______ইনো মিটার
:
জ্যোৎস্না স্নাত সুন্দর একটি
রাত। রাফি ছাদে একা দাড়িয়ে
আছে। আজকাল মনটা তার
তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না।
একটি বিষয় তাকে ভিষণ ভাবাচ্ছে।
বিষয় টা হলো মানুষ কেন একে
অপরের সাথে মিথ্যা বলে, প্রতারণা
করে, ধোকা দেয়। কিন্তু কি লাভ
এতে বা এটা করে মানুষ গুলো
কিসের সুখ পায়, এটাই তার প্রশ্ন_?
.
ফেইসবুক, ব্লগে ইদানীং অনেক কপি
রাইটারদের দেখা যায় যারা
অন্যের লেখা চুরি করে নিজের
নামে চালিয়ে দেয়। কিন্তু এতে
তারা কিসের এতো সুখ পায়।
হয়তো কিছু লাইক কম্মেন্টস বা
লোক মুখে প্রসংশা।
কিন্তু ঐ মানুষ গুলো যখন বুঝতে
পারবে সে একজন কপিবাজ
তখন তার সম্মানে কি আঘাত
হানবে না_?
ফেইসবুকের কথা না হয় বাদই
দিলাম বাস্তবিক জীবনের মানুষ
গুলো কি না করছে। ঘুষ খাচ্ছে,
একে অপেরের সাথে ধোঁকাবাজি
করছে, ওজনে কম দিচ্ছে, ওয়াদার
ভঙ্গ, আমানতের খেয়ানত করছে।
এতে যে মানবতার কত অপমান
হচ্ছে তারা বুঝেও ঝেন
বুঝতে চায়না।
তার চেয়ে যদি এমন কোনো যন্ত্র
থাকতো যা দিয়ে মিথ্যাবাদী
প্রতারক
দের ধরে ফেলা যেত তবে কতই
না মজা হতো....
.
কথা গুলি মনে মনে ভাবছিল রাফি
আর ঠিক তখনি ছাদের উপর
কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনতে
পায় ও।। মনে হলো কোনো ধাতব
বস্তু পড়ার শব্দ।
পিছু ফিরে রাফি দেখতে পায় তার
থেকে হাত দশেক দুরে কিছুটা
মোবাইলের মত কিন্তু আকারে
ছোট কিছু একটা পড়ে আছে।
কিন্তু হাতে নিয়ে বুঝতে পারলোনা
জিনিসটা আসলে কি____
বুঝতে না পারায় জিনিসটার প্রতি
তার ভিষণ কৌতুহল জন্মায়!
জিনিস টি নিয়ে রাফি তার রুমে
চলে আসলো আর নেড়ে চেড়ে
দেখতে লাগলো।
জিনিসটার প্রতি তার কেমন একটা
সন্দেহ হয়। মনের অজান্তেই
মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
--নাহ এটা কোনো মানুষের তৈরি
তৈরি বলে মনে হচ্ছে না। খুব
অদ্ভুত একটা যন্ত্র...
.
আর ঠিক তখনি,
যন্ত্রটিতে বিপ বিপ শব্দ করে
সবুজ বাতি জ্বলে ওঠে আর
স্কিনে ভেসে উঠলো, Yes!!!
.
বিষয় টা লক্ষ্য করে রাফি বেশ
অবাক হলো। এটা আবার কি ধরণের
যন্ত্র। প্রথমে ভেবেছিল নষ্ট কিন্তু
এখন তো দেখছে কাজও করে।
রাফি যখনই কথাটা মনে মনে ভাবলো
বিপ বিপ করে যন্ত্রটিতে আবারও
সবুজ বাতি জ্বলে উঠে Yes!!!
লেখা উঠলো।
চরম কৌতুহল নিয়ে রাফি যন্ত্রটির
দিকে তাকিয়ে আছে। পরোক্ষনেই
ভাবলো, এইটা নিচক মনের ভুল
বা এমনি এমনি হয়েছে আর
তখনি যন্ত্রটিতে বিপ বিপ করে
লাল লাইট জ্বলে স্কিনে ভেসে
উঠলো No!!!
এবার যন্ত্রটির প্রতি তার কিছুটা
বিশ্বাস এসেছে যে নিশ্চয় এটা
এমন কোনো যন্ত্র যার কথা সে
মনে মনে ভেবেছিল। চরম
আনন্দে রাফি আত্মহারা হয়ে ওঠে।
দৌড়ে গিয়ে মা'কে সব খুলে
বলতে চায় কিন্তু মা তার কথার
একটুও গুরুত্ব দিল না।
তবুও রাফির কৌতুহল বিন্দু মাত্র
কমেনি। নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে
যন্ত্রটির সজ্ঞে কথা বলতে লাগলো
সে। যন্ত্রটিকে নানান রকম প্রশ্ন
করতে লাগলো আর যন্ত্রটি অবিরাম
উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
রাফি নিজ থেকেই যন্ত্রটির একটি
নাম দেয় "ইনো মিটার"।
যেহেতু যন্ত্রটি শুধুই Yes!!! No!!!
