আপার চোখে জল
কাফি কামাল
আমাদের আপা। সকলের বড়। বড়পা। একদা যিনি। ছিলেন দারুন স্নেহশীলা। অপরের দুঃখে দুখি। একদা তিনি। সবচেয়ে ত্যাগী। দূর দেশে কান্নাকাতর। গাইতেন- ‘ভাইরে কইও নাইয়র নিতে আইয়া’। ফিরেছেন বহুদিন পর। অপরূপ পিতৃলয়ে। বহু বিবাদের শেষে। পেয়েও ফসকে গেলে চাবি। ভাবী হলো সংসার প্রধান। অবশেষে যুদ্ধ জয়ের মতো। শিরোপা তিনিই পেলেন। ততদিনে আমাদের মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। আমাদের আপা, হাসিখুশি। লোকে বলে। আবেগী বাঙালী মেয়ে। আপার ড্রয়িংরুমে। সুনামের সমূহ মেডেল। সাংসরিক কূটচালে ফের কিছুদিন। আপা, অপ্রধান। ভাবীর আঁচল জুড়ে ভাড়ারের চাবি। যুগের হিসাবে তাও বেশিদিন নয়। আপার হাতেই এলো ভাড়ারের চাবি। ক্ষমতার লাঠি। প্রতিবেশী বাড়ি থেকে সুনামের রেশ। এবারের আপা, অন্যরকম। হিংস্র মাংসাশী। যেন লোকালয়ে ঢুকে পড়া সুন্দরবনের বাঘিনী। হুংকারে আতঙ্ক ছড়ানো। ধারালো নখরে তার বিক্ষত গোছানো সংসার। পূর্ণিমার প্রতি যার পক্ষপাত ছিল। অমাবস্যা প্রিয় হল শেষে। বহতা নদীর দেশে। সবুজ মাঠের দেশে। আকালের দিন হলো শুরু।পড়েছে কি ঠিক মতো? সকলের পেটে, দানাপানি। ভাইটি যে কর্মহীন কালো। প্রতিবেশী পুরুষের চোখ। তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বোনটিকে। সেদিকে আপার খেয়াল কি আছে? এমনই প্রশ্নসব ঘুরে-ফিরে পাক খায়। সংসারে। আপা কিন্তু একরোখা, ব্যস্ত দারুন। এতকিছু লক্ষ্য করে, সে সময় কই! ভাইবোন কেঁদেছিল যারা। যারা নাক ফুলিয়েছিল। ঘাড়গুলো বাঁকা করেছিল। মড়কে দিয়েছেন আপা। কেটেছেন দীঘল জবান। কাঁটার দোহাই দিয়ে। কাটা হলো গোলাপের ঝাড়। তবুও আজব। চারদিকে হল্লা করে লোকে। ভেসে আসে সকরুন সুর। দৌদণ্ড প্রতাপের দিনে। আকস্মাৎ লক্ষ্য করি, একি! টলোমলো, আপার দু’চোখ।
প্রতিবেদন
কাফি কামাল
দূর গ্রাম থেকে এসেছি
মহানগরীর চতুর অলিন্দে
চানক্যের কূটকাঁটা, বাস্তবের জটিল ধাঁধায়।
একটি অমর পঙক্তির সন্ধানে
নিরন্তর মনোভ্রামনিক আমি
আমার সমূহ ঘোরÑ কবিতায় ঘূর্ণয়মান।
মনে প্রাণে নাগরিক নই, তবু
আমার পঙক্তিগুলো হারিয়ে গেছে প্রতিবেদনের শরীরে
কুশলী বাক্যের ভাঁজভোজে
কিন্তু কবিতা হয়ে উঠেনি আমার প্রতিবেদন।
ফুরোবে না প্রাণপঙক্তি পাবার বাসনা
হা-হুতাশে ফুরোবে জীবন
জানি, অমরত্ব পাবে না আমার কোন প্রতিবেদনই
কিন্তু বাস্তবের উত্তাল জলে, সেটাই তো আপাতত ভরসার ভেলা।