তহনও বিয়ে-টিয়ে করা হয়নি। পাত্রীপক্ষ যতবারই ৫৫০০ বেতন শুনেছে ততবারই পালিয়ে গেছে। হাজীর মেসে শুয়ে শুয়ে ভাবতাম চাল, ডাল, তেল, মাছের দাম এতো কম; মাস শেষে ৬০০-৭০০ টাকা সঞ্চয়ও হয়। বসিলার দিকে গেলে পুরো সংসার চালানো যায়, তবুও বৌ পাচ্ছিনা!
মোহাম্মদপুর কাটাসুরে ব্যাচেলরদের অতিপরিচিত ঠিকানা হাজীর মেস। প্রায়ই সেখানে বুয়াদের সঙ্গে কথা-কাটাকটি হতো। এই ধরুন, তিনদিন পরপর লবণ শেষ। চাল নাই, তরকারি নাই। ডালের ওপর তেলের বিশাল আস্তরণ, পেঁয়াজে ভরা এসব নিয়ে।
বুয়া প্রায়ই খোট্টা দিয়ে বলতেন, "আপনাদের বৌ থাকবে না, একটু বেশি তেল-পেঁয়াজ ছাড়া কি রান্নার স্বাদ হয়। বৌয়ের সঙ্গে তেল নিয়ে এভাবে বইলেন না। বুয়াদের পাইছেন যত পারেন বলেন।"
শহরে অন্তত ৮ মেসে ছিলাম। প্রায় সব বুয়াদেরই একই ভাষ্য। ততদিনে আসে লক্ষ্মী বৌ। তেলের দামও হু হু করে বাড়ছে। ঈদ আসে তো ব্যবসায়ীদের রাগ-অভিমান বেড়ে যায়, তাদের লোকসান যেন থামছেই না। পেঁয়াজেরও ঝাঁজ্ বাড়ে। বৌকে সরিষার তেল খাওয়ার পরামর্শ দিলাম। এতে কোলস্টেরল বাড়বে না, রান্নারও স্বাদও অপূর্ব সেই পরামর্শেও কাজ হচ্ছে না। যেন বুয়াদের অভিশাপ।
যাক সেই কথা, সর্বশেষ ব্যবসায়ীরা তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। মাত্র ১৯৮ টাকা, মানে ক্রেতাদের দিতে সুনজর দিয়ে দুইশ টাকা থেকে নিচে। সামনের আছে পেঁয়াজ, হাওরে বন্যার অজুহাতে চালের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে জ্বালানি তেল নিয়ে গণপরিবহনে কী ঘটে সেটা বাদই দিলাম।
আমার মতো অনেকেই ওষ্ঠাগত! কারও ক্ষেত্রে হয়তো তেলের দাম ৫০০ করলেই কী বা আসে-যায়। তবে যে মানুষটির নিন্ম, নিন্ম মধ্যবিত্ত আয়ের; যার অবৈধ আয় নেই। তার জন্য সত্যিই এটা যন্ত্রণাদায়ক। এজন্য বলছি তেলের দাম ৫০০ টাকাই নির্ধারণ করা হোক। যার সামর্থ্য আছে, তেল খাবেন। যার সামর্থ্য নাই তিনি তেলের ঘ্রাণ শুকবেন!
সরকার বলছে বা বলবে, তাদেরও কিছু করার নাই, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ঊর্ধ্বগতি। কিন্তু বিশ্বের কোন দেশ আছে যেখানে বাজার ব্যবস্থায় কঠোর মনিটরিং নাই। কোন দেশ আছে যেখানে লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট আছে?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৭