রাত তখন প্রায় সাড়ে ৩টা। বাস
থামলো আমার গন্তব্যস্থলে। নাহ
ঠিক গন্তব্যস্থল বললে ভুল হবে
এখনো প্রায় ২০ মিনিট এর পায়ে হাটা
পথ পাড়ি দিলেই আমার বাড়ি।
বাস থেকে নেমে পড়লাম। আমার
সঙ্গে আরেক জন যাত্রীও নামলো
কিন্তু তার গন্তব্য পথ আমার
পথের ঠিক উল্টো দিকে।
যাইহোক দুটি ব্যাগ একটি হাতে
ও অপরটি কাঁধে নিয়ে হাঁটা শুরু
করলাম, মাত্রতো মিনিট বিশেকের
পথ দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবো।
মিনিট দুয়ের মধ্যেই পিচঢালা মেইন
রোড অতিক্রম করে বাড়ির পথের
মাটির রাস্তায় নেমে এলাম।
দুরবর্তি ল্যাম্পপোস্ট গুলোর ক্ষীণ
আলোয় পথ চলতে অসুবিধা হচ্ছিল
না। মেঠো পথ, দুপাশেই অগনিত
গাছপালায় আচ্ছাদিত। একা একা
হাঁটছি। তাই বলে মনে কোনো ভয়
নেই। আমার চির পরিচিত পথ।
ছোট থেকে বড় হয়েছি এই পথগুলি
চলতে চলতে। মিনিট পাঁচেক হাঁটার
পর মনে হল আমাকে কেউ একজন
অনুসরণ করছে। হ্যাঁ আমি
স্পস্ট বুঝতে পারছি আমার পিছনে
কেউ আছে। এই প্রথম মনের ভিতরর
কিছুটা ভয় অনুভব করলাম।
এতোরাতে কে আমার পিছু নিবে।
মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে পিছু
তাকালাম। কিন্তু কিছুই দেখতে
পেলামনা। মনের ভয়টা যেন হাজার
গুণ বেড়ে গেল। আর যেন পা
চলতে চাইছে না। কোনো অদৃশ্য
শক্তি মনেহয় পায়ে পাথর বেঁধে দিল।
.
বিশ মিনিটের পথ প্রায় চল্লিশ মিনিট
হেঁটেছি তবু পথের শেষ নেই।
হঠাৎ করে মনে পড়ল, আমার
মোবাইলে অডিও সূরা ইয়াসিন আছে,
তা জোরে চালিয়ে দিব। কিন্তু
পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে দেখি
চার্জ নেই। মোবাইল টা বন্ধ। অনেক
চেষ্টা
করেও মোবাইল টা আর চালু করতে
পারলামনা।
ঠিক তখনি কানে ভেসে এলো তীক্ষ্ণ
কান্নার শব্দ। কেউ একজন যেন
খুব করুন স্বরে কাঁদছে। যেন হাজার
বছরের লুকিয়ে রাখা কষ্ট উজাড়
করে বের করে দিচ্ছে করুন কন্নার
শব্দে। ক্রমেই কান্নার শব্দ বাড়তে
লাগলো। মনে হলো ক্রমেই তা আমার
দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি বুঝতে পারলাম আমি
ফেঁসেগেছি।
ফেঁসেগেছি কোনো অপশক্তি বা
দুষ্ট আত্মার মায়াজালে।
তখন আমার মনে হচ্ছিল আজই
হয়তো আমার জীবনের শেষ দিন।
মা-বাবার কথা মনে পড়ে
গেল। তারা বলেন "বিপদে ধৈয্য
হারাতে নেই"। এইদিকে সেই অশুভ
মায়াকান্না ক্রমেই আমাকে গ্রাস
করে ফেলছে। নাহ আমি এত সহজে
হার মানবোনা। আমার সাথে আমার
মায়ের দোয়া আছে।
.
আয়াতুল কুরছি পড়ে মাটিতে একটি
বৃত্ত এঁকে বৃত্তের ভেতর বসে রইলাম।
কান্নার সেই করুন শব্দ থেমে গেল।
আমি বৃত্তের মাঝে বসে বসে সৃষ্টি
কর্তাকে স্মরন করতেলাগলাম।
কিছুক্ষণ পর হঠ্যাত প্রচন্ড ঝড়
শুরু হলো। মনে হচ্ছিল গাছগুলো
আমার মাথার উপর ভেঙে পড়বো।
প্রচন্ড বাতাসের বেগে ধূলী উড়া
আরম্ব করলো। একবার ভাবলাম
উঠে দোড় দেই কিন্তু সাহস
পচ্ছিলামনা।
একটি বিষয় ভালো ভাবে খেয়াল
করে দেখি, এই বাতাস, ধূলো কিছুই
আমার বৃত্ত অতিক্রম করতে
পারছিলনা।
আমি বুঝতে পারলাম আমাকে
ভয় দেখিয়ে বৃত্তের বাইরে নেয়ার
কারসাজি চলছে। আমি চুপচাপ
বসে রইলাম।
ঝড় থেমে গেল। চারিদিক স্তব্ধ
হয়েগেছে। আর তখনি ঘটলো
আসল ঘটনা। আমি আমার
চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলামনা।
আমার বৃত্তের চারদিক ঘিরে আছে
অসংখ্য চায়া মুর্তি। তারা আমার
দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
মনে হচ্ছিল হাজার বছরের পিপাসিত
তারা। আমি আর চোখ মেলে
রাখতে পারছিলামনা। অন্ধকারের
মাঝে এক অন্য অন্ধকার আমাকে
গ্রাস করে ফেলছে। বুঝতে পারলাম
আমি জ্ঞান হারাচ্ছি।
:
সকালের হালকা মৃদু রোদ চোখে
পড়তেই জ্ঞান ফিরে পেলাম।
আমি তখনো বৃত্তের ভেতর শুয়ে
আছি। উঠে দাঁড়াতে বিষন কষ্ট
হচ্ছিল। ব্যাগ দুটো হাতে নিয়ে হাঁটা
আরম্ব করলাম। একটু এগুতেই
আমাদের বাড়ি দেখতে পেলাম।
মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি
বেরিয়ে এলো। আর মুখে ফুটে
উঠলো আনন্দের হাসি। এ আনন্দ
বেঁচে থাকার আনন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫০