ফাহিম আলম। নামটা কি একটু চেনা চেনা লাগছে? হয়তো লাগছে অনেকের কাছে। যারা প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্যে হলেও খবরের কাগজ হাতে নেন তাদের চোখে হয়তো পড়েছে সম্প্রতি এই নামটা। অন্য অনেকের মতো আমিও কিছুদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম এই এগারো বছর বয়সের বিস্ময় বালকটির কথা। সত্যি বলতে কি এরপর থেকেই আমার মাথায় একটা লেখার প্লট ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু লেখার জন্য ঠিক সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আজ বসলাম, মনে অনেক কথার মেঘ জমে আছে গুমোট হয়ে, জানিনা কতটুকু কি গুছিয়ে লিখতে পারব।
ভাবনাটা যেহেতু ফাহিমকে জানার পরই এসেছে মাথায় তাই তাকে দিয়েই শুরু করা। লেখাটা হয়তোবা কিছু দীর্ঘ হয়ে যেতে পারে, কারো যদি ধৈর্যচ্যুতির কারন হই তবে ক্ষমা করে দিবেন।
ফাহিম একটা এগারো বছরের বালক। সে বাংলাদেশের সন্তান। অন্তত এতদিন সে আমাদেরই সম্পদ ছিল, কিন্তু আমাদেরই অবহেলা এবং খাঁটি হীরা চিনতে না পাড়ার বদৌলতে তাকে আমরা আজ হারিয়ে ফেলেছি বলা যায়। এই ছেলেটি একজন দাবাড়ু। গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল ফ্রান্সে আয়োজিত জাতীয় জুনিয়র দাবায় অংশ নিয়েছিল আমাদের খুদে ফাহিম। ৯ রাউন্ডের ৭ টি জিতে আর বাকি দুইটি ড্র করে সে হয় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন, সমগ্র ফ্রান্সে! তার এই জয় আলোড়ন তোলে ফ্রান্সে, গোটা ইউরোপে এমনকি পুরো দাবা বিশ্বে।
কারন?
কারন এই জয় কেবল নিছক একটি শিরোপা জয় নয়, এর অন্তরালে পড়ে আছে ছোট্ট এই বালকটির নির্মম এক জীবন যুদ্ধের গল্প। নির্মম শব্দটি কি ঠিক হল? হ্যাঁ এটিই ঠিক আছে। কারন যে বয়সে তার শান্ত সুন্দর ঝামেলা মুক্ত একটি কৈশোর পাবার কথা, টেনিস বলে স্কচ টেপ পেঁচিয়ে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলার কথা, মায়ের হাতে স্কুল ব্যাগ দিয়ে হাতে একটা কোন আইসক্রিম খেতে খেতে হাসিমুখে বাড়ি ফেরার কথা সেই সময় সে পাড় করেছে উদ্বিগ্ন উদ্বাস্তুর মতো। তাকে তাড়া করে ফিরেছে রাত কাটানোর জন্যে একটা আবাস না পাবার শঙ্কা, পেটপূজোর জন্যে খাদ্য না জোটার আতঙ্ক।
অথচ এই বালকটি আর দশটা বালকের চেয়ে একটু বেশিই কিছু নিয়ে এসেছিল পৃথিবীতে। স্কুলে প্রথম স্থানটা বরাবরই ছিল তার জন্যে, ভদ্র, বিনয়ী এই ছেলেটির কাছাকাছি যেই আসতো সেই মুগ্ধ হয়ে যেত এক নিমেষেই। আর যে বয়সে আমেরিকার 'জশ উইটস্কিন' দাবা জগতের কিংবদন্তি গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে সারা দাবা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল সে বয়সি আরেকটি বালক ফাহিম ঠিক তেমনি দাবা প্রতিভা নিয়ে কাটিয়েছে পথশিশুর জীবন! তাও নিজের জন্মভূমিতে নয় পরবাসে।
ফাহিমের বাবা ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের চাকরিজীবী। নিজেও টুকটাক দাবা খেলতেন। ছেলের মাঝে অমিত প্রতিভা প্রথম তার চোখেই ধরা পড়েছিল। সেই থেকে তিনি স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ছেলেকে নিয়ে। একদিন তার ছেলে বিশ্ব দাবার জগতে মাথা উঁচু করে বিচরন করবে। তাই তিনি ছেলেকে নিয়ে যাওয়া শুরু করলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে। মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে। কিন্তু বিধিভাম! এখানে প্রতিভার মূল্য কোথায়? পাহাড়ের পাদদেশে মূল্যহীন নুড়ি পাথরের মাঝে পড়ে থাকা হীরকখণ্ড চেনার মতো সেই জহুরিই বা কোথায়? একটা মূল্যবান চারাগাছকে যত্ন দিয়ে লালন পালন করে তাকে অমূল্য মহীরুহতে রুপান্তর করার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাই বা কোথায়? তাই ফাহিমের নিম্নবিত্ত বাবার আশার গুঁড়ে এক ট্রাক বালি পড়তে খুব বেশি সময় লাগেনি। কিন্তু তবু তিনি হাল ছাড়েননি। হতাশার ধ্বংসস্তূপে তিনি নতুন করে স্বপ্ন বুনেছেন। ছেলের সাফল্যের জন্যে তিনি সাহসী পা বাড়ালেন অজানা অচেনা বিদেশভূমে। সাথে তার ছোট্ট সন্তান আর তার সুবিশাল স্বপ্ন।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০০৮ সালে ফ্রান্সে প্রবেশ করে ফাহিম ও তার বাবা। ফ্রান্স সরকারের কাছে করা হয় নাগরিকত্বের আবেদন। পৃথিবীতে বড় কোন সাফল্যই হাজার বাঁধা বিপত্তি ছাড়া আসেনি - একথাকে আবারো প্রমাণ করে ফাহিমের বাবা নূরে আলম প্রত্যাখ্যাত হলেন ২০১০ সালে। সেই থেকে ফাহিম আলম ও তার বাবা হয়ে পড়েন অবৈধ অভিবাসী। আর অবৈধ হওয়া মানেই পুলিশের রক্তচক্ষু, যে কোন মুহূর্তে ফিরতি বিমানে চেপে বুকের মধ্যে স্বপ্নের রক্তক্ষরণ নিয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষা। একসময় তাদের দুজনের দেশ ত্যাগের সমন এলো। তাহলে কি হেরে যাবেন ফাহিমের বাবা নূরে আলম? যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন- ছেলে তার একদিন চমকে দেবে দাবা বিশ্বকে সেটি কি মিথ্যে হয়ে যাবে?
প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বিশ্বাসের দু পাড় ভাঙতে থাকা বাস্তবতায় ছেলেই বাবাকে জোগালো জয়ের সাহস। আর সেটিই হল এই লেখার শুরুতে লেখা জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নের শিরোপা জয়। ফাহিমের এই জয়ের পর ফ্রান্সের অভিবাসন আইন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ ফরাসিরাই। অভিবাসন আইনের কঠোর জালে যেন এই খুদে বালকটির অমিত সম্ভাবনা আটকে না পড়ে তার জন্যে এই ফরাসীরাই মুখর হয়ে উঠলেন। ঘটনা গড়াতে গড়াতে যেয়ে উঠল ফরাসী প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। তাঁকে আশ্বাস দিতে হল যে ফাহিমের বিষয়টা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। তার এই আশ্বাসেই শান্ত হল প্রচার মাধ্যম এবং সেখানকার মানুষ। আর হবেই না বা কেন? এতো আর আমাদের সাফল্যের কিংবদন্তি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টার আশ্বাস নয়! ফলাফল যা হবার তাই হল। ফাহিমের বাবাকে ফ্রান্স দিল বৈধ ওয়ার্ক পারমিট। দেয়া হল ফাহিমকে ফ্রান্স জুনিয়র জাতীয় দলে নেওয়ার ঘোষণা। আর এভাবেই এই বাংলা মায়ের এক সম্পদকে নিজের সম্পত্তি করে নেয় অন্য একটি দেশ। আর সেই খবর যখন এই দেশে বসে আমরা শুনি তখন কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকেনা। এই খবর শুনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দাবা বিচারক হারুনুর রশিদ যখন বলেন- "ওর বাবার সঙ্গে ওকে ফেডারেশনে খেলতে দেখেছি। তবে ও খুব শান্ত ছিল। ওর একটা বিষয়ই একদিন মন কেড়েছিল। দেখলাম, ও দাবার ভালো চালগুলো মনে রাখতে পারে।" -- তখন আমার ইচ্ছে করে এইসব মানুষগুলোর মুখের উপর একদলা থুথু ছিটিয়ে দিয়ে আসতে। আরে এখন আসছিস জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য করতে তো তখন কোথায় ছিলি যখন এই ছেলেটি একটু সুযোগ আর পরিচর্যার জন্যে তোদের আশ পাশ দিয়ে ঘুরঘুর করতো?
