মাথার উপর ঘুরতে থাকা
ফ্যানটা আর ঘুরছে না। আর রুমটা
কুটকুটে অন্ধকার। বুঝতে আর
অসুবিধা হলোনা লোডশেডিং হয়েছে।
এইদিকে শরিলটা গামে ভিজে
চটচটে হয়েগেছে। ভাবলাম একটা
মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতপাখা টা
খুঁজে দেখবো কিন্তু যেই উঠতে যাবো
আবার সেই কট মট শব্দটা কানে
ভেসে আসলো।
ভালো করে খেয়াল করে দেখি
আমার খাটের নিচ থেকেই শব্দটা
আসছে। কিন্তু খাটের নিচে তো
তেমন কিছু নেই যা থেকে এধরণের
শব্দ আসবে। তবে এই
শব্দটা কিসের। ইঁদুর বা বিড়াল
নয়তো। কি জানি হতেও পারে।
.
আসলে এই বাড়িটাতে আমি
নতুন। এইতো গত
দু দিন আগেও একটা মেসে দিব্বি
সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু
হঠ্যাৎ মেস মালিক যে ভাবে
মেস ছাড়ার হুকুম দিলেন ঐ সময়
তো মাথাই ঠিক ছিলনা।
শেষমেষ এই ঘরটার খোঁজ পেলাম।
ভাড়াটাও তুলনামুলক কম।
এমন সুজোগ টা আর হাতছাড়া
করলাম না। তাইতো আজই উঠে
পড়লাম। ঘরটা মোটামুটি গুছিয়ে
উঠতে রাত প্রায় এগারো টা বেজে
গিয়েছিল। কোনো রকমে রাতের
খাবার শেষ করে বিচানায় গা
এলিয়ে দিতেই ঘুম নেমে আসলো চোখে।
এর পরেরটা তো ইতোমধ্যে বলেই
ফেলেছি...
.
.
আবারও সেই কট মট শব্দ। কিন্তু
এবার আমার খাটটাই একটু খানি
কেঁপে উঠলো। তবেকি আসলেই
বিড়াল। কিন্তু বিড়াল কি খাট
নাড়াতে পারবে! চোর নয়তো!
বুকে একটু সাহস এনে জিঙ্গেস
করলাম....
-কে.. কে এখানে.?
একটু নিঃশ্চুপ থেকে ভীত
গলায় কেউ জবাব দিল...
--আমি...
-কিন্ত কে আপনি?
--আমার ঘরে এসে বলিস আমি
কে..?
-এ টা আপনার ঘর?
-হ্যা, নয়তো কাররে.....
.
শেষ বারের কন্ঠস্বরে গম্ভিরতার ছাপ।
আমি চুপচাপ শুয়ে আছি আর
ভাবছি, আমার দিব্বি মনে আছে
ঘুমানোর আগে আমি দরর্জা লাগিয়ে
শুয়েছি তবে এই ব্যাটা ডুকলো
কি করে। হতে পারে কোনো পাগল।
কারণ ঘরটি ভাড়া নেয়ার আগে
মালিক বলেছিলেন ঘরটিতে গত
এক বছরে কেউ থাকতে আসেনি।
ঘরটা খালিই ছিল।
হঠ্যাৎ চোখ পড়লো পাশের জানালাটিটে।
তীব্র অন্ধকারেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে
ওখানে কেউ দাড়িয়ে আছে। ঠিক
দাড়িয়ে নেই ঝেন হাওয়ায় ভাসছে।
একটা কালো ছায়া মুর্তি।
বুকের বেতর টা ঝেন ধপ করে
কেঁপে উঠলো। তখনি খাটের নিছের
লোকটি বললো,
--আরে রমেশ বাবুযে। আসুন দাদা
ভেতরে আসুন।
"বহিরে থাকা লোকটি গলায় গম্ভিরতার
ভাব এনে বললেন,
__তা বাপু আপনি কোথায়?
--আমি এইতো খাটের নিছে, আপনিও
আসুন্না একটু গল্প করি।
__মাথার উপর একটা জান্ত মানুষ
থাকলে গল্প কি করে করবো?
