একটি শর্ট ফিল্মের স্ক্রিপ্ট
দৃশ্যঃ ১
চরিত্রঃ বেশ কয়েকজন রুগী, ডাক্তারের আটেন্ডেন্ট, মনিকা, সঞ্জয়
স্থানঃ ডাঃ অবনীশের চেম্বার
সময়ঃ সন্ধে সাতটা
দেখা যাবে ডাঃ অবনীশের চেম্বার। তাঁর রুমের দরজার ঠিক ওপরে আছে ছোট একটি নেমপ্লেট। সেখানে সবচেয়ে ওপরে লেখা আছে তাঁর নাম, তার নীচে লেখা আছে তাঁর ডিগ্রী তারও নীচে লেখা আছে তিনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। এরপরে ধীরে ধীরে দেখা যাবে তাঁর রুমের দরজার সামনে একটি চেয়ার আর টেবিল নিয়ে বসে আছে একজন আটেন্ডেন্ট। সামনে খাতা খোলা। আর দেখা যাবে অনেক কয়েকজন রুগী বসে আছেন। এরপরে একসময় দেখা যাবে সঞ্জয়কে। সে কিছুটা বিব্রত। ধীরে ধীরে সে পাশে বসা মণিকার দিকে তাকাবে। মনিকা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁর হাতে ধরা একটা ফাইলের দিকে। এবার দেখা যাবে সেই ফাইলে লেখা আছে ডাঃ অবনীশের নাম। আর ফাইলের ওপরের দিকে বড় বড় করে লেখা আছে ‘ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ’। মনিকা সেই লেখাটির দিকেই তাকিয়ে আছে।
--কাট
দৃশ্যঃ ২
চরিত্রঃ মনিকা, সঞ্জয়
স্থানঃ সঞ্জয়ের বেডরুম
সময়ঃ সকাল আটটা
মনিকা হাত মুছতে মুছতে বেডরুমে প্রবেশ করে। ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে বন্ধ বাথরুমের দরজার দিকে এগিয়ে যায়। নজরে পরে বিছানার ওপরে রাখা আছে একটা সিগারেটের প্যাকেট। মনিকা মাথা দুদিকে নেড়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। প্যাকেটটা আহতে নিয়ে বুঝতে পারে ওটা ফাঁকা। বিছানার পাশে রাখা ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে সেটা ফেলে দিয়ে বাথরুমের বন্ধ দরজার কাছে আসে।
মনিকাঃ ডাকছিলে?
ভেতর থেকে কোন উত্তর আসে না। মনিকা হাতের তালু দিয়ে দুবার আওয়াজ করে।
মনিকাঃ শুনছো? কিছু লাগবে?
এবারো কোন উত্তর না পেয়ে অবাক হয়। এরপরে মুখ ঘুরিয়ে নিতে নিতে বলে
মনিকাঃ আমি যাচ্ছি, রান্নাঘরে কাজ আছে।
এমন সময় দরজাটা খুলে যায়। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সঞ্জয়। মুখে রক্ত। সেদিকে প্রথমে অবাক হয়ে তাকায় মনিকা। এরপরে সারা মুখে ছড়িয়ে পরে ভয়।
--কাট
দৃশ্যঃ ৩
চরিত্রঃ বেশ কয়েকজন রুগী, ডাক্তারের আটেন্ডেন্ট, মনিকা, সঞ্জয়
স্থানঃ ডাঃ অবনীশের চেম্বার
সময়ঃ সন্ধে সাতটা
সঞ্জয় মনিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মনিকা তাকিয়ে আছে ফাইলের ওপর লেখাগুলোর দিকে। সঞ্জয়ও সেদিকে তাকায়। এরপরে ম্লান হাসে। মনিকাকে সাহস দেয়ার জন্য বলে
সঞ্জয়ঃ এতো ঘাবড়াচ্ছো কেন? ডাক্তার বাবু তো আগের দিন বললেন, ভয়ের কিছু মনে করছেন না।
মনিকা কিছু উত্তর না দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে সঞ্জয়ের দিকে তাকাবে। সঞ্জয় স্মিত হাসি হেসে সাহস দেয়ার চেষ্টা করবে। এমন সময় শোনা যাবে, ‘মিঃ সঞ্জয় সাহা’
তাঁরা দুইজনই সম্বিত ফিরে পেয়ে আটেন্ডেন্টের দিকে তাকাবে।
আটেন্ডেন্টঃ যান, আপনাদের সিরিয়াল।
তাঁরা দুজন ধীরে ধীরে উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
--কাট
দৃশ্যঃ ৪
চরিত্রঃ সঞ্জয়, মনিকা, একজন হওয়া বন্দুক ওয়ালা
স্থানঃ একটি পার্ক
সময়ঃ বিকেল পাঁচটা
সঞ্জয় আর মনিকা গল্প করছে। মনিকা কিছু একটা বলছে। সঞ্জয় তাকিয়ে আছে একটু দুরে হাওয়া বন্ধুক ওয়ালার দিকে। সে এখন টাকা গুনছে। টার্গেট প্র্যাকটিসের বেলুনগুলো সবই শেষ। কেবল রয়েছে একটি বেলুন। মনিকা এবার লক্ষ্য করে সঞ্জয় তাকিয়ে আছে সেই হায়া বন্দুকের দিকে।
মনিকাঃ তুমি আমার কথা শুনছো না।
সঞ্জয়ঃ স্বয়ম্বর মানে বোঝো?