ফাহিম প্রসংগ যদিও অনেকটা বড় করে লিখে ফেললাম কিন্তু আমার এই লেখার মূল কুশিলব কেবল ফাহিম আলম আর তার বাবা নূরে আলম নন। এরকমই আরও অনেক অগণিত বাংলাদেশের সন্তানেরা। যেমন- শুভ রায়।
আপনাদের অনেকেরই নিশ্চয় ধারণা আছে কিডনি আমাদের শরীরের কত গুরুত্বপূর্ণ একটি বস্তু? এটাও অনেকের জানা আছে যে শরীরের দুটো কিডনি একটা বিশেষ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে সেগুলোকে পালটানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। এমন পরিস্থিতে একজন রোগী ও তার পরিবারের যে কি বীভৎস পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে যেতে হয় আমরা বাইরের পৃথিবী কল্পনাও করতে পারবোনা। কেবল টাকা থাকলেই তো হবেনা-- লাগবে একজন কিডনি দাতা। আবার এই দাতা যে সেই হলেও চলবে না। কারন তার সাথে মিলতে হবে রোগীর রক্তের গ্রুপ, অনুকূলে থাকতে হবে Host-Graft Reaction পরিস্থিতি সহ আরও অনেক বিষয়।
এখন একবার ভাবুনতো -- এই প্রচণ্ড অসহায় অবস্থায় পার্শ্ববর্তী দোকানেই কেউ যদি তার অসুস্থ মা বা সন্তানের জন্য পেয়ে যায় কিডনি তবে কেমন হতো? কৃত্রিম কিডনি- যা কিনা আর দশটা চিকিৎসা সরঞ্জামের মতই কিনতে পাওয়া যাবে! হ্যাঁ, সেদিন হয়তো খুব বেশি আর দূরে নয়। আর এর নেপথ্য কারন আমাদের বাংলাদেশের এক সন্তান। শুভ রায় তারই নাম। তিনি গবেষণা করছেন কৃত্রিম কিডনি তৈরি নিয়ে, আমেরিকার University of California, San Francisco (UCSF ) তে। মানব শরীরে স্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বানরের শরীরে একটি কৃত্রিম কিডনি প্রতিস্থাপন পরীক্ষায় তিনি সফলও হয়েছেন। আপনাদের কি অবাক লাগছে শুনতে এসব? তাহলে আরও শুনুন-
পুরো নিউ ইয়র্ক শহরের Automated Traffic Control System এর আবিষ্কারক বুয়েট থেকে পাশ করা একজন বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার। তার নাম যদি আমার ভুল না হয়ে থাকে তবে- আনোয়ারুল হক বা এরকমই কিছু একটা। এই লোকের আবিষ্কৃত সফটওয়্যারেই চলে নিউ ইয়র্কের রাস্তা ঘাটের সব যানবাহন। আমরা আমাদের ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের দিকে যখন তাকাই তখন আমাদের মনটা বিষাদে ছেয়ে ওঠে। প্রতিদিনের যানজট আর অন্যান্য বিড়ম্বনায় আমাদের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়। কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ অপচয় হয় সিগন্যাল বাতির পেছনে অথচ আমরা চলি অর্ধশিক্ষিত ট্র্যাফিক পুলিশের হাতের ইশারায়! আর সেখানে উন্নত দেশের অতি উন্নত এক শহর কিনা চলছে আমাদেরই কোন ভাইয়ের মেধাপ্রসূত উদ্ভাবনে!
