২০০১ সালের ১৫-১৯ এপ্রিল সিলেটের ভারত সীমান্তের পদুয়া, কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে তৎকালীন বিডিআর এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই যুদ্ধে বিডিআর জোয়ানরা বিজয় অর্জন করে। শোচনীয় পরাজয়ের পর পিছু হটে বিএসএফ, তাদের ১৬ জন সৈন্য নিহত হলেও বিডিআরের প্রাণ হারাণ ২ জন সৈন্য।
আসাম সীমান্তে ২৩০ একর আয়তনের একখন্ড ছোট জমি বাংলাদেশ থেকে দখলে নিতে ভারতীয় বাহিনী ওই হামলা করেছিল।
সময়টা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের যখন ঠিক বিদায় ঘণ্টা বাজছিল (১৯৯৬-২০০১)। তাই বিজিবির গৌরবজ্জ্বল অর্জনেও পুরস্কৃত হতে পারেনি সীমান্তের অতদ্র প্রহরীরা। সাধারন মানুষও একবাক্যে বলে ফেলেন, "আওয়ামী লীগ মানে ভারতের দালাল"। কারন ভারতই তো ক্ষমতায় বসায়?
বিজিবির সাহসিক যুদ্ধ নিয়ে দেশব্যাপী যখন আলোচনার ঝড় বইছিল, তখনই (১১ জুলাই ২০০১) বিডিআর প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় মেজর জেনারেল এ এল এম ফজলুর রহমানকে।
বিএনপি-জামায়াত গদি পেল। এবার চাকরিটাই হারাতে হলো বিডিআর প্রধান এ এল এম ফজলুর রহমানকে।
তার ফেসবুকে লেখেন, "যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় তখন ভারতের সঙ্গে আমার পদুয়া-রৌমারির যুদ্ধ হয়। যখন যুদ্ধের কারণে ভারতের চাপে আমাকে চাকুরীচ্যুত করা হয় তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি এবং জামাত।"
এরপর ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকার এবং আওয়ামী লীগের একটানা তিন মেয়াদের শাসন। ফেলানী হত্যাকান্ড সীমান্ত হত্যার একটি নমুনা মাত্র। সুতরাং সীমান্তে হত্যা বন্ধে বর্তমান বিজিবি চাইলেও সাহসিক ভূমিকা দেখাতে পারবে কীনা প্রশ্ন রয়েছে।
গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবী, তারা বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে ছোট বলিদিয়ায় নিহত মোনতাজ আলীর মরদেহ কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে ভারতীয় অংশে পড়েছিল।
মানবাধিকার সংস্থা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মতে, বিগত কয়েকদিন ধরে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে মোট ১৪ জন ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে।
বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে বারবার ভারতীয় অংশ থেকে বলা হচ্ছে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের সীমান্তে হত্যা জিরো লেভেলে নামিয়ে আনা হবে, সেখানে লাশের সংখ্যা বাড়ছে এ নিয়ে বাংলাদেশীদের মনে উদ্বেগ বাড়ছে।
যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কদিন পরপর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষ মারা যায়। যদিও এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা একটা লাশও বর্ডারে দেখতে চাই না। কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা ঘটে।
"আমি প্রায়ই বলে থাকি, আগেও বলেছি, এটি (সীমান্তে হত্যা) আমাদের জন্য দুঃখজনক আর ভারতের জন্য লজ্জাজনক" বলেন পররাষ্টমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাই বলুক না কেন, বিজিবি গরু চুরি সহ নানা অজুহাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, সংখ্যায় কম আর বেশি। সরকার আসে সরকার যায়, লাশ পড়ে জনতার তাতে কার কী আসে যায়? এটা কোন ব্যাপারই না!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১২:৩৮