somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহামিয়ান কথকতা - ১

২৫ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখতাম বোম্বেটেদের মত জাহাজে করে ঘুরে বেড়াব দক্ষিন সাগরের প্রবাল দ্বীপগুলোতে। বাহামা, হাইতি, তাহিতি, ভানুয়াতু, বারমুডা... কত যে নাম! এক একটা দ্বীপ যেন স্বর্গের এক একটা টুকরো। 'বোহেমিয়ান' কথাটা মনে হয় এখান থেকেই এসেছে।

জাহাজী হবার সেই স্বপ্ন ছেড়ে চলে এসেছি বহুদূর। তবে এবারে সেই স্বর্গের টুকরো'র কাছাকাছি পৌছে ছুঁয়ে এলাম তাকে।

বাহামা ..... একটা দ্বীপ নয়। প্রায় ৭০০ দ্বীপের পূঞ্জে মাত্র ৩০ টিতে বসতি আছে। এক সময় কেবল আরাওয়াক ইন্ডিয়ানদের বাস ছিল এখানে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস তার উত্তর আমেরিকা অভিযানে এখানেই প্রথম মাটির দেখা পান।

এরপর ১৭০০ শতাব্দীতে বাহামা হয়ে ওঠে ব্রিটিশদের আস্তানা। মূলত জলদস্যুদের শায়েস্তা করতেই এখানে ব্রিটিশ কলোনির সূত্রপাত হয়।

গোটা ক্যারিবিয়ান তখন পাইরেটদের স্বর্গরাজ্য। ক্যাপ্টেন কিড, ডেভি জোনস, কাটলার বেকেট, সাও ফেং... এমন কি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন ক্যারিবিয়ানে সুযোগ বুঝে ডাকাতি করতো (এই তথ্যে আমি টাশকিত!!!)। এদেরকে তাড়াবার নিমিত্তে বাহামার রাজধানী নাসাউ তে ফোর্ট শার্লট আর ফোর্ট ফিনক্যাসল নামে দুটি দূর্গ গড়ে তোলে ব্রিটিশ সরকার।

পরবর্তীতে আরাওয়াকদের উত্তরপুরুষ ও আফ্রিকা হতে কৃতদাস হিসেবে ধরে আনা (অবশ্যই সভ্য! ব্রিটিশদের দ্বরা) মানুষদের প্রজন্মরাই বাহামার মূল বাসিন্দা হয়ে দাড়িয়েছে।

আগেই বলেছি নাসাউ হল বাহামার রাজধানী। একে নিউ প্রভিডেন্স ও বলা হয়। ২১ বাই ৭ মাইলের এই দ্বীপটা প্রশান্তির এক বিমূর্ত মূর্তি যেন। এর লাগোয়া আরেকটি ছোট্ট দ্বীপের নাম হল 'প্যারাডাইজ আইল্যান্ড'। নামেই যার পরিচয়। দুটি দ্বীপের মাঝে এখন একটি সেতু আছে। সেই সাথে ফেরী সার্ভিস তো আছেই।

চলুন ঘুরে আসি একটুখানি......



প্লেন থেকেই দেখা যাচ্ছিল অপার নীলের ক্যানভাস। আকাশ আর সাগর যেন মিশে একাকার হয়ে গেছে। আমার পেছনে দুই পিচ্চি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে কেবল ওহ গড! ওহ গড বলে চিৎকার করছিল। একবার ভাবলাম আমি 'আল্লাহ রে.....' বলে একটা চিক্কুর দিই। কিন্তু ভদ্রলোক হবার বড্ড জ্বালা :(


ক্রমেই স্পষ্ট হল স্থলভাগ। উপড় থেকে চোখে পড়ছিল সবুজ ভূমির মাঝে আগুন রঙা লাল। আরে! এ যে আমাদের কৃষ্ণচুড়া!!! কিন্তু পরে আর ছবি তূলতে পারিনি।


