somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি কুড়ি একটি পাতার দেশ সিলেট

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আরেক নাম সিলেট -- পাহাড় , ঝরনা , নদী , খাল , হাওর , বিল , বন ,ইকো পার্ক - এ যেন পূর্নাঙ্গ প্রকৃতির সমাহার
এবারের সফর : ১৩ই আগস্ট ২০১৫
১ম দিন : রাতারগুল - বিছনাকান্দি - পাংথুমাই
২্য় দিন : মাধবকুন্ড - লাউয়াছড়া




সফরে ছিল মোট ১৩ জন - উল্লেক্ষ্য সাথে ছিলেন ৮০ বছর বয়সের ১ জন আংকেল ,২ জন নারী (৩০-৩২) , ৯ জন যুবক
সিলেট থেকে নয়ন নামের এক জন যুক্ত হলো - মোট ১৪ জন

ঢাকা বিমান বন্দর থেকে বিকেল ৪:৩০ ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রা শুরু হলো বিকেল ৫:০০ টায় , সিলেট পর্যন্ত আরো ৪ ঘন্টা বিলম্ব। ১০:৩০ মিনিটে সিলেট থাকার কথা থাকলেও ট্রেন কথা রাখেনি, আমাদের ভোর ২:৩০ টায় অসহায় করে ছেড়ে দেয় সিলেট ষ্টেশনে । ষ্টেশনের বাহির থেকে মাইক্রো ভাড়া করে চলে যাই হোটেল পলাস , অম্বরখানায়। ৩ টায় রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ২ ঘন্টা বিশ্রাম করি ।ভোর ৬ টায় ২টা মাইক্রো ঠিক করা ছিল যে আমাদের নিয়ে সারাদিন ঘুরবে - ভাড়া ৫৫০০ (৫০০ করে ১০০০ টাকা বকশিস) মোট ৬৫০০টাকা

রাতারগুল






মিশন রাতারগুল:
৬:৩০ মিনিটে নাস্তা সেরে অম্বরখানা থেকে যাত্রা শুর সরাসরি রাতারগুলের উদ্দেশ্যে (মোটর ঘাট হয়ে নৌকায়ও যাওয়া যায়) । মনে হলো বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ রাস্তা এটাই । যাই হোক ৮:৩০ মিনিটে রাতারগুল চলে আসলাম। মনে ভাসা ছবির সাথে মিলে গেলো সবকিছু। ৬০০ টাকা করে ৩টি নৌকা ভাড়া করে যাত্রা শুরু বনের উদ্দেশ্যে । মাঝি বইঠা বেয়ে গোয়াইন নদী দিয়ে ছুটে চললো আমাদের নিয়ে । ১০ মিনিট নৌকা চলার পরই দেখা মিললো বহু কাঙ্ক্ষিত রাতারগুলের । জলের মাঝে বন , মনের মাঝে শীতল ছোয়া দিয়ে বললো ; '' এসো আমার মাঝে এসো''। প্রকৃতির এ রুপ অন্য কোথাও আছে-কিনা আমার জানা নেই। জলের গাছ গুলো ছায়া দিয়ে মায়া করে আগলে রেখেছে রাতারগুলকে । আমরা যদিও কোন সাপ দেখিনি , শুনেছি গাছের ডালে প্রায়ই রঙ্গিন সাপের বিশ্রামের দৃশ্য দেখা যায়। তবে বনের উপরে উড়ে উড়ে খেলা করছিল - শংক্ষচিল , পানকৌড়ি , মাছরাঙ্গা - আর বনের ভেতর থেকে ভেসে আসছিল পাখির মধুর গানের গুনগুনানি শব্দ। যান্ত্রিক কোলাহল মূক্ত এমন মনোরম পরিবেশ মন ও শরীরের সকল ক্লান্তি দুর করে দিল । খুব ভোরে যাওয়াতে দর্শনার্থি কম ছিল । বনের মাঝে থাকা ওয়াচ টাওয়ার থেকে মূগ্ধ ভাবে উপভোগ করতে পেরেছি রাতারগুলকে ।
Ratargul