মনিকাঃ হ্যাঁ, একসময় রাজকন্যারা নিজের ইচ্ছেয় রাজপুত্র বেছে নিত।
সঞ্জয়ঃ দ্যাট ইজ পার্ট অফ দ্যা স্টোরি।
মনিকাঃ পুরোটা কি?
সঞ্জয়ঃ পুরোটা হচ্ছে রাজপুত্ররা পরীক্ষা দিত। যে জিততো, রাজকন্যা তাকেই বেছে নিত।
মনিকাঃ তোমার মাথায় কিছু একটা ঘুরছে, তাই না?
সঞ্জয়ঃ দেখো, খুব সহজে কিছু পেলে, মানুষ কখনই তাঁর মূল্য বোঝে না।
মনিকাঃ যুদ্ধ জয় করে আমাকে পেতে চাও?
সঞ্জয়ঃ এডজ্যাক্টলি। একটা ডু ওর ডাই টাইপ কিছু।
মনিকাঃ অ্যান্ড হোয়াট ইজ দ্যাট?
সঞ্জয় দুরে বসে থাকা হওয়া বন্দুক ওয়ালার দিকে ইঙ্গিত করে। দেখা যায় একটা বেলুন কেবল ঝুলে আছে।
সঞ্জয়ঃ তিনটে চান্স।
মনিকাঃ যদি না পারো?
সঞ্জয়ঃ দেন, ইট’স অল ওভার। অন্য কোন রাজপুত্র আসবে তোমার জীবনে।
মনিকাঃ না।
--কাট
দৃশ্যঃ ৫
চরিত্রঃ ডাঃ অবনীশ, সঞ্জয়, মনিকা
স্থানঃ ডাঃ অবনীশের রুম
সময়ঃ সন্ধে সাতটা
চেম্বারের ভিউবক্সে একটা এক্সরে ঝোলানো আছে। ডাঃ অবনীশ মনোযোগ দিয়ে একটা রিপোর্ট পড়ছেন। উন্মুখ হয়ে মনিকা আর সঞ্জয় সামনে বসে আছে।
মনিকাঃ রিপোর্ট কি বলছে স্যার?