দিয়ে উত্তর দেয় তাই ইনো মিটার
এর জন্য উপোযুক্ত নাম।
:
পরদিন সকালে রাফির ছোট
চাচা রাফিদের বাসায় এসে বলে
যায় "আজ সন্ধ্যায় রাফির চাচাতো
বোন পুষ্পকে পাত্রপক্ষ দেখতে
আসবে আর সব ঠিক থাকলে
বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে
যাবে" তাই রাফি আর তার বাবা
যেন সন্ধ্যায় তাদের (পুষ্পদের)
বাসায় যায়।
রাফির প্রথমে তেমন একটা ইচ্ছে
হচ্ছিলনা। কিন্তু পরে ভেবে দেখলো
ওখানে হয়তো যন্ত্রটি দিয়ে অনেক
কিছুই পরিক্ষা করে দেখতে পারবে।
.
সন্ধ্যা বেলায় রাফি আর তার বাবা
রাফির ছোট চাচার বাড়িতে উপস্থিত
হলেন। পুস্পকে ইতোমধ্যে সুন্দর
করে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে আর
মেহেমানদের জন্যও খাবার তৈরি।
একটু পরেই পাত্রপক্ষ চলে আসলো।
সজ্ঞে পাত্র নিজেও এসেছে।
পাত্র দেখতে খারাপ না। ভালোই।
রাফি ভাবলো এইতো সুযোগ!
ব্যাটাকে একটু পরিক্ষা করা যাক।
যেই ভাবা সেই কাজ।
রাফি গোপনে যন্ত্রটি পকেট থেকে
বের করলো আর পাত্রের সাথে
বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে লাগলো,
.
--আচ্ছা ভাইয়া, আপনি কি করেন?
__(পাত্র কিছুটা কাছুমাছু করেই
জবাব দিল) জ্বী, আমি ব্যবসায়ী।
আমার নিজের ব্যবসা আছে।
.
রাফি এক পলক যন্ত্রটির দিকে
তাকালো, কিন্তু একি বলছে "ইনো
মিটার" No!!! তবেকি ব্যাটা
মিথ্যা বলছে। নাকি যন্ত্রটি ভুল
বলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি
কোনো কিছুই ভুল বলেনি। তাই
রাফি শতভাগ নিশ্চিত যে ব্যাটা
একটা মিথ্যাবাদী।
রাফি ইনিয়ে-বিনিয়ে তাকে বুঝাতে
লাগলো যে আপনি মিথ্যাবাদী।
এক পর্যায়ে ছেলেটি (পাত্র) রাফির
উপর বেশ উত্তেজিত হয়েই বলে,
__তুমি কি বুঝাতে চাও আমি বেকার?
.
রাফি কিছু না বলে ইনো মিটারের
দিকে তাকায়। ইনো মিটার হ্যাঁ সূচক
জবাব দিল। এবার রাফি বেশ জোর
গলায় বলে,
--হ্যাঁ আপনি বেকার। আর আমার
তো মনেহয় যৌতুকের প্রতিও আপনার
আকর্ষণ আছে। (ইনো মিটারে
আবারও হ্যাঁ সূচক জবাব)
এক পর্যায়ে তো রাফি পাত্রপক্ষের
গোপন উদ্দেশ্য ফাঁস করে দেয়
ইনো মিটারের সাহায্য।
এইদিকে রাফির চাচা খুবই সচেতন
মানুষ। তিনি চান না এই ধরণের
মানুষদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক
গড়তে। ফলে পাত্রপক্ষ অপমানিত
হয়েই চলে যেতে বাধ্য হয়।
.
.
