-আমি তোমাকে ভালোবাসি।
(প্রিয়ন্তি)
=কিন্ত! (নাজিম)
-কিন্তু কি?
=তোমাকে যদি আমার মায়ের পছন্দ
না হয় তবে তোমাকে আমি কখনো
আপন করতে পারবো না।
-ওহ এই কথা। তোমার মাকে আমি
নিজের মায়ের মত ভালোবাসবো
সেবা যত্ন করে তার মন যুগিয়ে নিব।
তিনি অবশ্যই আমাকে পছন্দ করবেন।
=কিন্তু?
-এভাবে আর এত কিন্ত কিন্তু করোনা।
আমাকে তোমার মায়ের সাথে দেখা
করাও। দেখাযাক কি হয়।
:
অতঃপর নাজিম প্রিয়ন্তিকে তার
মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
প্রথম দেখাতেই প্রিয়ন্তিকে তার
মা বেশ পছন্দ করলো। ফলে তাদের
এক হওয়ার আর কোনো বাধা রইলো
না। তাদের যেদিন বিয়ে সেই দিন
নাজিম প্রিয়ন্তিকে গোপনে বলেছিল,
"আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি
আশা করি তুমি আমাকে কখনো
আমার মায়ের থেকে আলাদা করার
চেষ্টা করবেনা। তুমি কথা দাও?"
.
প্রিয়ন্তি সেদিন নাজিমকে কথা
দিয়েছিল সে তার নিজের মায়ের
মতই শ্বাশুরিকে ভালোবাসবে।
সে তার কথা রেখেও ছিল। ভালোই
চলতে লাগলো তাদের সাংসারিক
জীবন। এক বছরের মাথায় তাদের
ঘর আলোকিত করে জন্ম নিল একটি
ফুটফুটে ছেলে সন্তান। তাদের সুখের
সংসার আরো সুখের হয়ে উঠলো।
.
দেখতে দেখতে সাত বছর কেটে গেল।
নাজিম প্রিয়ন্তির ছেলে রিহাম ছয়
বছরে পা দিয়েছে।
প্রিয়ন্তির ইচ্ছা ছেলেকে সে ডাক্তার
বানাবে। অনেক আগে থেকেই সে
তার ছেলের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা
করে রাখলো। এখন প্রিয়ন্তির
একটিই সখ ছেলেকে শহরে কোনো
ভালো স্কুলে ভর্তি করাবে।
কিন্তু এতো ছোট ছেলেকে তো আর
আলাদা রাখা যায় না তাই নাজিমকে
শহরে বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য চাপ
দিতে লাগলো।
নাজিম প্রথমে রাজি না হলেও পরে
রাজি হয়। কিন্তু বাদসাধে তার মা'কে
নিয়ে। প্রিয়ন্তি কিছুতেই নাজিমের
মা'কে তাদের সাথে নিতে রাজি
হচ্ছিল
না। এই নিয়ে পারিবারিক অশান্তির
সৃষ্টি হয়। প্রিয়ন্তি ভুলে যায় তার
ওয়াদার কথা। অনেক দফারফার
পর নাজিমের মা বলেন, "তিনি
গ্রামের মানুষ আর তিনি গ্রামেই
থাকতে চান। তাই নাজিম যেন
প্রিয়ন্তিকে নিয়ে শহরে ভাড়া বাসায়
চলে যায়।"
এইদিকে নাজিম পারিবারিক
কলহে একদম দুর্বল হয়ে পড়েছিল
তাই অগ্যতায় পড়ে প্রিয়ন্তিকে নিয়ে
শহরে যেতে বাধ্য হয়।
.
ভাড়া বাসায় ওঠার পরে দিনটা কোনো
রকমে ব্যস্ততায় কাটায় নাজিম।
কিন্তু রাতের বেলায় একদমই ভালো
লাগছিলনা তার। মায়ের কথা খুব
মনে পড়ছিল আর ঘুমও আসছিলনা।
দীর্ঘক্ষণ পর তার চোখে তন্দ্রা নেমে
আসলো। আর সে স্বপ্নে দেখলো,
"বিশাল একটি নদী। নদীর একপাড়ে
নাজিম দাঁড়িয়ে আছে আর অপর
পাড়ে তার মা। তার মা বিষন খুশি।
হেঁসে হেঁসে যেন কার সাথে কথা
বলছেন।
নাজিম তার মাকে দেখে মা-মা বলে
ঢাকলো কিন্তু তার মা শুনতে পেল
না। নাজিম তার মায়ের কাছে যাওয়ার
জন্য নদীতে যাপ দিয়ে সাঁতার কাটার
চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু না।
সে পারছেনা। কোনো অদৃশ্য এক
শক্তি তাকে পানির নিচে টেনে নিয়ে
যাচ্ছে। আর সে ঐ অবস্থাতেও মা-মা
বলে চিৎকার করতে লাগলো।"
.
অদ্ভুত এই স্বপ্ন দেখে নাজিমের ঘুম
ভেঙে গেল। নিজেকে তার অপরাধী
মনে হচ্ছে। বাকি রাতটাতে আর
একটুও ঘুমাতে পারলোনা সে।
ভোরবেলা ফজরের নামাজ পড়েই
নাজিম গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
বাড়ি পৌছাতে প্রায় সকাল ১০টা
বেজে গেল। বাড়ি পৌছেই নাজিম
মা-মা বলে চিৎকার দিতে লাগলো।
তার চিৎকার বাতাসে মিলিয়ে গেল।
কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল
না। নাজিম ধীর পায়ে তার মায়ের
রুমের দিকে এগিয়ে গেল।
হালকা ধ্বাক্কা দিতেই রুমের দরজা
খুলে গেল। কিন্তু কোথায় তার মা।
রুম তো একদম খালি।
মূহুর্তেই নাজিমের বুকের ভেতরটা
কেমন যেন করে উঠলো।
ঠিক তখনি সে তার পিঠে কারো
মৃদু স্পর্শ অনুভব করলো। পিছনে
ফিরে দেখতে পেল তার মা।
নাজিম তার মায়ের পা-দুটো জড়িয়ে
ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
"মা তুমি আমায় মাফ করে দাও।
তোমাকে ছেড়ে যাওয়া আমার উচিৎ
হয়নি মা। মা আমি তোমাকে অনেক
অনেক ভালোবাসি মা। অনেক অনেক
ভালোবাসি।"
নাজিমের মা ও আর নিজেকে সামলে
রাখতে পারলেননা। তিনিও অজর
ধারায় কাঁদতে শুরু করলেন।
তিনি তার ছেলেকে বুকে জড়িয়ে
ধরলেন। আলতো তার ছেলের
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
"আমি জানতাম বাবা তুই আমাকে
ছাড়া থাকতে পারবিনা। আমি
জানতাম তুই আমার বুকে ফিরে
আসবি।"
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