somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এন্টিবায়োটিক-ডাক্তার-রোগী-আমাদের অন্ধকার ভবিষ্যত

১৩ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিপ্লব সাহেবের ছোট ছেলের গতকাল থেকে জ্বর। এখন উনি এক ডাক্তারের চেম্বারে। খুবই নাম ডাক এই ডাক্তারের। রোগী খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। ডাক্তার সাহেব বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করল কি করল না, ঝটপট লিখে দিল হাই ডোজের 3rd Generation এন্টিবায়োটিক। বিপ্লব সাহেব ও খুশি মনে বেশ দাম দিয়ে ৫দিনের ফুল কোর্স ঔষুধ কিনে বাসায় চলে আসলেন। ঔষুধের যাদুকরী গুনে ২দিনেই বাচ্চার জ্বর গায়েব। সবাই খুব খুশি, সব ঔষুধ শেষ হওয়ার আগেই বাচ্চা রীতিমত দৌড়াচ্ছে। বাকী ঔষুধ গূলো তুলে রেখে দিলেন, পরে কারো জ্বর-টর আসলে কাজে দিবে।
৬০ বছরের আশরাফ সাহেব কোন ডাক্তার দেখান না। তার মতে বাংলাদেশের ডাক্তার রা কিছু জানেই না। উনি ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি গুলোর লিটারেচার পড়ে পড়ে নিজেই ডাক্তার হয়ে বসে আছেন। বাসার কারো কিছু হলে তিনি নিজেই ফার্মাসি থেকে মন মত ঔষুধ কিনে নিয়ে আসেন। প্রেসারের ঔষুধ কি এন্টিবায়োটিক কিছুই বাদ যায় না।
বেশ কয়েক বছর পর বিপ্লব সাহেবের সেই ছেলের আবার জ্বর আসল। প্রথম কয়েকদিন ডাক্তারের দেয়া সেই এন্টিবায়োটিক খেয়ে গেল, কিন্তু জ্বর আর কমে না। আসতে আসতে জ্বর বারতে লাগল। কমার কোন লক্ষন ই দেখা যায় না। আবার ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার এন্টিবায়োটিক পালটে দিলেন। কিন্তু এই ঔষুধেও কোন কাজ হয় না। জ্বর আর কমে না...
এইত গেলো আমাদের দেশের রোগী আর ডাক্তারদের কথা। বেশীর ভাগ রোগী আজকাল সেই ডাক্তারের কাছেই যায় যারা প্রথমেই দামী এন্টিবায়োটিক দিয়ে জ্বর কমাতে পারে। আর ডাক্তারদের ও কিছু করার থাকে না। প্রসার বাড়াতে তারাও এন্টিবায়োটিক ই প্রেসক্রাইব করে দেন।
আমি এটা নিয়ে এত পক পক করছি কেন? মানুষ তো রোগ সারানোর জন্যই ঔষুধ খায়? আজাইড়া পেট ভরতে তো আর খায় না। এন্টিবায়োটিক খেলে যদি জ্বর কমে যায় তাতে আমার আপনার সমস্যা টা কোথায়??
এখন দেখি সমস্যা গুলো কি কি
১। আপনি কোন ভাবে ইনফেক্টেড হলেন>>এন্টিবায়োটিক কাজ করবে না>>ইনফেকশান দীর্ঘদিন ধরে আপনাকে ভুগাবে>> আপনি মারা ও যেতে পারেন।
২। আপনার ইনফেকশ্ন যদি resistant আর communicable টাইপের (যেমন- যক্ষা) হয় তাহলে অন্যদের ও ইনফেকটেড করবেন। এভাবে ব্যক্টেরিয়ার resistant strain টা ছড়িয়ে পড়বে। তৈরী হবে এক সুপার ইনফেকশন যার ফলস্বরূপ আমরা এক ভয়াবহ মহামারির মুখোমুখি হব।
৩। আপনার ইনফেকশন যদি 1st generation antibiotic resistant হয় তাহলে আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই 2nd /3rd generation ড্রাগের উপর ভরসা করতে হবে। আর 2nd /3rd generation ড্রাগের দাম আর তার পার্শপ্রতিক্রিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই 1st generation antibiotic থেকে অনেক অনেক গুন বেশী । (এখানে কথা হল, আপনি যদি treatment শুরুই করেন 3rd generation drug দিয়ে, পরবর্তীতে যদি আপনি resistant হয়ে যান, তাহলে এর পরের treatment কোন ড্রাগ দিয়ে করবেন???)
ব্যাক্টেরিয়া কিভাবে এন্টিবায়োটিক resistant হয়...??
দুইভাবে ব্যাক্টেরিয়া নিজেদের রক্ষা করে...
১। প্রাকৃতিক ভাবে
• তারা এমন কিছু এনজাইম তৈরী করে যা সেই ড্রাগের কার্যকারীতা নষ্ট করে দেয়।
• তারা নিজেদের চারপাশে এমন আবরন তৈরী করে ফেলে যা সেই ড্রাগ ভেদ করে ব্যাক্টেরিয়ার ভিতর ঢুক্তে পারে না।
• ড্রাগের যে কাজ সেটা পুরোটাই একটা chemical reaction, ব্যাক্টেরিয়া এমন pathway develop করে ফেলে যার ফলে সেই drug-bacteria chemical reaction bypass করতে পারে।

