somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাই (পথশিশু থেকে ডাক্তার)

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত তখন অনেক হয়েছিল। মদ খেয়ে
টলতে টলতে বাড়ি ফিরছিল রাকিব।
জীবনের প্রথম মদ খেয়েছে আজ।
অবশ্য একটা কারণও আছে এর পিছনে।
নীলার সজ্ঞে আজ তার ব্রেকাপ
হয়েছে। তাই মনের দুঃখে জীবনের
প্রথম মদ খাওয়া।
রাত অনেক হওয়ায় রাস্তায় তেমন
গাড়ি নেই। তাই রাস্তার মাঝ দিয়েই
টলতে টলতে পথচলছিল সে।
মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি পাশ
কাটিয়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু সেই
দিকে তার কোনো
ভ্রুক্ষেপ নেই। সে টলতে টলতে হাটতে
লাগলো আপন মনে। এমন সময়
রাস্তার বাম পাশ থেকে কারো মৃদু
ধ্বাক্কায় রাকিবের টলতে থাকা
দেহটা
ছিটকে পড়লো রাস্তার এক পাশে।
পাশ ফিরতেই দেখতে পেল একটি
গাড়ি দ্রুত বেগে চলে যাচ্ছে
আর একটু হলেই রাকিবের গায়ের
উপর দিয়েই চলে যেত গাড়িটা।
এতক্ষণে তার মনে হল কে সেই
মাহান ব্যক্তি যে তাকে বিপদ থেকে
রক্ষা করলো। দেখতে পেল তার
পাশেই দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণ দেহের
সাত-আট বছরের ছোট্ট একটি ছেলে।
মৃদু হেঁসেই রাকিব তার ভাবনার
জগতে পা বাড়ায়,
"হায়রে মানুষ! কেউ কাউকে মৃত্যুর
মুখে ঠেলে দেয় আর কেউ নিশ্চত
মৃত্যু থেকে বাঁচায়, হায়রে মানুষ।"
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রাকিব হাত
বাড়িয়ে ঢাকে ছেলেটিকে।
.
__এই ছেলে এই দিকে আয়।
--জ্বী স্যার।
__তোর নাম কিরে?
--শফিক।
__থাকিস কোথায়?
--পথেঘাটে থাকি স্যার।
__তোর বাড়ি নেই?
--না স্যার।
__আর বাবা মা?
--তারাও নাই।
.
ছেলেটির কথায় রাকিব তার বুকের
ভেতর কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা
অনুভব করলো। মনে পড়ে গেল তার
আদরের মৃত ছোট ভাইটির কথা।
বছর পাঁচেক আগে এক সড়ক
দুর্ঘটনায় রাকিবের বাবা, মা আর
আদরের ছোট ভাইটি মারা যায়।
আর এখন এই পৃথিবীতে আপন
বলতে তার কেউই নেই। যা একজন
কে আপন ভেবে ছিল সেও তাকে
ছেড়ে চলে গেল।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রাকিবের
চোখ বেয়ে দু'ফোটা অশ্রু গড়িয়ে
পড়লো।
রাকিবের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া
অশ্রুধারা দু-হাতে মুছে দিল শফিক
নামের পথশিশুটি। রাকিব শফিককে
জড়িয়ে ধরলো। জড়িয়ে ধরে বললো,
"তুই কি আমার সাথে যাবি, ভাই হয়ে
থাকবি আমার সাথে। আমারও যে
পৃথিবীতে আপন বলতে কেউই নেই।"
শফিক আস্তে করে মাথা নেড়ে
সম্মতি জানালো।
.
রাকিব, শফিককে তার সাথে করে
বাসায় নিয়ে গেল। পৈত্রিক সম্পত্তি
বলতে তার এই একটি মাত্র ঘর আর
ঘরের পাশে এক খন্ড খালি জমি।
এত টুকুতেই সে খুব সন্তুষ্ট।
রাকিব শফিককে কাছের একটি স্কুলে
ভর্তি করে দিল। ভালোই চলতে
লাগলো
দুই ভাইয়ের দিনকাল। শফিক স্কুলে
পড়ালেখা করে আর রাকিব একটা
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সামান্য
বেতনে
চাকুরী করে।
:
দেখতে দেখতে কয়েকটি বছর কেটে
গেল। শফিক সায়েন্স গ্রুপ থেকে
কৃতিত্বের
সাথে এসএসসি পাশ করেছে।
এখন রাকিবের জীবনের দুটি
স্বপ্ন, শফিককে সে ডাক্তারি পড়াবে
আর বাড়ির পাশের খালি জমিতে
একটা ছোট্ট স্কুল নির্মাণ করবে
যেখানে পড়বে অসহায় দরিদ্র শিশুরা।
কিন্তু রাকিবের পক্ষে স্বপ্ন গুলো
পূরণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরার
পথে এক্সিডেন্ট করলো রাকিব।
এই দিকে ভাইয়ের এক্সিডেন্টের
খবরে শফিকের মাথায় যেন আকাশ
ভেঙে পড়লো। ছুটে গেল হাসপাতালে।
গিয়ে দেখলো মুমূর্ষু অবস্থায়
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে
রাকিব। তার পুরো শরীরে ব্যান্ডেজ।
এমন অবস্থা দেখে শফিক একেবারেই
ভেঙে পড়লো। রাকিবের পরিবার
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল।
তবে কি রাকিবও তেমনি ভাবে......