বিছনাকান্দি:
এই সময়ের সিলেট এর আকর্ষনিয় জায়গাগুলোর মধ্যে বিছনাকান্দি উল্যেখযোগ্য । বন্ধুরা অনেকেই ঘুরে এসেছে বিছনাকান্দি । আমাদের ভ্রমন লিষ্ট থেকেও তাই বাদ পরলনা ।

পরিকল্পনা মত কাজ , মাইক্রো করে রাতারগুল থেকে চলে আসলাম হাদারপার বাজার - সময় লাগলো ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট । হাদারপার বাজার থেকে হেটেও বিছনাকান্দি যাওয়া যায় , মাঝে ১০ টাকায় নৌকা পারাপার । কিন্তু আমরা ১৬০০ টাকায় ট্রলার ভাড়া করে বিছনাকান্দি আসলাম , দেখতে পেলাম গোয়াইন নদী থেকে সীমানার ওপারের পাহাড় থেকে ঝরে পরছে ৮/১০ টি ঝরনা । এমন দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি । আকাশে ওনেক বেশি মেঘ থাকায় , ঝরনাগুলো ছিল অনেক প্রানবন্ত। সবুজ পাহাড় বেয়ে ঝরে পরা ঝরনাগুল প্রকৃতিকে করে দিলো আরো বেশি স্নিগ্ধ এবং মনোরম । ৩০ মিনিট এ মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম সপ্নের বিছনাকান্দি। দুর থেকে চোখে পরলো শত শত মানুষের ভিড় । তখনই বুঝে গিয়েছি কাছ থেকে কতো না সুন্দর হবে বিছনাকান্দি।

ঘাটে ট্রলার বিড়ার সাথে সাথে লাফিয়ে পরি বিছনাকান্দির বালিতে ।ছুটে চললাম পাহাড়ের মাঝদিয়ে বয়ে আসা পানির দিকে। খুবই সাবধানতার সাথে অনেক গুল পাথর পেরিয়ে একদম শেষ প্রান্তে চলে গেলাম । যেখানে মানুষের কোলাহল কম । ইতোমধ্যে ইন্ডিয়ার সীমানায় চলে এসেছি সবাই । কে দেখে সীমানার লড়াই , আমরা ব্যস্ত গা ভিজানোতে । প্রবল বেগে বয়ে আসা শীতল পানি আমাদের শরীরও মন কে স্তব্দ করে দিল । গা ভাসিয়ে প্রকৃতির নিরব সৌন্দর্য উপভোগ করলাম অনেকটা সময় ধরে । এর পর আমি এবং জুয়েল ভাই যা করেছি , দয়া করে আপনারা কেও করার চেস্টা করবেন না । আমরা দুজন পার হয়ে গেলাম প্রবল বেগে বয়ে আসা জলধারা। পানির নিচে থাকা পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ছিলে গেছে হাত পায়ের অনেক খানি। ফেরত আসাটা ছিল আরো অনেক কঠিন । স্রোতেরে বেগ ছিল আরো প্রখর । ২০১৪ সালে আমিয়াখুম ঘুরে আসার অভিঘ্যতা ছিল বলেই এ সাহস নিয়েছি । যাই হোক ফিরে এসে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরলাম । ঘড়িতে সময় তখন ৪ টা । ভ্রাম্যমান হোটেল গুলোতে খাবার প্রয় শেষ । ৫০ টাকা করে ডিম দিয়ে ভাত , কেও কেও খেলো ছোলা বিড়িয়ানি (শুধু সিলেটে পাওয়া যায়)। খাওয়া দাওয়া শেষে ট্রলার করে হাদারপার ফিরে আসতে ঘড়ি বলে দিল , এখন সময় বিকেল ৫টা । যেতে হবে পাং-থু-মাই , সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা । ৫ টা ১৫ মিনিটে রওয়ানা হলাম পাং-থু-মাই এর উদ্দ্যেশ্যে ।







