বিকালে আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে, "মামা, একটা সমস্যা/প্রবলেম হইছে, তাই তোকে ফোন দিলাম।"
আমি বললাম, "হুম.....সমস্যায় পড়লেই তো কেবল উকিল আর ডাক্তারের কথা মনে হয়! কি সমস্যা বল।"
সে বললো, "দোস্ত, আমার এক ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ড প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে। এখন কি করা যায়?"
শুনে আমার মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেল। ওকে কিছুক্ষণ সমানে ঝাড়ি দিলাম এবং তার ঐ বন্ধুকে আমার এই গরম কথাগুলো বলতে বললাম।
সে আমাকে বলে, "দোস্ত, আসলে সে আমার ঠিক ফ্রেন্ড না, কাছের এক ছোট ভাই। ছেলেটা বিপদে পড়েছে, এমনিতেই মহা দুশ্চিন্তায় আছে; তাই এখন কিছু বলতেও পারছি না। একটা ভুল করে ফেলেছে, এখন কি আর করা যাবে! তুই দোস্ত প্লিজ, রাগ করিস না, একটু হেল্প কর।"
অতঃপর আমি, কতদিন ধরে পিরিয়ড বন্ধ, কবে ফিজিক্যাল রিলেশান হইছে.....ইত্যাদি ডিটেইলস শুনে সে অনুযায়ী কিছু এডভাইজ দিয়ে ফোন রাখলাম।
কিন্তু আমার মন-মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে রইলো।
প্রেম-পিরিতি(এই টাইপের) জিনিসটা আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই অপছন্দ করি। যেখানে আজকালকার যুগের ভালোবাসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শরীর কেন্দ্রিক। এখানে মনের খোরাক এর চেয়ে দেহের ক্ষুধাই বেশী প্রাধান্য পায়।
এখনকার পোলাপানের গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলে দখিণা হাওয়ায় প্রেমিকার সাথে রিকশায় ঘোরার চেয়ে সন্ধ্যার পরে কোন অন্ধকার রাস্তায় হুড তুলে রিকশায় চিপকা-চিপকি করতেই বেশী মজা লাগে!
কোন এক বরষামুখর দিনে ভিজতে ভিজতে কদমফুল হাতে প্রিয়তমার সাথে দেখা করার চেয়ে তার ভেজা শরীর দেখতেই বেশী ভালো লাগে!
শরতের তুষার শুভ্র কাশবনের তীর ঘেঁসে নৌকায় চড়ে টুকরো টুকরো মেঘের ভেলার অবিরাম ভেসে যাওয়া দেখার চেয়ে সদরঘাট কিংবা আশুলিয়ায় ঘণ্টা হিসাবে ছইওয়ালা নৌকাই বিশেষ পছন্দ!
শীতের ঝরা পাতা মাড়িয়ে বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসে নরম ঘাসের উপর দিয়ে প্রেয়সীর হাত ধরে হেঁটে চলার চেয়ে বন্ধুর মেস কিংবা লিটন ভাই এর ফ্ল্যাটে সময় কাটানোই অধিক আনন্দের!
মেয়েরাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। দুই দিন পর পর বয়ফ্রেন্ড চেঞ্জ করা আর প্রত্যেকের সাথেই বিছানায় যাওয়া যেন এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার!
বাসা ফাঁকা, বাবা-মা কেউ নেই; এমতাবস্থায় ফোন দিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে আসতে বলা যেন খুব সাধারণ একটা বিষয়!
কর্পোরেট ভালোবাসার এ যুগে যেখানে আত্মিক ভালোবাসার চেয়ে শারীরিক চাহিদাই মুখ্য, সেখানে বন্ধুর এমন ফোন পেয়ে আমার আর কি-ই বা বলার আছে???