নাহ শফিক সেই সময়ে আর কিছুই
ভাবতে পারছিলনা। শুধু চোখ বেয়ে
অঝর ধারায় গড়িয়ে পড়ছিল কিছু
দুঃখের নোনাজল।
সৃষ্টি কর্তার অশেষ কৃপায় সে
যাত্রায় রাকিব প্রাণে বেঁচে যায়।
কিন্তু মস্তিষ্কে অতিরিক্ত
রক্তক্ষরণের
ফলে হারিয়ে ফেলে দৃষ্টি শক্তি।
হাসপাতাল থেকে রিলিজ হয়ে
যখন বাসায় ফিরে তখন নিজেকে
সে অসহায় ভাবতে
লাগলো। এইদিকে শফিকের পড়ালেখা
প্রায় বন্ধ হবার পথে। কিন্ত নাহ
রাকিব এত সহজে হার মানলো না।
তার দুটি স্বপ্নের একটিকে বিসর্জন
দিয়ে দিল। বাড়ির পাশের খালি
জমিটা
বিক্রি করে কিছু টাকা দিয়ে
শফিককে
মেডিকাল কলেজে ভর্তি করে দিল
আর বাকি টাকা ব্যাংকে রেখেদিল
যাতে পরবর্তীতে শফিকের
পড়ালেখায় আর কোনো সমস্যা
না হয়।
:
১০ বছর পর,
রাকিব এখন অপারেশন থিয়েটারে।
তার চোখ অপারেশন চলছে। অপারেশন
করছে তার ছোট ভাই চক্ষু বিশেষজ্ঞ
ডাক্তার শফিক। প্রায় আধাঘণ্টা
অপারেশনের পর সুস্থির নিঃশ্বাস
ফেলেন ডাক্তার।
অপারেশন সফল হয়েছে। রাকিবের
চোখে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।
সাত দিন পরেই ব্যান্ডেজ খোলা হবে।
তার ভাই আবার চোখে দেখতে পাবে।
ভাবতেই ডাক্তার শফিক আনন্দে
কেঁদে দিলেন।
আরো ভাবতে লাগলেন ভাইয়ের
জন্য যে সারপ্রাইজ তিনি তৈরি করে
রেখেছেন তা দেখে ভাই আসলেই
খুশি হবেন কিনা?
.
সাতদিন পর রাকিবের চোখের
ব্যান্ডেজ
খোলা হলো। রাকিব আবার সব
দেখতে পাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছে তার
ডাক্তার ভাইকে। রাকিব ছুটে
গিয়ে শফিককে জড়িয়ে ধরলো।
কিন্তু শফিক কিছু না বলে গম্ভীর
ভাবে দাড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর
শফিক, রাকিবের হাত ধরে
বললো, "চল ভাইয়া তোমাকে আজ
একটা জিনিস দেখাবো।"
এইবলে শফিক, রাকিব কে সাথে নিয়ে
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়লো।
তারপর পৌচালো তাদের বাড়িতে।
বাড়িটি ঠিক আগের মতই আছে।
কিন্ত বাড়ির পাশের যে জমিটা
শফিকের পড়ালেখার জন্য বিক্রি
করেছিল সেখানে দেখা যাচ্ছে
একটি চৌচালা টিনের ঘর। শফিক
রাকিবকে নিয়ে সেই চৌচালা টিনের
ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। তারপর
দরজা খুলে ঢুকে পড়লো সেই ঘরে।
ঘরে ঢুকেই রাকিব খুব অবাক হয়ে
গেল। অনেক গুলো ছোট ছোট বাচ্ছা
সেখানে পড়ালেখা করছে।
শফিক আর রাকিব কে দেখে বাচ্চা
গুলো উঠে দাঁড়ালো। রাকিব তখনো
কিছুই বুঝতে পারেনি। সে অবাক
চোখে তাকিয়ে রইলো বাচ্চা গুলোর
দিকে। এতক্ষণে শফিক মুখ খুললো
আর বলতে লাগলো,
"ভাইয়া তুমি আমার জন্য অনেক
করেছ। আমাকে রাস্তা থেকে বুকে
টেনে
নিয়েছিলে। আমার জন্য তুমি তোমার
স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলে। তোমার
সেই স্কুল নির্মাণের স্বপ্ন। কিন্ত দেখ
ভাইয়া, আজ তোমার স্বপ্ন সার্থক
হয়েছে। এই তোমার সেই স্বপ্নের স্কুল।
দেখ ভাইয়া, এই অসহায় শিশু গুলোকে।
এদেরও যে তোমার আমার মতো
পৃথিবীতে কেউই নেই।"
এই বলে শফিক রাকিবকে জড়িয়ে
ধরলো। দুজন দুজনকে জড়িয়ে
ধরে কাঁদতে লাগলো। দুজনের চোখ
বেয়ে অঝর ধরায় গড়িয়ে পড়তে
লাগলো কিছু আনন্দ-বেদনার
অশ্রুজল। এমন সময় তারা দুজনই
থমকে গেল। তারা দেখতে ফেল
তাদের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া
অশ্রুধারা মুছে দিতে এগিয়ে আসছে
অনেক গুলি ছোট ছোট হাত। এই
হাত গুলি অসহায় শিশুদের।
:
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×