পাং-থু-মাই :
সিলেট এর নতুন একটা দর্শনীয় স্থান "পাং থু মাই"
এই ঝর্নার নাম ‘বড়হিল ঝর্না’ এবং এই গ্রামের নাম ‘পাং থু মাই’ । গোয়াইনঘাট ডিগ্রী কলেজ থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার দূরে ।

হাদারপার থেকে গোয়াইনঘাট ডিগ্রী হয়ে "পাং থু মাই" আসতে সময় লেগে গেলো ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট , ঘড়িতে বাজে ৬ টা ৪৫। রাস্তা অনেক বাজে , তাই এত সময় লাগলো । দিনের আলো পাওয়া গেলোনা , তাতে কি গাড়ি থামতেই কাদামাটি পার হয়ে এক দৌরে একদম ঝরনার কাছে । ISO high করে Shutter speed কমিয়ে যদি কিছু ছবি তোলা যায় ।

নিচের ছবি গুলো ৬ টা ৫০ - ৫৫ মিনিটে তোলা





কিভাবে যেতে হবেঃ
১। আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে গোয়াইনঘাট বাজার (সিএনজি , বেবি টেক্সি অথবা লেগুনায়)
২। গোয়াইনঘাট বাজার থেকে মাতুরাতল/আরাকান্দি (সিএনজি , বেবি টেক্সি অথবা লেগুনায়)
৩। মাতুরাতল/আরাকান্দি থেকে ‘পাং থু মাই’ (পাঁয়ে হেটে ৪/৫কিমি)

অথবা: হাদার পার থেকে বোট নিয়ে বিছনাকান্দি ও পাং থু মাই এক সাথে দেখে আসা যায় - বোট ভাড়া ১০০০ - ১৫০০ টাকা
(গোয়াইনঘাটের রাস্তা খুব একটা ভালো নয় , জাফলং হয়ে ও যাওয়া যায় )

২্য় দিন : মাধবকুন্ড - লাউয়াছড়া

মাধবকুন্ড:
মাধবকুন্ডকে এখন একটি কৃত্তিম ঝরনা বলা চলে , ঝরনা পর্যন্ত টাইল্স করা রাস্তা , চারিপাশে ঘেরাও করা লোহার খাচা। কিছু অতি উৎসাহি মানুষের জন্যই এই নিরাপত্তা । আগে প্রতি বসরই মাধবকুন্ডে ৪/৫ টা দুরঘটনার খবর পাওয়া যেত।




লাউয়াছড়া:
ইচ্ছা ছিল লাউয়াছড়া অনেকটা সময় কাটানোর , কিন্তু সময়ের সাথে পারা গেলো না । মাধবকুন্ড থেকে লাউয়াছড়া আসলাম ৩ টা ৫০ মিনিটে । শ্রীমন্গল থেকে ট্রেন ৫টায় । ৪টা ১৫ মিনিট (২৫ মিনিটে) পর্যন্ত লাউয়াছড়া থাকলাম । লাউয়াছড়া ভালো ভাবে দেখতে পুরো এক দিন হাতে নিয়ে আসা দরকার । শ্রীমন্গল স্টেষন থেকে ১৫ মিনিটে লাউয়াছড়া আসা যায় । অন্যকোন এক সময় ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে করে গিয়ে লাউয়াছড়া দেখার প্লেনিং নিয়ে শ্রীমন্গল স্টেষন চলে আসলাম । এসে শুনি ট্রেন ৭টার আগে আসবে না । কি আর করার , কুটুম বাড়ি (রেস্টুরেন্ট) থেকে স্পেসাল বিড়িয়ানি খেয়ে ট্রেন যোগে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেষনে আসলাম ভোর ২টা ২৫ মিনিটে ।





Sylhet view
-

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮
১৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×