২। জেনেটিক ভাবে
• Human cell bacterial cell এর মধ্যে একটা বড় পার্থক্য হল mutate করার ক্ষমতা।
আমরা যখন একটা এন্টিবায়োটিক খাই তখন ড্রাগটা সেই ব্যাক্টেরিয়ার উপর এটাক করে। যেহেতু ব্যাক্টেরিয়া খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি (replicate) করে তাই এন্টিবায়োটিক দুই ভাবে কাজ করে-
১। ব্যাক্টেরিয়াকে পুরোপুরি না মেরে তার বংশবৃদ্ধি থামিয়ে দেয়। (bacteriostatic drugs)
২। ব্যাক্টেরিয়াকে পুরোপুরি মেরে ফেলে। (bacteriocidal drugs)
যখন আমরা এন্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করি, প্রথম ড্রাগ টা খাওয়ার সাথে সাথেই ব্যাক্টেরিয়া বুঝে নেয় কাহিনী খারাপ। একে অপরকে তারা বিপদ সংকেত দিয়ে দেয়।তারা নিজেদের তৈরী করতে থাকে। এখন যদি মাঝ পথে আমরা এন্টিবায়োটিক নেয়া বন্ধ করে দেই, তাহলে কিছু ব্যাক্টেরিয়া মারা গেল ।কিন্তু সব একবারেই তো আর মারা যায় না। যারা বেঁচে থাকে তারা নিজেদের mutate করে ফেলে। এন্টিবায়োটিক response হিসেবে তারা এমন DNA sequence তৈরী করে যার ফলে তৈরী হয় নতুন এক strain।এভাবে যদি একটা strain ও তৈরী হতে পারে তাইলে হইসে কাম। সেই resistant strain খুব দ্রুত রেপ্লিকেট করে নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়েই যাবে। এর পর আর সেই ড্রাগ কাজ করবে না।

আমাদের কি করা উচিত
১। সামান্য সর্দি, জ্বর, ফ্লু, কাশি, নাক দিয়ে পানি পরলেই আমরা এন্টিবায়োটিক নেয়া শুরু করি। কিন্তু আমরা হয়ত জানিই না যে এইসব বেশীর ভাগ রোগের কারন ব্যাক্টেরিয়া না...ভাইরাস। এন্টিবায়োটিক খেলে কখনই ভাইরাস মরে না। তাই এন্টিবায়োটিক খাওয়ার আগে জেনে নিন আপনার রোগের কারন টা কি?? ব্যাক্টেরিয়া না ভাইরাস???। ডাক্তারা এই বেপারে মুখ্য ভুমিকা পালন করতে পারে।
২। যথাযথ ডায়গনোসিস এর পর এন্টিবায়োটিক যদি প্রেসক্রাইব করা হয় তাহলে ফিজিশিয়ান এর কথা মত ফুল কোর্স এন্টিবায়োটিক শেষ করতে হবে। যদি ৩দিনের ড্রাগ দেয়া হয়, আর ১দিন পরেই রোগ ভাল হয়ে যায় তার পরেও আপনাকে কোর্স শেষ করতে হবে।
৩। সবচেয়ে ভাল হয় এন্টিবায়োটিক এভোয়েড করলে। আমাদের ইমিউন সিস্টেম এমনিতে খুব ই শক্তিশালী। আমরাই এন্টিবায়োটিক খেতে খেতে ব্যাক্টেরিয়াকে এতটা শক্তিশালী করে ফেলেছি। ভালো মত পুষ্টিকর খাদ্য খেলে, এক্সারসাইজ করলে, নিয়ম করে ভ্যাক্সিন নিলে আর কোন চিন্তা নেই।
৪। সামান্য জ্বর হলে ততক্ষন পর্যন্ত ঔষধ খাওয়া ঠিক না যতক্ষন পর্যন্ত জ্বর অসহ্য হয়ে উঠে। এই ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক খাওয়া একদম ই ঠিক না। আপনার জ্বর ভাইরাস এর কারনেও হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সেই এন্টিবায়োটিক আপনার জন্য resistant হয়ে যাবে। এরপর যখন আপনার সত্যিকারের দরকার পড়বে তখন সেই ড্রাগ আর কাজ করবে না।
৫। সবসময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
৬। বেশী করে পানি খেতে হবে আর সময়মত ঘুমাতে হবে (যেটা আমরা একদমই মানি না)
৭। ডাক্তারদের কাছে অনুরোধ তারা যেন যথাযথ ডায়াগনোসিস করেই ড্রাগ প্রেসক্রাইব করেন।
৮। আর আমরা যারা ডাক্তার দের থেকে বেশী বুঝি তারা এখন থেকে অফ যাই।

আমি চেষ্টা করেছি খুব সহজ ভাষায়, টেকনিক্যাল টার্মস ব্যবহার না করে একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস স্মপর্কে আপনাদের সচেতন করতে। আমরা সবাই যদি সচেতন হই তাহলে এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই বাঁচতে পারব। যদি কেউ কোন বেপার বুঝতে সমস্যায় পড়েন তাহলে আওয়াজ দিয়েন...
৮৪টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×