ডাঃ অবনিশ ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকালেন। স্মিত হাসলেন।
--কাট
দৃশ্যঃ ৬
চরিত্রঃ সঞ্জয়, মনিকা, একজন হওয়া বন্দুক ওয়ালা
স্থানঃ একটি পার্ক
সময়ঃ বিকেল পাঁচটা
সঞ্জয় বন্দুকটা হাতে নিয়ে বেলুনটার দিকে নিশানা করে। মনিকা বন্ধুকটা হাত দিয়ে ধরে ফেলে।
মনিকাঃ না
সঞ্জয় স্থির দৃষ্টিতে মণিকার দিকে তাকায়। এরপরে মাথা দুদিকে নাড়িয়ে ‘না’ সূচক ইঙ্গিত করে। মনিকাও ভয় পেয়ে যায়। ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে ফেলে। এরপরে সঞ্জয় বেলুনটার দিকে তাক করে। বেলুনটা দেখা যায়। হাওয়ায় উড়ছে। এমন সময় একটা আওয়াজ শোনা যায়। সঞ্জয় মণিকার দিকে তাকায়। মণিকার মুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। পাশে দাঁড়ানো বন্দুক ওয়ালা বন্দুকে আরেকটি গুলি ঢুকিয়ে দেয়। সঞ্জয় আবার বেলুনটার দিকে তাক করে। আস্তে ট্রিগারে চাপ দেয়। গুলির আওয়াজ শোনা যায়। সঞ্জয়ের ভীত কিন্তু স্থির চেহারা দেখা যায়। মণিকার দিশেহারা চেহারা দেখা যায়। বেলুনটা এখনো ঝুলছে। মণিকার চেহারায় স্থির সংকল্প। সে হাত বাড়িয়ে বন্দুকটা চেপে ধরে।
মনিকাঃ প্লিজ।
সঞ্জয় স্মিত হাসে।
--কাট
দৃশ্যঃ ৫
চরিত্রঃ ডাঃ অবনীশ, সঞ্জয়, মনিকা
স্থানঃ ডাঃ অবনীশের রুম
সময়ঃ সন্ধে সাতটা
অবনীশঃ এক্সরে তে যে এই স্পটটা দেখছেন, এখান থেকেই ব্লাড এসেছিল সেদিন। দুটো পসিবিলিটি ছিল, ক্যান্সার আর টিউবারকুলসিস। আর সেটা শিওর হতেই পরীক্ষাটা দিয়ছিলাম।
মনিকাঃ কি এসেছে রিপোর্টে?
অবনীশঃ টিউবারকুলসিস। আমি আগের দিনও প্রায় শিওর ছিলাম। বাট কোন প্রমাণ হাতে ছিল না। তারপর ভাবলাম, পেসেন্ট যেহেতু স্মোকার, তাই শিওর না হয়ে কিছু বলিনি।
মনিকাঃ কোন ভয় নেই তাহলে?
অবনীশঃ না। নেই। তবে সিগারেটটা একদম বন্ধ। আর টিবির ওষুধটা ঠিকমত, ছয় মাস খাবেন।
এই বলে ভিউবক্সে রাখা এক্সরে টা নামিয়ে টেবিলে রাখেন। এরপরে তিনি প্রেস্ক্রিপশান লিখতে শুরু করেন। সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মনিকা।
--কাট
দৃশ্যঃ ৬
চরিত্রঃ সঞ্জয়, মনিকা, একজন হওয়া বন্দুক ওয়ালা
স্থানঃ একটি পার্ক
সময়ঃ বিকেল পাঁচটা
বন্দুকটা ধরে আছে মনিকা। সঞ্জয় স্মিত হেসে ধীরে ধীরে মণিকার হাতটা বন্দুক থেকে সরিয়ে দেয়। মণিকার চোখ ছলছল হয়ে ওঠে। সে সঞ্জয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকে। সঞ্জয় ধীরে ধীরে বেলুনের দিকে তাক করে। বেলুনটা দেখা যায়। এরপরে ধীরে ধীরে ট্রিগারে চাপ দেয়। আওয়াজ হয়। সঞ্জয় অবাক চোখে দুরে তাকিয়ে থাকে। এরপরে ধীরে ধীরে হতবাক হয়েই মণিকার দিকে তাকায়। মনিকা তখন তাকিয়ে আছে সঞ্জয়ের দিকে। বন্দুক ওয়ালা হাত বাড়িয়ে বন্দুকটা নেয়। এবার সঞ্জয়ের মুখে ধীরে ধীরে হাসি ফোটে। সেই হাসি দেখে মণিকার সম্বিত ফিরে আসে। সঞ্জয় ইশারায় বোঝায় বেলুনটার দিকে তাকাতে। মনিকা দুচোখ মুছে। সঞ্জয় আবার মাথা ধীরে ধীরে ওপর নীচ করে ইশারায় বোঝায় ভয় নেই। ধীরে ধীরে মনিকা বেলুনটার দিকে তাকায়। দেখে সেখানে পুরোটা সাদা। একটু আগের ফোলা বেলুনটা আর নেই। কেবল রাবারটা ঝুলছে। বেলুনটা ফেটে গেছে।
শেষ
(শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর ‘হাওয়া বন্দুক’ অবলম্বনে)