somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীমান্ত প্রহরীর ইয়াবা-ফেন্সি পাচার, খোলা বাজারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী!

২৩ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রহিম উদ্দিন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন সিপাহী হিসেবে চাকরি যোগদান করেন। শুরুতেই তার পোস্টিং হয় উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি জেলায়। সন্তানের পড়াশোনার সুবিধার্থে চাকরি জীবনের শুরুতে স্ত্রী-সন্তান ঢাকা শহরে রাখলেও দারুণ খুশি ছিলেন তিনি।



কিন্তু বছর চারেক আগে লঘু শৃঙ্খলা-ভঙ্গের তাকে সদর দপ্তরের বদলী করা হলেও মর্মাহত হন রহিম উদ্দিন (ছদ্মনাম)। সকাল-বিকাল অফিস তার ভাল লাগছিল না। দু'জনের বাসা ছিল তখন হাজারিবাগ, মনেশ্বর রোডের একই ভবনে বসবাস করার সুবাধে তার সঙ্গে বেশ খাতির হয়। কথা হয় নানা বিষয়ে।

একদিন তাকে জানতে চাইলাম, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রাজধানী শহর বা অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় বদলী বা পোস্টিংকে চাকরি জীবনে দ্বিতীয়বার সোনার হরিণ মনে করলেও আপনাদের ক্ষেত্রে উল্টোটা কেন। জবাব, ঢাকায় টাকা ওড়ে তাই পুলিশ ঢাকায় থাকতে চায়। আর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাজ ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে, আয়-রোজগারও সেখানে। পার্থক্য এইটুকু।
রহিমউদ্দিন ব্যক্তি জীবনে সৎ নাকি টাকার নেশায় মগ্ন সেই প্রশ্ন করার সাহস ও ইচ্ছা কোনটাই ছিলনা। তবে বুঝতে বাকি রইলো না যে সীমান্তে থাকার সুবিধা কী।

২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মাদক বলতে ফেন্সিডিলকেই বলা হতো, যার উৎপত্তিস্থল প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতের ভেতরে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পরিচালিত ৪৩টি ফেন্সিডিল কারখানা বন্ধে বেশ সরব বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত হয়ে মাদক চোরাচালান আটক বা জব্দ তালিকায় শীর্ষে বিজিবি।

এরপর আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের বর্ডার পুলিশ নিয়ন্ত্রিত কারখানা ইয়াবা চোরাচালান নিয়েও স্বোচ্চার বিজিবি। চোরাচালান জব্দে চেষ্টাও করে যাচ্ছে বিজিবি জোয়ানরা। কিন্তু দুই দেশের সীমানা পেরিয়ে মাদক চোরাচালান নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দিকে অভিযোগের তীর রয়েছে। ইয়াবার হাব কক্সবাজার সীমান্তে জব্দকৃত চালানের মধ্যে পরিত্যক্তই বেশি, এনিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

অন্যদিকে দুই প্রতিবেশি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী যেভাবে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা যেভাবে ঢুকিয়ে দিচ্ছে তা বন্ধুত্বের নেতিবাচক প্রতিদান ছাড়া কিছুই না। মাদকের পেছনে মূলত অবৈধ অর্থ উপার্জন, তরুণ সমাজকে বিপদগামী করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভারত সীমানবত হয়ে ফেন্সিডিল পাচারের প্রতিবাদে গত বছরের ২৯ নভেম্বর দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক বিজিবি ২৯ ব্যাটালিয়নের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে বলেন 'ভারতের ফেনসিডিলের বেশিরভাগ কারখানাগুলো সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। যার কারণে খুব সহজেই ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল আসে।

বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, ভারতেও তিনটি ইয়াবা কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। দুটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও একটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার কাঁচামাল ‘এমফিটামিন’ এনে এসব কারখানায় ইয়াবা তৈরি হয়। এতে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী জড়িত।

মিয়ানমার সীমান্তের রাখাইন, মংডু ও শান এলাকায় ইয়াবা তৈরির ৪৯টি কারখানার তথ্য রয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে। গত এক যুগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চারটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব কারখানা বন্ধের অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। কারখানাগুলো বন্ধ না করে উল্টো এখন সেখানে তৈরি হচ্ছে আইস (ক্রিস্টাল মেথ)। এতে বাড়ছে উদ্বেগ।

কয়েক বছর আগে বিজিবি সদরে সীমান্তবর্তী এলাকার এমপিদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় কক্সবাজারের আলোচিত তৎকালীন এমপি আব্দুর রহমান বদি, যার সঙ্গে ইয়াবা চোরাচালানের নাম জড়িয়ে আছে সাংবাদিকদের ক্ষুব্দ স্বরে বলেন, "ইয়াবা কী ভুতে আনে। আপনারা ধরেন কারা আনে কীভাবে আসে।"

সাবেক এমপি বদির কথা হাস্যজনক হলেও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে।

এবার আসি মাদক দমন নিয়ে। চোখ রাখুন রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। যেটাকে বলা হয় ইয়াবা ও গাঁজার "ওপেন হাট"। দুপুর কী বিকাল রেলের রাস্তার দু'ধারে পারলে আপনার হাতে গাঁজার প্যাকেট ধরিয়ে দিতে উৎসুক খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাইলেই ওয়ানস্টপ ইয়াবা বিক্রি। দামও হাতের নাগালে। হোম সার্ভিসও আছে।

খানিক দূরে পুলিশের 'কড়া নিরাপত্তা'। পথচারীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ-শরীর এমনকী মানিব্যাগ তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু মাদকের হাটে তাদের চোখ পড়েনা।

অথচ কারওয়ান বাজার এলাকা নিয়ে গঠিত পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ মাদক নির্মূলে একাধিকবার পুরস্কৃত হয়ে ঊর্ধ্বনদের কােছে বাহবা কুড়িয়েছে।

এ তো গেল কারওয়ান বাজারের উদাহরণ। আপনার অলিগলিতে থাকা মাদকের দোকানে প্রায়শই দেখবেন পুলিশের টহল, ধরাধরি। আবার ফের মাদকের ব্যবসা, অঙ্কটাও সহজ। গ্রাম কিংবা চরাঞ্চলেও আজ মাদকের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই বাবা।

অন্যদিকে মাদক মামলায় বা আটককৃত ব্যক্তিদের (জড়িত থাকুক আর নাই থাকুক) ছাড়াতে রেডিমেট সোর্স তৈরি করে রেখেছে থানা পুলিশ। এরাই আটক ব্যক্তিকে কাঠগড়া থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নিতে তাদের পরিবারের সঙ্গে দফারফা করে কমিশন পাচ্ছে। সারাদেশে গত কয়েক বছরে এমন কতো সংখ্যক সোর্স তৈরি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আপনার গ্রামে থানার সঙ্গে যার যোগাযোগ অথচ দৃশ্যমান কোন কাজ নাই তার আয়-ব্যয়ের দিকে তাকালেই সহজে অনুমান করতে পারবেন।

এরপর আদালতে যাবেন পুলিশ বা তাদের সোর্সরা আইনজীবী নিয়োগ করে দেবে। নয়তো আদালত পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ আইনজীবী আপনাকে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের প্রলোভণ দেবে। এরপর জামিন-মুক্তি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×