somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক সুর (অনুভবে ভয়)

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিনোদের মনটা ভালো নেই। অবশ্যই
প্রায় সময় ই ভালো থাকেনা।
জীবনটাকে
কেমন যেন নিষ্প্রাণ মনে হয় তার।
তাই ত পড়ে আছে প্রায় মনুষ্য বিহীন
এক নিবিড় জঙ্গলে।
পুরো সময়টা জঙ্গলে একা একাই
কাটায়। ঘুরে ঘুরে বন্য প্রাণী শিকার
করে আর ফল-ফলাদি সংগ্রহ করে খায়।
.
কিন্তু বিনোদ এমন কেন? কেন পড়ে
আছে এমন নিবিড় বনে! তার কি
বন ভাল লাগে। যদি ভালোই লাগতো
জীবনকে কেন নিষ্প্রাণ মনে হয় তার?
আসলে বিনোদ প্রকৃতির শিকার।
ঠিক প্রকৃতি নয় এক অতি প্রাকৃতিক
কোনো কিছুর।
কিন্তু কয়েক বছর আগেও ত সে এমন
ছিলনা। তবে তার সঙ্গে কি এমন
হয়েছিল যে, পরিবার ছেড়ে সন্যাসী
হয়ে যাবে? সেই ঘটনাটাই পাঠকদের
সাথে শেয়ার করছি....
::::
প্রায় দশ বছর আগের ঘটনা...
বিনোদ সবে মাত্র ইন্টার মিডিয়েট
পাশ করেছে। সময়টা ছিল শীতকাল।
হঠাৎ তার কয়েকজন বন্ধু এসে বললো,
"পরীক্ষা ত শেষ, রেজাল্ট বেরুতেও
অনেক অনেক দেরী তা এই সময় ঘরে
বসে না থেকে কোথাও থেকে
বেড়িয়েও
ত আসা যায়।"
বিনোদের অবশ্য প্রথমে যাওয়ার
কোনো
খেয়ালই ছিলনা। কিন্তু কি মনে করে
পরে রাজি হয়ে গেল।
সিন্ধান্ত হলো বন্ধুরা মিলে পাহাড়
পুরে
যাবে; পাহাড় দেখতে আর সেই সঙ্গে
আশে পাশের জঙ্গল গুলো থেকেও
ঘুরে আসবে।
পাহাড় আর জঙ্গলের কথা শুনে
বিনোদের বুকের ভেতর কেমন যেন
করে উঠলো! সেই ছোট বেলা থেকেই
পাহাড় আর জঙ্গলের প্রতি তার খুব
তীব্র
আকর্ষণ। কিন্তু সঠিক সময়ের অভাবে
ঘুরে আসা সম্ভব হয়নি। তাই মনে মনে
কিছুটা খুশিই হলো বিনোদ।
সিন্ধান্ত হলো আসছে শনিবার রওনা
দিবে
তারা। যাওয়ার সময় যতই ঘনিয়ে
আসছে
তার মনে কৌতুহল ততই বেড়ে ছলেছে।
পাহাড়ে উঠবে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বন্য
প্রাণী দেখবে! আহা কি মহা আনন্দই
না হবে, "বিনোদ মনে মনে ভাবলো।"
এই সাথে তার নতুন একটা সখ
হয়েছে, জঙ্গলে জ্যোৎস্না উপভোগ
করবে।
কুয়াশাময় আকাশ থেকে চাঁদের আলো
ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। বনের
শিশির ভেজা পাতার উপর জ্যোৎস্নার
আলো খেলা করবে। সে কি অপরূপ
মায়াময় সুন্দর।
ভাবতে ভাবতেই বিনোদের মুখে হাসি
ফুটে উঠলো।
.