নাসাউ কেবল বীচ এর একাংশ।

বাহামা'র বীচগুলো বিখ্যাত এর নীল রঙের জন্য। নীলের এমন সৌন্দর্য অন্য কোথাও চোখে পড়েনা। এর কারণ হল, পৃথিবী'র সবচে' বড় প্রবাল প্রাচীর বাহামায়। প্রবাল প্রাচীর বা দ্বীপের পানি এমনিতেই অনেক নীল হয়। আর নাসা'র সূত্র মতে বাহামার পানি সবচেয়ে পরিস্কার। বাহামার সমুদ্রে খালি চোখেই পানির ২০০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়।



নাসাউ পোর্ট অথরিটি আর কাস্টম বিল্ডিং। টুরিস্টদের জন্য দ্রস্টব্য স্থান।



সেন্টাল ক্যাথেড্রাল। বাহামিয়ানদের বেশীরভাগই খ্রিস্টান। তবে ধর্মের চাইতে তাদের কাছে নিজস্ব সংস্কৃতিই বেশী প্রাধান্য পায়।


নাসাউ ক্রিকেট ক্লাব। ইংরেজ শাসনামলে এই ক্লাব গড়ে উঠে। এখনো এখানে সেই প্রাচীন ক্লাব কালচারের দর্শন মেলে।


ক্রিকেট গ্রাউন্ড। সবেধন নীলমনি এই একটা প্লেয়িং গ্রাউন্ডই চোখে পড়বে। এছাড়া ২টা গলফ কোর্স ও আছে। কিন্তু খেলতে পারিনা, তাই যাইনি ;)



নাসাউ ডাউন টাউন। এই যায়গাটিই নাসাউ এর প্রাণকেন্দ্র। শপিংমল, বানিজ্য কেন্দ্র, অফিস আদালত সব এখানেই অবস্থিত। নাসাউ ডক (এর আরেক নাম প্রিন্স উইলিয়াম রাফট) ও এখানেই। অন্য সব যায়গা থেকে এখানে বাস সার্ভিস আছে। বাসগুলোকে বলে 'জিটনি'। যেখানেই যান, ভাড়া সোয়া এক টাকা :)



নাসাউ পার্লামেন্ট হাউজ। আমাদের মত বিশাল না হলেও কাজে যে অনেক বিশাল তা বাহামার অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি দেখলেই টের পাওয়া যায়। ওহ! এখানে গালাগালির নিয়ম নেই :P

নাসাউতে ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। তবে তা বেশীর ভাগ টুরিস্টরাই ব্যবহার করে। বেশীর ভাগ বাহামিয়ানদের গাড়ি আর বোট আছে। আর সামান্য যে আম জনতা, তাদের জন্য জিটনি।



নাসাউ স্ট্র মার্কেট। বাহামিয়ান কুটির শিল্পের এই হাটে পাওয়া যায় হরেক রকম হস্তশিল্প। মুখোশ, মিনি বঙ্গো (বাহামিয়ান ড্রাম), কৃষ্ণচুড়ার পাতায় তৈরী অ্যালবাম, ঝিনুকের মালা... আরও কত কি!


এখানে ছবি তোলা আইনত দন্ডনীয়। তবুও সাহস করে তুলে ফেললাম কয়েকটি। :)


বাহামিয়ান মুখোশের সাথে ইনকা আর ইস্টার আইল্যান্ডের মুখোশগুলোর দারুন মিল আমাকে অবাক করেছিল।



নাসাউ লাইট হাউজ। পেছনে প্যারাডাইজ আইল্যান্ড এ অবস্থিত আটলান্টিস হোটেল।


বে সাইড। বা পাশে প্যারাডাইজ আইল্যান্ড।


এই রিসোর্ট টি একেবারে লেগুনের মাঝে। এখানে রাখা বোটগুলো নিয়ে সরাসরি সাগরে চলে যাওয়া যায়।


লেগুন ধরে এগিয়ে গেলেই নীল জলের হাতছানি। সাগরের মাঝে অনেকদুর চলে যাওয়া এই ওশান গেজিবো টা ছিল আমার নিত্য বিকেলের গন্ডী। এখানে বসে বুঁদ হয়ে যেতাম নীলের নেশায়।

চলবে........

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১০ সকাল ৮:২৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×