উক্ত ঘটনার পর থেকে যন্ত্রটির
প্রতি তার আকর্ষণ দ্বিগুণ হারে
বেড়ে গেল। যন্ত্রটির সাহায্যে সে
সাধারণ মানুষদের পরিক্ষা করতে
লাগলো। তবে সবচেয়ে বেশি
আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তার
কলেজে। বন্ধু বা পরিচিত যেই
চাপা মারছে বা মিথ্যা বলছে রাফি
সাথে সাথেই তাকে ধরে ফেলছে।
এমনকি টুকটাক ভবিষ্যৎ বাণিও
করেও দিচ্ছে। বন্ধুদের মধ্যে
কেউ কেউ তো ভাবছে রাফির
মাঝে আত্মাধাতিক কোনো
ক্ষমতা আছে। আবার অনেকেই
রাফির থেকে যতটা সম্ভব দূরে
থাকার চেষ্টা করছে।
যে যাই করুক বা ভাবুক সেইদিকে
তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
কিন্তু এইদিকে রাফির এক বন্ধু রুবেল
ইদানীং রাফিকে যে দূর থেকে
অনুসরণ করে তা রাফি বুঝতে
পারে আর সে হয়তো কিছু একটা
আঁচ করতে পেরেছে। একদিন
তো রাফিকে বোলেও ছিল যে
"তোর আসলে কোনো ক্ষমতাই
নেই, সব তোর ঐ যন্ত্রের কাজ।"
রাফি কথাটা হেঁসে উড়িয়ে দিলেও
কিছু একটা প্ল্যানিং করে রাখলো
যাতে তার ইনো মিটার তারই থাকে
অন্য কারো হাতে না যায়...
:
বেশ কিছুদিন ভালোয় ভালোয়
কেটে গেল। রাফি তার ইনো মিটার
নিয়ে সুখেই আছে। তেমনি একদিন
সন্ধ্যাবেলা রাফি সবে মাত্র পড়তে
বসেছে এমন সময় রুবেলের ফোন,
__হ্যালো রাফি।
--হুম রুবেল বল?
__তুই কি এখন আমার বাসায় আসতে
পারবি?
--কেন?
__না মানে.. তোকে বলতে ভুলে গেছি
আজ আমার জন্মদিন।
--ওহ! তাই, শুভ জন্মদিন।
__নাহ শুধু মুখে বললে হবে না।
তুই এখনই চলে আস। তোকে আসতে
বলার অবশ্য আরেকটা কারণ আছে,
আমার এক মামা ভিষণ চাপা মারে
আর মিথ্যা বলে। তুই ই পারবি তাকে
জবাব দিতে...
--কিন্ত এখন...?
__প্লিজ দোস্ত। আয়না প্লিজ।
--আচ্ছা ঠিক আছে। আসতেছি।
.
ফোন কেটে দিয়ে তৈরি হয়ে রুবেলের
বাসায় চলেগেল রাফি। বাসায় গিয়ে
কলিং বেল চাপতেই রুবেল এসে
দরর্জা খুলে দিল। কিন্তু একি
বাসায় তো কেউ নেই। যখন কিছু
বলতে যাবে ঠিক তখনি বড় বড়
দুজন লোক এসে রাফিকে ধরে
ফেললো। আর রুবেল হাসতে
হাসতে বললো,
__তুই নিজেকে বড় চালাক ভাবিস
তাইনা!
আসলে তোর কোনো ক্ষমতাই
নেই। সব ঐ যন্ত্রের কাজ। কিন্তু
আজ থেকে এই যন্ত্রটি হবে আমার
শুধুই আমার।
.
এই বলে জোর করেই রাফির পকেট
থেকে নিয়ে নিল যন্ত্রটি। আর
রাফি বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে
একটি ঘুসি বসিয়ে দিল মুখে।
তারপর ধ্বাক্কা দিয়ে বাসা থেকে
বের করে দিল। ভেতর থেকে
রুবেলের অট্টহাসির শব্দ ভেসে
আসছিল।
ঠোঁট ফেটে রাফির রক্ত বের হচ্ছিল।
মনের মধ্যে অনেক কষ্ট নিয়ে
বাসায় ফিরল সে। কিছুক্ষণ রুমে
শুয়ে রইলো। না তবুও ভালো
লাগছে। তাই ছাদে উঠে এলো।
চারিদিকে নিরব, হাল্কা হাল্কা মৃদু
বাতাস বইছি। আজকের চাঁদটাও
বেশ সুন্দর। চারিদিকে জ্যোৎস্নার
মৃদু আলো লুটোপুটি খেলছে।
তবুও তার মন ভালো লাগছে না।
বন্ধু হয়েও বন্ধুর সাথে যে কেউ
এমন করতে পারে তা রাফি কিছুতেই
মানতে পারছেনা।
আসলে এই পৃথিবীতে কেউ কারো
বন্ধু নয় সবাই স্বার্থপর।
এরপর পকেটে হাতদিল রাফি
আর বের করে আনলো আসল
ইনো মিটার। রাফি আগে থেকেই
জানতো রুবেল এটা চুরি করতে
চায়। ইনো মিটারই তাকে বলেছিল
এ কথা। রাফি ইনো মিটারকে
বুকের সাথে ঝাপটে ধরে আর বলে,
--আমাকে অনেক সাবধাণ হতে
হবে, অনেক অনেক সাবধাণ!
.
আর ঠিক তখনি ইনো মিটারে
বিপ বিপ শব্দ করে সবুজ বাতি
জ্বলে উঠলো আর স্কিনে ভেসে
উঠলো, Yes!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