বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকাকে ঘিরে এনজিও এবং আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান লবি খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে সুদীর্ঘ কালব্যাপী নানামুখী চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। মুঘল আমলেই এদেশের প্রতি এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারীদের শ্যেন দৃষ্টি পতিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে মিশনারীরা খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও ধর্মান্তরের যে প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করে, পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে তার ক্রমবিকাশ সাফল্যের সাথে অব্যাহত থাকে। স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, হাসপাতাল স্থাপন, ঋণ প্রদান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, দারিদ্র্যবিমোচন, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি মুখরোচক কর্মসূচির আড়ালে রয়েছে এদেশে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করার নীলনকশার বাস্তবায়ন।
বিদেশী অর্থে পরিপুষ্ট বহু এনজিও পার্বত্যাঞ্চলসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয়। এদের বেশিরভাগই পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে পার্বত্যাঞ্চলে সেখানকার ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবারকে খ্রিস্টান করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ১৯৪টি গির্জা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা কম, তাদের প্রায় শতভাগকে খ্রিস্টান বানানো হয়েছে অনেক আগেই।
পাংখু উপজাতিকে পুরোপুরি খ্রিস্টান করা হয়েছে; বদলে গেছে তাদের ভাষা; এমনকি হরফও ইংরেজি। এনজিও’র নাম ধারণ করে খ্রিস্টানরা এই দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র, গির্জা ইত্যাদি গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশের উত্তর, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য গির্জা। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহের অরণ্যে বসবাসরত চাকমা, মারমা, মুরং, টিপরা, খাসিয়া, মণিপুরী, লুসাই, গারো প্রভৃতি উপজাতির মধ্যে খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের অনুপ্রবেশ জীবনধারায় এনেছে আমূল পরিবর্তন। ‘প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বাইবেল এবং প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি গির্জা’- এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে খ্রিস্টান মিশনারীরা লক্ষ্য পানে ছুটে চলেছে। ১৯৩৯ ঈসায়ী সনে বাংলাদেশে খ্রিস্টান ছিল ৫০ হাজার। ১৯৯২ ঈসায়ী সনে এ সংখ্যা দাঁড়িয় প্রায় ৫ লাখে। আশঙ্কা করা হচ্ছে- এভাবে ধর্মান্তকরণ করতে দিলে অচিরেই খ্রিস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে; যা পরবর্তীতে ভয়াবহ ফিতনা সৃষ্টির কারণ হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় কর্মরত এনজিও’র কার্যক্রম নজরদারিতে রাখার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একাধিকবার নির্দেশ দেয়। পাহাড়ের গহীন অরণ্যে সন্ত্রাসীরা যাতে কোনো প্রশিক্ষণ চালাতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্যও কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এনজিও’র দেশবিরোধী কাজের জন্য জবাবদিহিতা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো ক্ষতিকর তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। ইউরোপকেন্দ্রিক একটি এনজিও খুব বেশি অপতৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। পার্বত্য তিন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন এনজিও’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তৎপরতায় অর্থ যোগানের অভিযোগ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ভারতীয় ও বার্মিজ উপজাতিদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা, ধর্মান্তরিতকরণে সহযোগিতা এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্র গ্রুপের সাথে যোগাযোগের যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রয়োজন থাকলেও তা হচ্ছে না।
বলাবাহুল্য, সুদান থেকে যেমন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাধিক্যের দোহাই দিয়ে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করা হয়েছে, সেখানকার মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছে; তেমনি বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে আলাদা স্বাধীন খ্রিস্টান রাজ্যের কথা শোনা যাচ্ছে বহু আগ থেকেই। তবুও এখনো সতর্ক নয় সরকার। সক্রিয় নয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মূলত, তাদের অথর্বতা ও নিষ্ক্রিয়তার বিপরীতে দেশের স্বাধীনতাকে অক্ষত রাখতে হলে গোটা দেশবাসীর জেগে উঠার বিকল্প নেই।