[সমস্ত প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার জন্য। দরূদ ও সালাম আল্লাহর রসূল, দোজাহানের সর্দার, বিশ্বশান্তির একমাত্র আদর্শ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। আমরা দোয়া করি আল্লাহতায়ালা লেখক ও পাঠক উভয়পক্ষকেই হেদায়াত দান করুন। আমীন]
'মা-বাবা' বিষয়ে লিখতে গিয়ে আমার নতুন কোন কথা নেই কারণ কুরআন মাজীদ এবং হাদীস শরীফে মা-বাবা বিষয়ে সমস্ত কথা স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। এখন শুধু আমাদের মানার পালা। যে মানতে পারবে সে হবে কামিয়াব। আর যে মানবেনা তার বিষয়েও পরিষ্কারভাবে বলা আছে। আমার আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন মানবজাতীর হেদায়েতের জন্য কুরআনুল কারীমে সবকিছু স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন এবং আল্লাহর রসূল, দোজাহানের সর্দার হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবজাতীকে তা শিক্ষা দান করেছেন। অতঃপর 'মা দিবস' 'বাবা দিবস' এবং এসবকিছু ঘিরে যত আয়োজন, উইশ করা, ক্রোড়পত্র বের করা ইত্যাদি সমস্ত কিছু বড্ড অপ্রয়োজনীয় ও বাহুল্য মনে হয়। দেখেন আমার আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন 'মা-বাবা' সম্পর্কে আমাদের কি হেদায়েত বা পথনির্দেশ দিয়েছেনঃ
۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا
وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا
সূরা বনী ইসরাঈলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াত দুটি তুলে ধরছি। আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা এখানে আমাদের জানাচ্ছেনঃ
"তোমার রব নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করবে এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন বা উভয়ই তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হলে তোমরা তাদের (বিরক্তিসূচক) 'উহ' (শব্দ পর্যন্ত) বলবে না, তাদের ধমক দিবে না, এবং তাদের সাথে কথা বলবে বিশেষ সম্মানের সাথে। বিনয়ের সাথে নম্রতার ডানা প্রসারিত করে তাদের সামনে নত হয়ে থাকবে এবং আল্লাহর কাছে এ দু'আ করবে, হে আমার রব! তাদের প্রতি রহম করুন সেভাবে, যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।"
সূরা লোকমানে ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আমাদের বুঝাচ্ছেন এভাবেঃ
وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ
"আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। মা-তো সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে নিজের পেটে বহন করেছে, অতঃপর তাকে একাধারে দুই বছর দুধ পান করিয়েছে। অতএব তুমি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাক ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমারই নিকটে তোমাদের প্রত্যাবর্তন।"
এখন দেখি নবীজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী বলেছেন। রিয়াজুস সালেহীন কিতাবের ৩১৬ নং হাদীসের অনুবাদ নিম্নরূপঃ
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার ও সৎসঙ্গ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বলেনঃ তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বলেন, তোমার মা। সে বলল, অতঃপর কে? তিনি বলেন, তোমার পিতা।
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবানীতে আপনাদের সামনে কুরআন শরীফের দুটো আয়াত এবং একটি হাদীস পেশ করলাম। যেন আমরা সামান্য উপলব্ধি করতে পারি আমাদের কাছে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল কী চাচ্ছেন ও এর বিপরীতে আমরা কী করছি। কুরআন ও হাদীসের হুকুমগুলোকে সামনে রেখে আমরা যদি আমাদের নিজ নিজ আ'মল মিলিয়ে দেখি তাহলে ইনশা'আল্লাহ বুঝতে পারব আমরা কোন পথে যাচ্ছি। মাদারস ডে, ফাদারস ডে এর চেতনা কি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারবে নাকি কুরআন হাদীসের অনুসরণের মাধ্যমেই প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা?
অন্যদিকে মা-বাবারও দায়িত্ব আছে। তাদের দায়িত্ব আরো বড়। সন্তান যে মা-বাবার সেবা করবে এটাতো সন্তানদের শেখাতে হবে মা-বাবাকেই। মা-বাবার সাথে কিরূপ ব্যবহার করতে হয়, এসব বিষয়ে ইসলামের হুকুমগুলো কি কি এ জিনিসগুলো মা-বাবা কখনো সন্তানকে শিখালেন না, এথচ সন্তান থেকে সুব্যবহার ও সদাচার আশা করেন কিভাবে? আগেতো শেখাতে হবে, তারপরতো বেচারা আ'মল করবে। যেমন ধরুন সালামের ব্যাপারটা। "আসসালামু আলাইকুম।" এটা আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন। "আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।" কত সুন্দর একটা দু'আ। ঘরের মধ্যে সালামের প্রচলন না করলে সন্তান শিখবে কিভাবে? পরে ছেলে বাবাকে সালাম দিতে লজ্জা পায়। যে বাবা এত কষ্ট করে সন্তান মানুষ করল, নিজে না খেয়ে বাচ্চার ওষুধ কিনে দিল সে সন্তান বড় হয়ে বাবাকে সালাম দিতে লজ্জা পায়। এটা কিছু হলো? ছেলে বড় হয়েছে এখন মায়ের সামনে সিগারেট ফুঁকে। নেশার টাকার জন্য মায়ের উপর টর্চার করে। এরকম আমাদের সমাজে আছেনা? সন্তানের কারণে মা-বাবার হৃদয়ে হয় রক্তক্ষরণ। শারীরিক আঘাতও সইতে হয়। মা কাঁদে, বাবা কাঁদে, সন্তানকে অভিশাপ দেয়। কিন্তু এখন আর কেঁদে কি লাভ? যখন দ্বীন শিখনোর প্রয়োজন ছিল, মানবজীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী বুঝানোর কথা ছিল, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল, কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে জানানোর কথা ছিল তখন আপনারা কি শিক্ষা দিয়েছিলেন একটু স্মরণ করুন। ডরিমন, টাটা, নাচ, টিভি সিরিয়াল এসব পরিবেশে যে শিশু মানুষ হয় সেখান থেকে আপনি এরচেয়ে বেশি আর কি আশা করতে পারেন। অথচ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যার জীবনের প্রথম শব্দ হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং শেষ শব্দও হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে যদি হাজার বছরও বাঁচে তার জীবন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হবে না।
সন্তান একটু বড় হলো। তাকে স্কুলে দিলেন। কখনো কি খোঁজ রেখেছেন সে কার সাথে মিশে, কি করে? সাত বছর বয়সে আপনার সন্তানকে নামাজ শিখাতে হবে। মসজিদে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। মেয়ে শিশু বাসায় মার সাথে নামাজ পড়বে। কুরআন হাদীস শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। হালাল রিযিকের মাধ্যমে পরিবারের ভরনপোষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে যে শিশু বড় হবে সে আর যাই হোক নাস্তিক হবে না, মা-বাবার জন্য কষ্টদায়ক হবে না। আপনি মারা গেলেও এই সন্তান আপনার জন্য দু'আ করবে। "রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগীরা।" "প্রভু হে, আমার মা-বাবাকে রহম করো, তাদের প্রতি দয়া করো সেভাবে, আমি যখন ছোট্ট এতটুকু ছিলাম তখন তারা আমাকে যেভাবে লালন-পালন করেছিল।
আর যদি তাদেরকে যেমন তেমনভাবে বড় করেন তারা দুনিয়াতে আপনার জন্য হবে আযাবের কারণ, আখিরাতেও তারা হবে আপনার জন্য হবে কঠিন আযাবের কারণ।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং আ'মল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।