৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রফতানির বিষয়ে এরই মধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এই ব্যান্ডউইথ মূলত ভারতের সেভেন সিস্টার বলে খ্যাত রাজ্যগুলোয় ব্যবহৃত হবে। রফতানির সিদ্ধান্ত নিলেও এখন উভয় পক্ষের মধ্যে মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে। জুলাই মাসে রফতানির বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বর্তমানে প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইথ ৪ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি করছে বাংলাদেশ সাব-মেরিন ক্যাবল লিমিটেড (বিএসসিসিএল)।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু বকর সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ভারতের আগ্রহে ব্যান্ডউইথ রফতানির বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন মূল্য নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, তিন-চার মাসের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সিলেট প্রান্তে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া প্রান্ত দিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সংযোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই কর্মকর্তা মূল্য নির্ধারণের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যে ব্যান্ডউইথ রফতানি করা হবে তা ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও অরুণাচল রাজ্যে ব্যবহৃত হবে। জানা গেছে, দ্বিতীয় সাব-মেরিন ক্যাবল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সরকার বর্তমান ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের প্রায় অর্ধেক বিদেশি কোম্পানির কাছে বিক্রি বা লিজ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ অনুমতি দেয়া হয়। বর্তমানে দেশে ২০০ জিবিপিএসের ব্যান্ডউইথের বিপরীতে ব্যবহার হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ জিপিবিএস। বাকি ব্যান্ডউইথ অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে। এছাড়া ২০১৬ সাল নাগাদ দ্বিতীয় সাব-মেরিন ক্যাবল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১ হাজার ৪০০ ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় সাব-মেরিন ক্যাবল প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের জোগান দিতে এ ব্যান্ডউইথ রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ব্যান্ডউইথ বিক্রি বা লিজ দিয়ে বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা উপার্জন করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। এদিকে বিএসসিসিএলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাব-মেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও অর্থাভাবে তা করা যাচ্ছে না। এ কারণে ব্যান্ডউইথের অব্যবহৃত অংশ থেকে বিক্রির বা লিজের মাধ্যমে অর্থের জোগান দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। দ্বিতীয় সাব-মেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে ৬ কোটি ডলার, স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বিএসসিসিএল নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩৫ কোটি টাকা, আইডিবির ঋণ ৩২০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিএসসিসিএলের পাওনা ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা জোগান দেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। তিনি আরও জানান, আমরা আইডিবির কাছে যে ঋণ চেয়েছি, সেটা যদি কোনো কারণে না পায় বা যা চেয়েছি তার চেয়ে কম পাই, সে কারণে ব্যাকআপ হিসেবে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে অর্থের জোগান দেয়া হবে।
দ্বিতীয় সাব-মেরিন ক্যাবলে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যএশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৬টি দেশ যুক্ত হচ্ছে। দেশগুলো হচ্ছে_ বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ইতালি, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার।
প্রকল্পের আওতায় সাগরের নিচ দিয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশে ক্যাবলটি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার হয়ে কঙ্বাজার পর্যন্ত আসবে। সেখান থেকে বাড়তি ৩০০ কিলোমিটার ক্যাবলের মাধ্যমে এটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়া হবে। কুয়াকাটাতেই হবে এর ল্যান্ডিং স্টেশন। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সেখানে ১০ একর জমি কেনা হয়েছে।
সূত্র : সম্পাদনা অনলাইন নিউজ।