.
"এই কথাটি শুনা মাত্র আমার
হৃদকম্প দশ গুন হারে বেড়ে গেল।
বুঝতে পারলাম তারা দুজনই
অশরীরী কোনো প্রেত.. এইদিকে
তাদের কথোপকথন অবিরত
চলতে আছে...
--আরে দাদা ভেতরেই আসুন্না।
ছোকরাটা ভালোই। আমি তো
ভাবছি ওকে আমাদের দলেই ভিড়িয়ে
নিব... হা হা হা।
__দলে ভিড়াতে চাও ভালো কথা,
কিন্ত ও রাজি হবে তো?
--রাজি হবেনা কেন গো। আমি
যদি হতে পারি তবে ও ওহবে।।।
__হে হে, তবে আর দেরি কিসের
পাসের রুমেই তো আমার সেই
দড়িতা টাঙ্গানো আছে যে টায়
আমি বৃষ্টির দিনে বেঝা কাপড়চোপড়
শুকোতে দিতুম।
--কিন্তু দাদা আপনার ঐ দড়িটা
দিয়েই তো আমি... আমি আমার কাজ
সেরে ছিলাম, হা হা হা।
__আরে মশাই আপনাকে নিয়ে
তো আর পারা গেল না...
--আরে দাদা রাখুন তো এসব।
বলুন তো আর কি উপায়ে ছোকরা
টাকে দলে ভেড়ানো যায়...
__হ্যাঁ উপায় একটা আছে। আমি
যে বিষ খেয়ে মরে ছিলুম ঐ বিষের
বোতল টাতে খানিকটা বিষ এখনো
আছে। ঐ টুকু খেলেই ছোকরার
কাজ হয়ে যাবে, হা হা হা....
কিন্তু বোতলটাযে কোথায় রেখে
ছিলুম তা বাপু বেমালুম ভুলে গেছি।
--তা কি বলছেন দাদা, আসুন আসুন
বোতলটা খুঁজে দেখি...
:
এই দিকে খাটের উপর শুয়ে থাকা
আমার যে কি অবস্থা হচ্ছিল তা
একমাত্র আমিই জানি!
দুজন অশরীরী আমাকে
তাদের দলে ভেড়াতে বিষের বোতল
খুঁজছে। আর ফেলেই তো আমি...
নাহ আর ভাবতে পারছি না।
মনে মনে সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করতে
লাগলাম। আর ঠিক তখনি মাথার
উপরের সিলিং ফ্যানটা হনহন করে
ঘুরতে শুরু করলো। বুঝতে পারলাম
বিদ্যুৎ চলে এসেছে আর এক
মুহূর্ত দেরি না করে মাথার পাশের
বেড চুইসে চাপ দিলাম।
সঙ্গে সঙ্গেই লাইট জ্বলে উঠলো।
আর যা দেখলাম মুহূর্তের মধ্যেই
জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল দুটি
কালো ছায়া মুর্তি!!!
:
ঐ রাতে আর এক ফোটাও ঘুমোতে
পারিনি। কি করে ঘুমাবো বলুন
আর একটু হলেই তো.... নাহ থাক
যা হবার হয়েই গেছে। বেঁচে যে
আছি এটাই তো অনেক। সকাল
হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সকাল হতেই তল্পিতল্পা নিয়ে
বের হয়ে গেলাম। কারণ নিজে
বাঁচলেই তো বাপের নাম....
পরে অবশ্য ঐ বাড়ির রহস্য জানতে
দু-একজনকে জিঙ্গেস করেছিলাম।
তারা বেশি কিছু বলতে পারেনি।
শুধু এতটুকুই বলেছিল "বছর
পাঁছেক আগে ঐ বাড়িতে দুজন
মানুষ মরেছিল, একজন বিষ খেয়ে
আর আরেক জন গলায় ফাঁস নিয়ে।"
:::
:::
সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ৮:৩৯