প্রশ্ন হচ্ছে ভাজতে হলে সাথে কি দেবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার সৃষ্টিশীল হওয়ার বিপুল সুযোগ। সাধারণত: বাংলাদেশে আমরা যে ডিম ভাজা খাই তাতে ফেটার সময়ই কিছু পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি আর লবণ দেয়া হয়। এগুলো আমাদের জিহ্বায় খেলে ভালো। তবে এই বাড়তি মসলা-পাতি যোগ করার ক্ষেত্রে আপনার অবারিত স্বাধীনতা রয়েছে। জিনিসটা তো খাবেন আপনি। পানিপোচের লেখায় অরূপ মন্তব্য যোগ করেছেন তাতে তিনি নানারকম ধনেপাতা কুচি, টম্যাটো দেয়ার কথা বলেছেন। তেলের বদলে বাটার, ডিম ফেটানোর সময় পনির, রসুন গুঁড়া, বা ডিম ভাজার উপর শুকনো মরিচ গুঁড়া ছড়িয়ে দেয়ার কথাও বলেছেন। অবশ্যই আপনার রুচিমত এসব জিনিস যোগ করতে পারেন। তবে পরিমাণটার দিকে খেয়াল রাখবেন। বেশি মসলা মসলা হয়ে গেলে খেতে ভালো লাগবে না।
মসলার স্বাধীনতা যদিও আপনার রয়েছে তবু মনে রাখতে হবে যেসব মসলার কাঁচা গন্ধ সহ্য করা যায় না সেগুলো দেয়া ঠিক হবে না। কারণ ডিম ভাজতে খুব কম সময় লাগে। এর মাঝে মসলাগুলো খুব একটা ভাজা হয় না। কাঁচা কাঁচাই থাকে। অনেকে ধনে গুঁড়া দেন ডিমে। ব্ল্যাক পিপার গুঁড়াতো দেয়াই হয়।
আমি ডিম ভাজার সময় ডিম প্রতি এক চা-চামচ পানি দেই। এতে ডিমটা ফোলে ভালো। মুখে তুললেই সুড়ুৎ করে পেটে চলে যায়। একটু ভিনিগার বা সয়াসসও আমি দেই। (তবে উস্টার সস দেয়াটাই শাস্ত্রসম্মত)।
মসলা ছাড়াও নানা ধরনের সব্জি দেয়া যায়। যেমন টম্যাটো দিতে পারেন। তবে টম্যাটো দেয়াটা দু'ভাবে হতে পারে। যদি ফেটানো ডিমটা প্যানে দেয়ার পর টম্যাটো কুচি উপরে ছড়িয়ে দেন তাহলে একে আমরা ওমলেট বলবো। আর টম্যাটো কুঁচি (বা টম্যাটো পেস্ট) যদি ডিমের সাথে ফেটিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নেন, যখন ডিম আর টম্যাটো আলাদা করা যাবে না, তখন আমরা একে খাগিনা বা ইন্ডিয়ান ওমলেট বলি। খাগিনাতে বাটার তো দেবেনই একটু ইয়োগার্ট বা মিস্টি দইও দিতে পারেন।
তবে টম্যাটো ও অন্যান্য সব্জি যদি ডিম ভাজাতে যোগ করতে চান তবে আরেকটি উপায়ে তা করতে পারেন। তা হলো সব্জিগুলো ভেজে পরে ডিম গোলা এতে ঢালতে পারেন। বেশ জম্পেশ একটি ডিশ হবে এতে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে তেল গরম করে তাতে মাশরুম কুচি (বা আপনার পছন্দমত সব্জি) ভেজে নিন। টম্যাটো কুচি দিন। পরে ডিম গোলা ঢেলে দিয়ে ওমলেটটা বানিয়ে ফেলুন। স্পেনিস ওমলেটে ছোট আলুর টুকরো কেটে দেয়। জুখিনি বা অন্য সব্জি দেয়ারও চল আছে।
ভাত দিয়ে খাওয়ার জন্য ডিম ভাজতে গেলে আমি ডিম প্রতি আধা চা-চামচ গুঁড়ো দুধ দিয়ে ফেটিয়ে নেই। এতে নরোম কেকের মত বা পুডিং-এর মত স্বাদ হয়। যদি কাঁচা মরিচ না দেন এবং চিনি যোগ করেন তবে মিষ্টি মিষ্টি হবে। যা খেতে পারেন ডেজার্ট হিসেবে। বা যারা মিষ্টি মিষ্টি খাবার ভালোবাসে তাদের জন্য মজার।
ওমলেটকে আবার ওভেনে ঢুকিয়ে বেকড করাও হয়। একটা ওমলেটই যেক্ষেত্রে মেইন ডিশ সেক্ষেত্রে এই কায়দাই ইউরোপের দেশে চালু আছে। বেকড করার আগে ফ্রাইং প্যানে কিছুটা ভেজে বাদামী করতে পারেন। অথবা কাঁচা ডিম-সব্জির মিশ্রণটাই বেক করতে পারেন। বেকিং করতে পারেন দুই ভাবে। সরাসরি ওভেনে ঢুকিয়ে 180 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে ডিমের ওপরটা বাদামী করে নামাতে পারেন।
বেকড্ ওমলেট করার আরেকটি পদ্ধতি হলো যে পাত্রে বেকিং করবেন সেটি আরেকটি পানি ভরা পাত্রের মধ্যে ভাসিয়ে দিন। এ পদ্ধতি সাধারণত পুডিং টাইপের খাবার বানাতে ব্যবহার হয়। সে ক্ষেত্রে ডিম গোলার সাথে সমপরিমাণ দুধও দেয়া হয় ওমলেট তৈরিতে। সব্জি না দিয়ে এতে পনির দেয়া হয়। আর জমাট বাঁধার সুবিধার্থে পাউরুটি কুচি করে দেয়া হয়। বেকিং পাত্রটি যেন তিন ভাগের এক ভাগ ডুবে থাকে। এখন মিশ্রণটি ঢেলে ওভেনে ঢুকিয়ে 180 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে বেক করুন। জমাট বাঁধলে বের করে নিন। তৈরি হয়ে গেলো সুস্বাদু বেকড চিজ (পনির) ওমলেট।
ডিম ভাজার মধ্যে বেকিংয়ের কথা আলোচনা করা ঠিক হলো না বোধহয়। তবে সুগৃহিনীরা পড়লে হয়তো নিরাশ হবেন না। টার্মিওনোলজিতে ভুল থাকতে পারে। ভুল থাকতে পারে পদ্ধতিতে। রান্না-বান্নায় কোনো ডিগ্রি নেই। যারা জানেন দয়া করে ভুল ধরিয়ে দেবেন।