এরকম উদাহরণ খুঁজতে গেলে আরও অসংখ্য পাওয়া যাবে যেখানে এই দেশেরই কোন সন্তান অন্যের মাটিতে যেয়ে সোনা ফলিয়ে চলেছে। অথচ যে সোনার উপর সবচেয়ে বড় অধিকার হতে পারতো আমার আপনার এই দেশ মাতৃকার।
কেউ কেউ হয়তো এ পর্যায়ে এসে বলবেন এই লোক গুলো স্বার্থপর, দেশের প্রতি এদের কোন দরদ নেই। আমি জানি তা কেবল আমাদের অন্ধ আবেগের বৃথা বহিঃপ্রকাশ। বাস্তবতা পুরো ভিন্ন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে - পড়াশোনা শেষ করে এরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে একটা যোগ্য চাকরির জন্যে, একটা কোনরকম কাজের স্থল যেখানে সে তার নিজের মেধা আর স্বকীয়তা কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু একটা উপহার দিতে পারবে দেশকে, আর খেয়ে পড়ে থাকবে নিজের একান্ত আপন মানুষজনের সান্নিধ্যে। হয়ত চেষ্টা করেছে নিজেই একটা ফার্ম দাড় করানোর জন্য, কিন্তু কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসেনি একটু সাহায্যের হাত, ব্যাংক থেকে মেলেনি লোন। পনের হাজার টাকার একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে সে হয়তো জানতে পেরেছে পনের লক্ষ টাকা ঘুষ দিলেই কেবল সে চাকরিটা পেতে পারে, নতুবা নয়! কেউ কেউ একটা আরাধ্য চাকরি যদি জোগাড় করেও ফেলে তারপর সে হয়তো দেখেছে নতুন এক চিত্রনাট্য। তার চারপাশে তেলবাজি, লবিং আর ঘুষের ছড়াছড়িতে সে হাঁপিয়ে ওঠে, পালিয়ে বাঁচতে চায় একসময়। এইমাত্র যে কথাগুলো আমি বললাম তা কেবল সে-ই বুঝবে যাকে এসবের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছে কোন না কোন সময়। আমি নিজেও তেমন কিছু লোকের ভিড়ে অতি নগণ্য একজন।
আর এভাবেই দিনে দিনে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের কিছু মেধাবী মুখ। যারা আমরা আমাদের সোনার বাংলাদেশের নতুন সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখি, যারা মনে করি বর্তমান এই ধ্বংসস্তূপকে পেছনে ফেলে আমরা সেখানে নতুন দিনের সাফল্যের কাব্যমালা গাঁথব তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এরাই হতে পারতো একেকজন যোগ্যতম যোদ্ধা। কিন্তু তাদেরই দুর্ভাগ্য নয়তো দুর্ভাগ্য এই অভাবি দেশমাতার - আমরা তাদের হারিয়েই চলেছি প্রতিক্ষণে। আমি বিশ্বাস করি যারা এভাবে হাজার মাইল দূরে পড়ে আছে মাতৃভূমি ছেড়ে তাদেরও কষ্ট হয়। ভরা বর্ষায় টিনের চালের রিমঝিম বাজনা কিংবা ব্যাঙের অবিরাম ডাক, শীতের ভোরে মায়ের হাতের ধোঁয়া ওঠা খেজুর গুঁড়ের ভাপা পিঠা অথবা বৃষ্টিস্নাত ঢাকা নগরীর থোকা থোকা কদমের জন্যে তাদেরও মন কাঁদে। যখন শরীরটাতে কোন অসুখ এসে ভর করে, সামান্য জ্বরও যখন এসে কাবু করে ফেলে তখন তাদেরও ইচ্ছে করে মায়ের পরম নিশ্চিন্ত কোলে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়তে। একদিকে মা (মাতৃভূমি) পড়ে থাকে অনাদরে বৃদ্ধাশ্রমের অন্ধঘরের মতো, আরেকদিকে সন্তানেরা প্রতিদিন ছুটে চলে কাজের নেশায়, পরদেশের উন্নতির জন্যে।
আমরা যারা অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করি তাদের কাছে টাকা নিঃসন্দেহে একটি বড় ব্যাপার কিন্তু দিনশেষে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাতে গেলে দেখা যাবে টাকা বা অর্থনৈতিক সচ্ছলতাই সবকিছু নয়। শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা চিরচেনা আঙ্গিনা, মায়ের আঁচলের হলুদে গন্ধ, বাবার শাসন, বন্ধু-স্বজন সবাইকে ফেলে যোজন যোজন দূরে পড়ে থাকতে কারোই নিশ্চয় খুব শান্তি মেলে না। তাই আজ যখন এইসব কিছু বঙ্গসন্তান বিদেশ বিভূঁইয়ে পড়ে থেকে খুব বড় কোন গৌরবগাঁথা রচনা করে ফেলে আর সে খবর আমাদের পত্রিকা গুলো এভাবে ছাপায়- "বাংলার সোনার ছেলে, বাংলার গর্ব...... " তখন অন্তত আমার কোন গর্ব হয়না বরং আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাই তাকে নিজেরই দেশের ভাই বলে দাবি করতে, খুব ছোট হয়ে যাই নিজের কাছে। যাদের প্রাপ্য সম্মান বা সুযোগ একদিন দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম আজ তাদের সাফল্যে নিজের নাম, এই দেশের নাম ট্যাগ করে দিতে খুব অপমান বোধ হয়।