শনিবার সকাল
বিনোদ তার বন্ধুদের সাথে পাহাড়
পুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। বন্ধুরা
মিলে গান-বাজনা, হাসি-তামাসায়
মেতে উঠলো। পুরোটা পথ আনন্দ
করতে করতে বিকাল নাগাদ পাহাড়
পুরে গিয়ে পৌচাল।
আহা কি সুন্দর চারিদিকে। যেন
বিধাতা
আপন হাতে সাজিয়ে তুলেছেন
চারপাশটাকে।
বিনোদ আর তার বন্ধুরা মিলে একটা
থাকার যায়গাও যুটিয়ে নিল। প্রায়
কাছেই, গাছপালায় গেরা ছোট্ট
একটি
হোটেল। খাওয়ার ব্যবস্থা তেমন
ভালো
না হলেও এ ছাড়া আর কোনো উপায়
নেই। অপরিচিত একটা যায়গায় থাকার
ব্যবস্থা হয়েছে এটাই অনেক।
আশপাশটা সবাই মিলে ঘুরে দেখলো।
রাতের বেলা আধপেটা খাবার খেয়ে
সবাই শুতে গেল।
সকালের নাস্তা শেষে বন্ধুরা মিলে
ঘুরতে বের হলো। তারা প্রথমে পাহাড়
দেখলো তারপর জঙ্গলের পথে হাটা
ধরলো। চারদিকে শুধু গাছ আর গাছ।
গয়াল, জারুল, পাইন কত রকমের
গাছ। জঙ্গলের এক পাশে ছোট্ট একটি
লেক। শীতকাল হওয়ায় না না জাতের
পাখি এসে বিড় করেছে সেখানে।
বন্ধুরা মিলে এটাও দেখতে গেল।
সবাই মিলে যখন পাখি দেখছিল হঠাৎ
বিনোদ কেমন যেন একটা শব্দ
শুনতে পেল। সে শব্দ অনুসরণ করে
হাটতে লাগলো। সামনেই একটা
বড় অশ্বথ গাছ। মনে হয় অশ্বথ গাছটা
থেকেই শব্দটা আসছে। ঠিক শব্দ নয়
এটা একটা বাশির সুর। খুবই করুন
বাশির সুর। তার শুনতে ইচ্ছা করছে
খুব ইচ্ছা করছে!
অশ্বথ গাছটির গুড়িতে কান পেতে
সেই সুর শুনতে থাকলো বিনোদ।
শুনতে শুনতে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল।
কিন্তু
তখনি তার এক বন্ধু তার মাথায় হাত
দিয়ে বলে, "কি রে এখনে কি করছিস।"
মুহুর্তে বাশির সুর থেমে গেল আর
বিনোদও কেমন যেন হকচকিয়ে
উঠলো। বন্ধুদেরকে কিছু না বলেই
হোটেলে ফিরে এল সে।
তার মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরছে!
কি আছে ওখানে? কে বাজাল
এমন মধুর বাঁশি? নিশ্চয় কেউ না কেউ
বাজিয়েছিল। গাছ ত আর বাঁশি
বাজাতে পারেনা...
না না রকম চিন্তা করেই আগের
রাতের
মতো রাতের খাবার শেষ করে শুতে
গেল তারা। সবার চোখে ঘুম নেমে
এলেও বিনোদের চোখ ঘুমহীন।
:::
পরদিন সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে
দেখতে ফেল বিনোদ তাদের পাশে
নেই। প্রথমে বিষয়টাতে তেমন
গুরুত্ব না দিলেও বেলা বাড়ার সাথে
সাথে সবাই বিনোদকে খুঁজতে বের
হয়। শেষ পর্যন্ত খুঁজে পায় সেই অশ্বথ
গাছের কান্ড কানপেতে শুয়ে আছে।
কিন্তু খুঁজে পেয়েও লাভ হয়নি।
সেদিন থেকে বিনোদ তার সমস্ত
স্মৃতিশক্তি
হারিয়ে ফেলেছে। বিনোদ আর
কাউকে
চিনেনা। বন্ধুরা মিলে তাকে সেখান
থেকে অনেক কষ্টে বাড়ি নিয়ে আসে
কিন্তু পরদিনই পালিয়ে যায় আবার।
চলে যায় সেই জঙ্গলের অশ্বথ গাছটির
কাছে। আর শুনতে থাকে সেই মাতাল
করা সুর।
:
কিন্তু হঠাৎ কয়েক বছর আগে স্থানীয়
কয়েকজন জঙ্গলবাসী অশ্বথ গাছটা
কেটে ফেলে। গাছটি কাটার পর
থেকেই
বিনোদের আচরণে কিছুটা পার্থক্য
আসে। সারাদিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘরে
বেড়ায়। আর কি জানি খুঁজে বেড়ায়।
লোকে বলে এখনো প্রতি অমাবস্যার
রাতে জঙ্গল থেকে নাকি একধরণের
বাঁশির সুর বেরিয়ে আর যে ই সেই
বাঁশির সুর অনুরণ করে ঘর থেকে
বের হয়। সে হয়তো আর কখনো ফিরে
আসেনা নয়তো মানসিক ভারসাম্য
হারিয়ে ফেলে।।।
:::
:::
:::
____সমাপ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×