বাংলাদেশের কথা বলছি না, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে থাকা চোরদের বিরুদ্ধে লিখতে আমার বড় শঙ্কা জাগে, ভয়ে শরীর তরতর করে কেঁপে ওঠে। গুম-খুনকে কে না ভয় পায়? তার চেয়ে ভয়ঙ্কর চোর আড়িপাতায় নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় সেবকরা।
বলছি, প্রতিবেশি দেশ ভারতের কথা। দেশটির ক্ষমতাসীন 'ভারতীয় জনতা পার্টির-বিজেপি' সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রভাবশালী শাহের ছেলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠজন ব্যবসায়ী নিখিল মার্চেন্ট এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের সন্দেহজনক লেনদেন বা ব্যবসা নিয়ে একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করছিলেন ‘দ্য ওয়্যার’ এর সাংবাদিক রোহিনী সিং।
নারী সাংবাদিক রোহিনী সিংকে এ নিয়ে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মতো তথ্য-প্রযুক্তি আইনে জেলে যেতে হয়নি।
অমিত শাহের ছেলে কিংবা নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্টজনদের আর্থিক কেলঙ্কোরি ফাঁস করলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের কল রেকর্ড, ছবি, তথ্য ফাঁসের দায় ইসরায়েল বা তাদের প্রযুক্তি কোম্পানি কেন নেবে। কিংবা অমিত শাহের ছেলে কিংবা নরেন্দ্র মোদীর সম্মান উদ্ধারে ইসরায়েল কেনই বা ঝাপিয়ে পড়বে?
সাধারনত, ইসরায়েলের আড়িপাতা কোম্পানিগুলো অন্য রাষ্ট্রের তথ্য চুরিতে নিজ দেশের অনুমতি বা নির্দেশনা নিয়ে থাকে। আবার যে দেশের তথ্য চুরি করা হয় সেসব রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকদের হয়েই কাজ করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যাদের ফোন কল রেকর্ড করা হয়েছে।
যদিও এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনটা সরকার আর কোনটা রাষ্ট্র তা বোঝা দুষ্কর। তবে ভারতের দুই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির হয়ে তথ্য চুরি তারা কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেনা।
ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা 'পেগাসাস' নামক সফটওয়্যারে বিশ্বের ১৮০ জন সাংবাদিকের মতো আটকা পড়েন রোহিনী সিং। আড়িপাতার সম্ভাব্য নিশানায় থাকা হাজারো ফোন নম্বরের ফাঁস হওয়া তালিকায় ভারতের ৪০ জনের বেশি সাংবাদিক আছেন। পেগাসাস কেলেঙ্কারিতে সারা বিশ্বে ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের যে তালিকা ফাঁস হয়েছে, রোহিনি সিং একজন।
দ্য ওয়্যার জানায়, পেগাসাসে ফাঁস হওয়া ফোন নম্বরের তালিকায় তাঁদের দুজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রয়েছেন। এ ছাড়া আছেন একজন কূটনীতিক সম্পাদক ও দুজন নিয়মিত প্রদায়ক। তাঁদের মধ্যে আছেন রোহিনী সিং। সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, এমনকি কোনো দেশের ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের ওপরও আড়িপাতা হয়েছে।
পেগাসাস হলো একটি ম্যালওয়্যার (বিশেষ ধরনের ভাইরাস)। এর মাধ্যমে আইফোন ও অ্যানড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়। এ ম্যালওয়্যার ফোন ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই মাইক্রোফোন চালু করে দেয়। ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তালিকায় যে ৫০ হাজার ফোন নম্বরের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ‘অতিরঞ্জিত’।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৪৬