আজ কর্মস্থল ঢাকা ফেরার পালা। তাই গতরাতেই রাত জেগে প্রয়োজনীয় প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেছি। সকালে নাস্তার পর থেকেই শুরু হলো মেইলে ছবি পাঠানোর কাজ। নেটের স্পিড আমাকে ক্রমাগত অসহিঞ্চু করে তুলছে। অনেক অপেক্ষার পর দুইদফায় অর্ধশতাধিক ছবি আপলোড করলাম মেইলে। এবার রওনা দেয়ার পালা। ইতিমধ্যে সহকর্মী ইব্রাহীম হোটেলের রুমে এসেছে। দুপুরে গিয়ে সৌদিয়া পরিবহনের টিকেট কাটলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই ইব্রাহীমকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ধীরে ধীরে চোখের পর্দা থেকে অপসৃত হয়ে যাচ্ছে খাগড়াছড়ি শহর, চেঙ্গির বাঁক, আলুটিলার সুড়ঙ্গ, রিসাং ঝর্ণা। একটার পর একটা উচু উচু পাহাড়ের উচুনিচু পাহাড়ী পথ ধরে আবারও ফিরছি ঢাকার যানজট আর কোলাহলময় জীবনে। কিন্তু বুকের ভেতর বাজছে আল্পনা চাকমার বিখ্যাত গান- নচাং জেবারে দাগাং চারি, ইদু আগং জনমন পুরি, এ জাগাগান রয়েদে মরমন্নান জুরি। (এ জায়গাটা ছেড়ে যাব না, এ জায়গাটা রয়েছে আমার মন জুড়ে)। চাইলেই তো আর থেকে যাওয়া যায় না। পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়। গাড়ি জালিয়াপাড়া এসেই ডানদিকে মোড় নিয়েছে। এখান থেকে বামদিকের রাস্তাটি চলে গেছে চট্টগ্রামের দিকে আর ডানদিকে রাজধানী। এ রাস্তাতেই রামগড়। যেখানে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর। তাও দুইশ বছর আগে। যা নানা পরিবর্তন পরিবর্ধন শেষে বিডিআর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখা এ প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির মত। পিলখানায় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর এ প্রতিষ্ঠানের আজ প্রশ্নবিদ্ধ। পরিবর্তন হয়েছে যার নাম, পোষাকসহ অনেককিছুই। যাদের হাতে এখন আর শত্রুভেদ্য অস্ত্র নেই। লাঠিদিয়েই করছেন দায়িত্বপালন। সে দৃশ্যটি ভালমতই দেখলাম রামগড় স্টেশনে। যেখানে গাড়িটি বিশ্রাম দেয়। রাস্তার দণি পাশেই সেই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের জন্মস্থান। আরেকটি কথা বলতেই চাই- এ পথে জালিয়াপাড়া থেকে রওনা হওয়ার পর থেকেই গাড়ি অতিক্রম করছে একের পর পাহাড়ি বিপজ্জনক বাঁক। কোথাও কোথাও গা শিউরে উঠার মত। কোন আনাড়ি চালকের এ পথ এড়িয়ে চলায় উত্তম। রামগড় ছেড়ে কিছু যেতেই চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির একটি অংশ। যেখানে রাস্তার পাশ জুড়েই একের পর এক চাবাগান। তবে এখানকার চা বাগান সিলেটের মত দৃশ্যনন্দন মনে হলো না। নবম জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকেই জিতেছেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আলোচিত রাজনীতিবিদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মনে মনে হেসে ওঠলাম এ ভেবে যে- চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি যেতে হলে তার নির্বাচনী এলাকা মাড়িয়েই যেতে হবে। যে জন্যই তিনি নিজেকে ওইসব এলাকার হযরত ভাবেন নিজেকে। বলেনও। যা হোক কুমিল্লায় পৌছেই বিকল হয়ে পড়ল গাড়ি। কি এক বিড়ম্বনা! দীর্ঘ দুইঘন্টা অপেক্ষা শেষে বিকল্প গাড়িতে করে ফিরলাম ঢাকায়। তখন গভীর রাত।
রোডম্যাপ: চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক
চট্টগ্রাম (২ নম্বর গেট, ষোলশহর)- হাটহাজারী- বিবিরহাট- পাইনদং- মানিকছড়ি- গাড়িটানা আর্মি ক্যাম্প- বড়ইতলী- তিনটহরি- মানিকছড়ি- গচ্ছাবিল আর্মি ক্যাম্প- হাতিমুড়া- জালিয়া পাড়া(বামে ঢাকা রোড, বামে লক্ষ্মিছড়ি রোড)- গুইমারা আর্মি রিজিওন- গুইমারা বাজার- মাটিরাঙ্গা আর্মি জোন- মাটিরাঙা বাজার(বামে তবলছড়ি)- দূর্গাবাড়ি আনসার ক্যাম্প- আলুটিলা- শহরের ঢোকার মুখেই ত্রিমোহনা (ডানে রাঙামাটি ও মহালছড়ি রোড)- খাগড়াছড়ি বাসস্টেশন- চেঙ্গি স্কোয়ার (বামে পানছড়ি, সোজা সার্কিট হাউজ, ডানে মূল শহর হয়ে দীঘিনালা রোড)- শাপলাচত্ত্বর (ডানে শহর, বামে-সোজা দীঘিনালা রোড)- ডিসি অফিস- (বামে ক্যান্টনমেন্ট, সোজা দীঘিনালা রোড)- আর্মার যৌথখামার- জামতলী আনসার ক্যাম্প- দীঘিনালা (ডানে লংগদু রোড, সোজা সাজেক রোড)- মাইনীব্রীজ (বামে বাবুছড়া)- কবাখালী- দীঘিনালা আর্মিক্যাম্প- ১০ নম্বর পুলিশ ক্যাম্প (ডানে মারিশ্যা রোড)- বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প- বাঘাইহাট- মৈত্রী বনবিহার- কাসালং আর্মি জোন, কাসালং ব্রীজ, গঙ্গারামমুখ (ডানে বাঘাইছড়ি রোড)-উলুছড়া- টাইগার টিলা- নন্দরামপাড়া- চম্পাতলী- গইজ্যাছড়ি- মাসালং আর্মি ও পুলিশ ক্যাম্প- সাজেক রোড...।