রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশে মুসলিম মহিলারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করতে পারছেন না। সংবিধানে বর্ণিত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। মহিলারা পবিত্র দ্বীন ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ছবি না তোলায়, তারা পৈত্রিক সম্পত্তির ওয়ারিশ হতে পারছেন না। স্বীমার একাউন্টে নমনী হতে পারছে না। এতে করে তাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের নির্ভেজাল আনুগত্য নিয়ে থাকে। তার পরিবর্তে প্রতিটি নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা সম্পৃক্ত থাকে। নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য থাকে। এটা নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৩নং অনুচ্ছেদে মালিকানার নীতি প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে
(গ) “ব্যক্তিগত মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তির মালিকানা।”
অপরদিকে সংবিধানের ‘সম্পত্তির অধিকার’ ৪২(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে,
“আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর বা অন্যভাবে বিলি-ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোনো সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রয়ত্ত বা দখল করা যাইবে না।”
বর্তমানে পর্দানশীন মহিলারা সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার এ মূলনীতির এ সুবিধাগুলি পাচ্ছেন না। সংবিধানের ১৩নং অনুচ্ছেদ এবং ৪২(১)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিকানা ভোগ করতে পারছেন না।
অপরদিকে সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ভাগে ১০ নং অনুচ্ছেদে আরো বর্ণিত হয়েছে, “জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।”
সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন।”
সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে, “রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষভেদে সমান অধিকার লাভ করিবেন।”
অথচ এসব বিধানের সুবিধাও পর্দানশীন মহিলারা পাচ্ছেন না। তারা পৈত্রিক অথবা স্বামীর তরফ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ দিয়ে মসজিদ, মাদরাসা, বৃদ্ধনিবাস ইত্যাদি গড়ে তুলতে পারছেন না। তার একমাত্র কারণ তারা ধর্ম পালন করেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করেন। পর্দা করেন। ছবি তুলেন না। সুতরাং তাদের নামে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি হচ্ছেনা। তাদের নামে সম্পদের নামজারী হচ্ছে না। কিন্তু এটা কী রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে, সংবিধানের দৃষ্টিতে অপরাধ? অথবা অগ্রহণযোগ্য?
অথচ সংবিধানের ৪১(১) ধারায় বর্ণিত রয়েছে, “প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে।”
এছাড়া সংবিধানের ৩৯(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে, “চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।”
এ বিধান অনুযায়ী ও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুযায়ী চিন্তা করার অধিকার এবং ছবি না তোলার ও বেপর্দা না হওয়ার বিবেক ধারণ করার অধিকার দেশের সব নারীদের রয়েছে।
আবারো বলতে হয়, সংবিধানের ৪১(১) ও ৩৯(১) বিধান অনুযায়ী নারীদের পূর্ণ পর্দা পালন করার অধিকার, ছবি না তোলার অধিকার রয়েছে। সে অধিকার যদি ক্ষুন্ন করা হয় তাহলে বলতে হবে সংবিধানের ৩৯(১) ও ৪১(১) ধারা যা মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
অথচ সংবিধানের ২৮(১) ধারায় উল্লেখ আছে,
“কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।”
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এ দেশের ধর্মপ্রাণ নারীরা সংবিধানের ৪১(১) ধারার সুযোগ নিলে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ২৮(১), ২৮(২), ৪২(১), ৩৯ নং ধারা এবং সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ভাগে বর্ণিত সংবিধানের ১১, ১৯(১) ইত্যাদি ধারার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এখন কথা হচ্ছে রাষ্ট্র নিজেই যদি নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে অথবা সংবিধানে বর্ণিত সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে কী রাষ্ট্র নাগরিকের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করছে এ কথা বলা যায়? পাশাপাশি নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংবিধানের সব বিধান পালন করবে এটা আশা করা যায়? সংবিধান নিজেই যদি একটা সংবিধান বিরোধী বই হয় তাহলে নাগরিকের ভোগান্তির শেষ কোথায়?
বলার অপেক্ষা রাখেনা, ব্যক্তির জন্যই রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি নয়। আর দ্বীনদার বা ধর্মপ্রাণ ব্যক্তির জন্য দ্বীন বা ধর্মটাই সবচেয়ে বড়। তার পাশাপাশি আরো উল্লেখ্য যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “রাষ্ট্রধর্ম হচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম।” কাজেই, সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম অনুযায়ী ছবি না তুলে, পর্দা পালন করে সংবিধানে বর্ণিত সব সুবিধা তথা ব্যক্তি মালিকানা ও জাতীয় জীবনে অংশ গ্রহণ করা ইত্যাদি অধিকার রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ সরকারকেই করতে হবে। কারণ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কিতাব পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে প্রবেশ করো।”