মঙ্গল সাব ব্যাপক ক্ষমতাধর। সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারী, সন্ত্রাস সাপ্লাই, ভূমিদস্যুতা সব কাজেই তার বাহুবল রয়েছে। সে সুবাদে পেয়েছেন দলীয় পদবীও। তবে তাতেও মন ভরেনি। টাকা উড়িয়ে একবার এমপি ফরম কিনেছেন তো এক্কেবারে আইনসভার সদস্য। হ্যাটট্রিকের পথে, এবার ঠেকায় কে?
বিলাসী নেতা হেলিকপ্টারে করে প্রতিমাসে নির্বাচনী এলাকা ভ্রমণে যান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কমিশন, সড়ক ও জনপদ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, ত্রাণ ও দূর্যোগসহ সব সরকারি প্রকল্পে তিনি মিস্টার ১৫ পারসেন্ট। কার এমন সাধ্য আছে তার নির্দেশনা এড়িয়ে যাওয়া।
স্কুলের দপ্তরি নিয়োগ, গরীবের প্রকল্পের টাকা, স্কুলের মাঠ ভরাট না করেও শতভাগ টাকা পকেট ভর্তি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার সহযোগী।
তবে ঈদ এলে দারুণ বদলে যান মঙ্গল, গরীব-দুঃখীদের জন্য ত্রাণ, কাপড়, খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেন গ্রামে গ্রামে। ছদ্মবেশী গরীব বা দলীয় কর্মীরাও এতে বাদ পড়েন না। হাটে-বাজারে এজন্য মঙ্গলের নাম-ডাকও ভাল। বুড়ো-বুড়িরা সুনাম করে, "এমপি সাব একা খায়না, গরীবের দিকেও নজর রাখে।"
এমপি সাব প্রতিবার হজ্ব পালন করেন, স্ত্রী-সন্ত্রান, বাবা-মা পরিবারের সবাই হাজী। পোস্টার সাটানো হচ্ছে নামের সঙ্গে আলহাজ্ব যুক্ত করে। নেকী মানুষ, পাঞ্জাবি-পাজামা পড়ে ঘুরে বেড়ান। পাড়া-মহল্লার মসজিদ, মক্তব কিংবা মন্দিরে দু'হাতে টাকা বিলান। ধর্মসভার রক্ষকেরাও প্রফুল্ল। এমপি সাব দুর্নীতি করেন তাতে কী গরীব-দুঃখী, আল্লার কাজে ব্যয় করেন। নিজেও ধার্মিক। জুম্মার খুতবায় তার জন্য দোয়া হয়, মাহফিলে বড় বড় পীর সাহেবরা দু'হাত তুলে পাপ মোচন বা বেহেসতের টিকিট চান।
মুসল্লিরা বলেন, যাকাত প্রদানের মাধ্যমে এমপি সাবের দুর্নীতি পরিশুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন মানুষ দোয়া করবে। তার চৌদ্দ পুরুষ বেহেসত পাবেন। মারহাবা।
গ্রাম কিংবা শহরে ঈদ উৎসবে এমন এমপি কিংবা জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আমলাদের যাকাতে মানুষের মুখে হাসি ফোটে। কেউ কেউ দানবীর হাতেমতায়ী, কেউবা মানবতার মহানায়ক, মানবতার বাতিঘর খেতাবও পাচ্ছেন। কিন্তু ধর্ম কি বলে, যাকাত দিলেই কি দুর্নীতির সম্পদ পরিশুদ্ধ হয়। তাহলে আসুন দুর্নীতি করি পকেট ভরি, বছর শেষে দান-খয়রাত করি!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০২২ রাত ১২:৫৪