দেখতে দেখতেই সাত সকালের ড্রিলিং অভ্যাস হয়ে গেল। ঘামে চুপচুপা আর কুকুরের মত হাঁফাতে হাঁফাতে সবাই হাউসে ফিরে আসতাম। এসেই কয়েকজন বিছানায় লুটিয়ে পরত যদি আরো কিছুক্ষন ঘুমানো যায়। কিন্তু আফসোস ৫মিনিট দম ফেলার ও টাইম পাওয়া যেত না, গোসল করার জন্য বাথরুমে সিরিয়াল পড়ে যেত। গোসল করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ডাইনিং হলে ঢুকতে হবে। গোসল করার সময় আমরা অনেক মজা করতাম। কেউ যদি ফাঁক তালে গোসল করে রেডি হয়ে যেত, আমরা বালতি নিয়ে আবার তাকে ভিজায়ে দিতাম, নে আবার গোসল কর...পুরা হাউসের বারান্দা ভিজে যেত, এর জন্য কত বকা যে খাইসি। এই সময় অনেকের মনে পড়ে যেত, আজকে স্কুলে কি পড়ে যাব?? মুজা তো ধোয়া হয় নাই, শার্ট টা তো ময়লা, আন্ডি ছাড়া প্যান্ট পড়মু কেমনে??? ...আয় হায়...বলে বসে যেত হুইল আর কাপড় ধোয়ার ব্রাশ নিয়ে। কত দিন যে ভিজা মোজা পরে ক্লাস করসি...।
কোন মতে কাউয়া গোসল করে শার্ট আর সেই বিখ্যাত সাদা প্যান্ট পরে রেডি...কিন্তু একি?? জুতায় দেখি কালি করা নাই?? তাড়াতাড়ি করে জুতায় কালি করতে বসে যেতাম। জুতায় কালি করা ছিল একটা বিশাল কর্ম-যজ্ঞ।
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
১। kiwi শু পলিশার
২। kiwi জুতার কালি
৩। জুতার ব্রাশ
৪। নারিকেল তেল
৫। সাদা ত্যানা (সাধারনত পুরানো বা ছিড়ে যাওয়া স্যান্ডো গেঞ্জি)
জুতা এমন ভাবে পালিশ করতে হত যেন আয়নার মত নিজের খোমা টা দেখা যায়। সিনিয়র হবার পরেই এই জুতা পালিশ করার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে গেছিলাম। তখন তো একটা হুকুম দিলেই জুতা রেডি হয়ে থাকত। আমার জুনিয়র গুলা খুব ভালো ছিল, কখনই গাই গুই করত না। কারন তারা জানত করলে ও তেমন লাভ হবে না। কেউ বেয়াদপি করলে জুতা পালিশ করতে দেয়া টা একটা জনপ্রিয় উপায় ছিল।আল্লাহ বাঁচাইসে আমার উপর সিনিয়রদের নেক নজর ছিল।
ফুল বাবু সেজে লাইনে দাড়াতাম, নজরুল স্যার এক এক করে সবার ড্রাস আপ চেক করে ডাইনিং এ ঢুকার অনুমতি দিতেন। (পুরা আজাইড়া...কত্ত দিন নজরুল মিয়া রে ফাকি দিসি। শার্টে যদি একটু ও দাগ থাকত তাইলে কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করে উঠত। দাগ লুকাতে তাই ট্যালকম পাউডার পানিতে গুলায়ে দাগ ঢেকে দিতাম, কে ধরবে আমারে...)
সকালে নাস্তার এই পার্ট টুকূ আমার সব চেয়ে অপছন্দের ছিল। নাস্তা জিনিস টা আমি এখনও খেতে পারি না। অন্য কিছু না হয় বাদ ই দিলাম...সাত সকালে মানুষ সিদ্ধ ডিম খায় কেমনে??? সাদা সাদা ডিম টা দেখলেই তো নাড়ি ভূড়ি সব উল্টায় আসে। এখন আমি কি করি?? ডিম খাওয়া তো বাধ্যতামূলক। প্রথম দিকে একবার শুধু সিনিয়র ভাইকে বলেছিলাম-ভাইয়া আমি ডিম খাব না। এমন ঝাড়ি খাইসিলাম...। উলটা ঐদিন ভাইয়া নিজের পর্যবেক্ষনে আমার ডিমের সাথে সাথে তার নিজের ডিম টা ও গলধকরন করতে বাধ্য করেছিল।আর কোনদিন সাহস হয় নাই...অনেক কষ্টে সেদিন বমি চেপে রাখেছিলাম। এরপর ট্রিক্স শিখে গেলাম...
“ডিমের খোসা ছিলতে ছিলতে কায়দা করে সবার নজর এড়িয়ে ডিম টা কে প্যান্টের পকেটে চালান করে দাও। আজাইড়া কিছুক্ষন গায়েবী ফল চর্বন কর...আর স্কুলে যেয়ে ডিম টা চিল কে খাওয়াও” ...একদম ফুল প্রুফ প্ল্যান। কোন দিন ধরা খাই নাই।
নাস্তা পর দুই হাউস থেকে একই সময়ে মার্চ করতে করতে আমরা বের হয়ে আসতাম, কারা আগে যাবে এটা নিয়ে পথে শুরু হয়ে যেত জয়নুল-কুদরতের এক অ্মিমাংসিত যুদ্ধ। জয়নুল-কুদরতের মধ্যে যতই সাপে-নেউলে সম্পর্ক থাকুক না কেন স্কুলে পা রাখার সাথে সাথে আমরা সেটা ভুলে যেতাম। এক সাথেই সব বান্দ্রামি করতাম আর এক সাথেই মার খেতাম। যুদ্ধ কিন্তু থেমে থাকত থাকত না, তখন যুদ্ধ শুরু হত স্কুল সেকশন নিয়ে ।
আমার বান্দর বেলা [পর্ব দুই]- Click This Link